বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

স্যার সব অপরাধের সঙ্গে আমি জড়িত -আদালতে সাহেদ

স্টাফ রিপোর্টার : রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে প্রতারণা ও আত্মসাতের চার মামলায় ফের ২৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। উত্তরা পশ্চিম ও উত্তরা পূর্ব থানার এই চার মামলায় ৪০ দিনের রিমান্ডের আবেদনের শুনানি করে আদালত প্রত্যেক মামলায় সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজকে পাঠানো হয়েছে ২১ দিনের রিমান্ডে। গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরি দু’জনের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এসময় সাহেদের আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করলেও বিচারক তা নাকচ করে দেন।
করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে র‌্যাপিড আ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সকাল ৯টার দিকে সাহেদকে আদালতে হাজির করে। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি মামলায় তাকে দশ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি মামলা উত্তরা পশ্চিম থানার। এর দুটিতে ইট, বালু সিমেন্ট সরবরাহের টাকা আত্মসাত এবং অন্যটিতে হোটেলের অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর উত্তরা পূর্ব থানার মামলাটি করা হয়েছে জাল টাকা রাখার অভিযোগে।
সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান ও শাহ আলম রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। কিন্তু তারা মাত্র একটি মামলায় ওকালতনামা জমা দিতে পেরেছিলেন। বিচারক আসামী সাহেদের কাছেই জানতে চান, তার কিছু বলার আছে কিনা। জবাবে বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাহেদ কাঠগড়ায় দাাঁড়িয়ে তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘স্যার আমি অপরাধ করেছি। ব্যবসা চালু হলে আস্তে আস্তে সবার টাকা ফেরত দিয়ে দেব।’ সাহেদ বলেন, ‘আমি ও মাসুদ দুজনই অপরাধী। আমার বিরুদ্ধে মামলার রিমান্ড শুনানি ঈদের পর হলে ভালো হয়। কয়দিন ধরে রিমান্ডে আছি। আমি অসুস্থ।’ রিমান্ডে গেলে আমি আর কুলাতে পারব না।’ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি সাজ্জাদুল হক শিহাব এবং সহকারী পিপি আজাদ রহমান। পরে আজাদ রহমান বলেন, যে মামলায় সাহেদকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়েছে, সেই মামলায় জামিন চেয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। শুনানি শেষে বিচারক তা নাকচ করে দেন। পাশাপাশি চার মামলায় সাহেদকে সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকেও এদিন করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের আবেদনের শুনানি করে মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী আসামী মাসুদকে তিন মামলায় সাত দিন করে আরও ২১ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এছাড়া অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের অন্য দুটি মামলায় মাসুদকে গ্রেপ্তার দেখানোর অবেদন মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূইয়া।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর গত ৭ ও ৮ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। র‌্যাবের ওই অভিযানের পর রিজেন্ট মালিক সাহেদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করে। অভিযানের পর ৭ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানায় সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করে র‌্যাব। শুরুতে মামলাটি থানা পুলিশের হাতে থাকলেও পরে তা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে। এরপর গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। সেদিনই তাকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন গোয়েন্দা পুলিশ সাহেদকে আদালতে হাজির করে ১০দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি পায়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে আবার এ মামলার দায়িত্ব নেয় র‌্যাব। রিমান্ডের ষষ্ঠ দিনে তাকে র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করে গোয়েন্দা পুলিশ। সেই রিমান্ড শেষে গতকাল রোববার তাকে নতুন করে ২৮ দিনের রিমান্ডে পাঠাল আদালত।
এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় বন্ধে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে দেশের সব বৈধ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালে ভুয়া করোনা পরীক্ষার শিকার ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ, তাদের কাছ থেকে টেস্টের নামে নেয়া টাকা ফেরত এবং ভুক্তভোগীদের অন্তর্র্বতীকালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ হাজার টাকা প্রদানের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি থানায় স্বাস্থ্য মনিটরিং কমিটিও করতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম এই রিট দাখিল করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর চলতি সপ্তাহে শুনানি হতে পারে। রিটে স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবং রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে ১৯ জুলাই এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম এ বিষয়ে একটি নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয়, লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চুক্তি ও বুথ বানিয়ে করোনা পরীক্ষার অনুমতি প্রদান করেছে, যা চরম দায়িত্বহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিচয়। ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদান করে রিজেন্ট হাসপাতাল জনগণের সঙ্গে চরমভাবে প্রতারণা করেছে। প্রতারিত পরিবারদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ