শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনার ৭০ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিক নিবন্ধনহীন ॥ বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল

খুলনা অফিস : চিকিৎসা দেওয়ার নামে প্রতারণা, জালিয়াতি, রোগী হয়রানি, অতিরিক্ত বিল, ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্নভাবে ফেঁসে যাচ্ছে দেশের নামিদামি অনেক হাসপাতাল। প্রায় একই অবস্থা খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকেও। জেলা প্রশাসনের আওতায় নিবন্ধনহীন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পরই জানা গেলো খুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশই হাসপাতাল-ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০১৮ সাল থেকে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধন নবায়নের ক্ষমতা বিভাগীয় পর্যায় থেকে সরিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়। সেখানে অনলাইনে আবেদনের পর তা’ দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। এ কারণে খুলনার ৭০ শতাংশ হাসপাতাল ক্লিনিকের নিবন্ধন নবায়ন করা যায়নি। এদিকে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
জানা যায়, বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য মতে, খুলনা বিভাগের দশটি জেলায় হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে ৬৮২টি। যার মধ্যে নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে ৪৬৩টি। নিবন্ধন নবায়ন নেই ২১৯টির। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ৮৭০টি। যার মধ্যে নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে ৫৩৬টি। নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি ৩৩৪টির। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাশেদা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওই তালিকা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের পর থেকে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর ও ঝিনাইদহে ১৬১টি ক্লিনিকের নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি। এইসব এলাকায় অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে (যাদের নিবন্ধন নবায়ন হয়নি) ১৯২টি। সরকারি খাতাকলমে এ চিত্র থাকলেও বাস্তব অবস্থা আরো ভয়াবহ। এদিকে দিনের পর দিন প্রশাসনের নাকের ডকায় ভয়াবহ এই অব্যবস্থাপনা থাকলেও এতদিনে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে দেশজুড়ে হাসপাতাল ক্লিনিকের অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠলে খুলনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গত ১৬ জুলাই অনিবন্ধিত হাসপাতাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন অভিযান শুরু করেছে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নার্স না থাকা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও কাগজপত্র না থাকায় নগরীর খানজাহান আলী রোডের মীম নার্সিং হোম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেটু কুমার বড়ুয়া জানান, ক্লিনিকটিতে কোন সার্বক্ষনিক চিকিৎসক বা নার্স নেই। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (আয়া) নার্সের পোশাক পড়ে চিকিৎসা দেয়। চারপাশে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, অনেকটা গোডাউনের মতো। ‘মেডিকেল প্রাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২’-এর বিধি অনুযায়ী ৫ দিনের মধ্যে এখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, খুলনা জেলায় বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে ৫ শতাধিক। এর মধ্যে নিবন্ধিত হাসপাতাল ১১০টি। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মঞ্জুরুল মুরশিদ বলেন, শুধুমাত্র খুলনা নগরীতে ১৬০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে এগুলোর মধ্যে মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন করা আছে। নবায়নের ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় বিভাগে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় এক হাজার হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ৩শ’টির মতো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, ২০১৮ সাল থেকে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে, ডায়াগনস্টিক প্যাথলজির নিবন্ধন ও নবায়ন ফি প্রায় ৪০ গুন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধন নবায়নের ক্ষমতা বিভাগীয় পর্যায় থেকে সরিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে অনলাইনে আবেদনের পর তা’ দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। সারাদেশের হাসপাতাল ক্লিনিকের চাপ তারা নিতে পারে না। এ কারণে ২০১৮ সালের পর থেকে খুলনার ৭০ শতাংশ হাসপাতাল ক্লিনিকের নিবন্ধন নবায়ন করা যায়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ