বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সুন্দরবন সুরক্ষায় অপরাধ দমনে অভিযান অব্যাহত

খুলনা অফিস : সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষাসহ অপরাধ দমনে উপকূল অঞ্চলের তিন খুলনা জেলার পুলিশ নিয়মিত অভিযান শুরু করেছেন। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুন্দরবন রক্ষায় এ তৎপরতা শুরু করেছেন। নতুন করে দস্যুবাহিনী গঠনের চেষ্টা, বিগতদিনে দস্যুবাহিনীর কাছ থেকে নানাভাবে সুবিধাভোগীদের টার্গেট করে এ কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সুবিধাভোগিকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তাছাড়া কঠোর নজরদারিতে রয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। এদিকে সুন্দরবন থেকে জেলেদের অপহরণ করে ভারত সীমান্ত নিয়ে একটি চক্রটি মুক্তিপণ আদায় করে বলে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী নাগরিকসহ ভারতীয় বেশ কয়েকজন জড়িত। র‌্যাব, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী, নৌ-পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের এ তৎপরতা সুন্দরবনকে স্বাভাবিক রাখতে আরো বেশি সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

গত ২৫ জুন সাতক্ষীরা রেঞ্জে থেকে ২৮ জুন সকাল পর্যন্ত র‌্যাবের টানা ৫৭ ঘণ্টা অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নতুন করে দস্যুতায় নামা তিন বনদস্যু নিহত হয়। এ সময় পাঁচজনকে গ্রেফতার ও মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত দু’জন বনজীবীকেও উদ্ধার করা হয়। ২৮ জুন র‌্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সুন্দরবন উপকূল এলাকা পরিদর্শনে এসে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই তথ্য দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই র‌্যাবের সাবেক প্রধান ও বর্তমান পুলিশের মহা পরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে খুলনা, বাগেরহাট সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুন্দরবন রক্ষায় তৎপরতা শুরু করেছেন।

সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী সাতক্ষীরায় পুলিশের অভিযানে বনদস্যুতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত বুধবার চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন, সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মামুনুর রহমান ওরফে খোকা বাবু, দেবহাটা উপজেলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের মহিউদ্দীন গাজীর ছেলে আলাউদ্দীন গাজী, সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার আব্দুল হাকিম গাজীর ছেলে তৈয়েবুর রহমান কামরান ও একই এলাকার মৃত শওকত আলীর ছেলে রহমান এন্টার প্রাইজের মালিক সাইদুর রহমান সাইদ।

তিনি আরও জানান, সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত থেকে কিছু অপরাধী এসকল কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদেরকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকও রয়েছে।  এরা হলো বাংলাদেশী নাগরিক প্রদীপ, পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা এলাকার মিঠুন দাস। ভারতের বসিরহাট ত্রিমোহিনী এলাকার আক্তার আলম গাজী, পান্না, বাপ্পী ও ঘোজাডাঙ্গা এলাকার হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক নুনু। এ সংঘবদ্ধ চক্রটি জেলেদের অপহরণ করে সুন্দরবনের ভারত সীমান্তে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়সহ নানাভাবে তাদেরকে নির্যাতন চালায় বলেও তথ্য রয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন যাবত সুন্দরবন এলাকায় নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জের অংশে সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।  বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় জানান, বাগেরহাট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মংলার সুন্দরবন এলাকায় পুলিশের নজরদারি রাখা হয়েছে। নিয়মিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাগেরহাট জেলা পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

২০১৮ সালের ১ নবেম্বর বাগেরহাটের শেখ হেলালউদ্দিন স্টেডিয়ামে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুন্দরবনকে আনুষ্ঠানিকভাবে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন বনদস্যু সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এ সময় তারা ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২ হাজার ৫শ’ ৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ সরকারের কাছে সমর্পণ করেছেন। আত্মসমর্পণকারী বনদস্যুগণ অপরাধের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় তারা সমাজের অন্যান্য অপরাধী ও বিপদজনক জনগোষ্ঠীর সামনে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ