শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি আয় কমেছে ১৭ শতাংশ

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান : ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। তাতে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ। আর বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রফতানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার। সবমিলিয়ে গোটা অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ শতাংশ পিছিয়ে।
কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা বাংলাদেশে লাগতে শুরু করে গত মার্চ মাসে, এপ্রিলে রফতানি কমে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল, যা ছিল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের চেয়েও অনেক কম। বিধিনিষেধ শিথিল করে কলকারখানা চালুর পর মে মাসে রফতানি বেড়ে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। অর্থবছরের শেষ মাস জুনে তা আরও বাড়লো। করোনাভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশের রফতানি নেমেছিল তলানিতে, তাতে থেকে উঠতে থাকলেও রফতানিকারকরা আশাবাদী হতে পারছেন না। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর গত রোববার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে পণ্য রফতানি থেকে ২৭১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক মে মাসের চেয়ে ৮৫ শতাংশ বেশি।
সব মিলিয়ে গোটা ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে কম ২৬ শতাংশ।
বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্য ছিল ৩৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তৈরি পোশাক থেকে আয় হয়েছিল ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে এ খাতে আয় কমেছে ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে নিট পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের চেয়ে আয় কমেছে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ওভেন পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আনা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাতে ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল। এরপর শুরু হয় ক্রয়াদেশ বাতিলের হিড়িক। মার্চ মাসে এসে রফতানির অঙ্কে ধস স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ওই মাসে ২২৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের মার্চের চেয়ে ২০ শতাংশ কম ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) মধ্যে সেটিই ছিল বড় ধাক্কা।
ইপিবি’র তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে রফতানি আয় কমেছিল ৮৫ শতাংশ। মে মাসে কমে ৬১ শতাংশ। আর সর্বশেষ জুনে কমেছে ২৫ শতাংশ। জুন মাসে রফতানি হয়েছে ২৭১ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পণ্য। লক্ষ্য ছিল ৩৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।
রফতানিকারকরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এপ্রিল মাসের পুরোটা সময় পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতিও ছিল খুব খারাপ। সে কারণে এপ্রিলে রফতানি তলানিতে নেমে এসেছিল।
বাংলাদেশের রফতানি আয়ে মূল ভূমিকা থাকে তৈরি পোশাক শিল্পের; মে মাসে পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন হয়েছে। আগের ‘অর্ডার’ও ছিল। ইউরোপের দেশগুলোর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় রফতানিও কিছুটা বেড়েছে। তবে নতুন ‘অর্ডার’ না আসার পাশাপাশি অনেক ক্রেতা ‘অর্ডার’ বাতিল করেছে বলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন। ফলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা জানিয়েছেন পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক। তিনি জানান, এখন নতুন করে কোনো অর্ডার আসছে না। আগের যে অর্ডার ছিল সেগুলোও অনেকে বাতিল করছেন। খুবই কঠিন সময় পার করছি আমরা। খুব সহসা এই সঙ্কট কাটবে বলেও মনে হয় না।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বে পোশাকের চাহিদা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যাবে। রুবানা হক বলেন, জুন মাসের যে রপ্তানি সেটা কিন্তু কোভিড-১৯ এর আগের অর্ডারের। নতুন অর্ডার না আসলে রপ্তানি হবে কীভাবে? তাই সামনের দিনগুলো নিয়ে খুবই শঙ্কিত আমরা। এ পরিস্থিতিতে রফতানি খাতের জন্য মার্কিন ডলারের বিনিময় হার পাঁচ টাকা বেশি, ছোট কারখানাগুলোর জন্য কম সুদে ঋণের ব্যবস্থাসহ সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।
নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, এপ্রিলের-মে মাসের চেয়ে জুনে রফতানি বৃদ্ধি একটি পজিটিভ দিক। তবে এতে যে সঙ্কট কেটে যাচ্ছে সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমাদের হাতে অর্ডার নেই। আগামী মাসগুলোতে কী রফতানি করবো? সে কারণে আমরা কিছুই বলতে পারছি না।
আমাদের ভবিষৎ কী? বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের রফতানি আয় এমনিতে ভালো হচ্ছিল না, এখন তাতে যুক্ত হয়েছে মহামারির প্রভাব। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা কেউ বলতে পারে না। আর পরিস্থিতি ভালো হলেই যে মানুষ আগের মতো পোশাক কিনবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
পাট থেকে আয় বেড়েছে: এই সঙ্কটেও পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ৭ শতাংশ। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের নয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ পর্যন্ত পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে ২৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি ছিল। মহামারিকালে ওষুধ রফতানি বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ।
বাকি অন্য সব খাতেই কমেছে। চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রফতানি কমেছে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রফতানি কমেছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রফতানি কমেছে ১৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ