শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রংপুরে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল বিলম্বিত হওয়ায় জনগণ চরম ভোগান্তির শিকার

রংপুর অফিস : রংপুর সিটি করপোরেশনের করোনা রোগীদের মোবাইল ফোনে টেলি মেডিসিন সেবা প্রশংসিত হলেও নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া বিলম্বিত হওয়ায় জনগনের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
 নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এর ফলে সিটি মেয়রসহ সর্বস্তরের সুধি মহল থেকে এর নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত ফলাফল প্রদানের দাবি জানিয়ে মানব বন্ধন এবং স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। রংপুর সিটিকর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, জেলায় গত ২৩ জুন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৭৯৩ জন। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনেই আক্রান্তের সংখ্য প্রায় ছয় শতাধিক। এর মধ্যে মৃত্যুহয়েছে ৯ জনের। করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতালে সিটির ২২ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে টেলি মেডিসিনের আওতায় রয়েছেন ২৪৮ জন রোগী।
 রংপুর সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্র জানিয়েছে, করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহে সিটি করপোরেশনের ৬ জন খন্ডকালীন টেকনিশিয়ান রয়েছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে। করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতালে রসিকের পক্ষ থেকে ৩ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া নমুনা পরীক্ষার জন্য নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ায় অবস্থিত বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি বুথ খোলা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখানে প্রতিদিন ৬০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনা রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। এই পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা ১৮৮ জনের। কিন্তু প্রতিদিন নমুনা জমা হচ্ছে ৪ থেকে ৫শ’ জনের। ফলে কোন কোন সময় নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায়। এই দীর্ঘ সময়ের কারণে নমুনা দেয়া ব্যক্তি ও তার স্বজনরা থাকে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ এলে সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের টেলি মেডিসিন সেবা দেয়া হয়। করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ঐ রোগীকে চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া তাদের খাওয়ার ব্যাপারেও দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। দরীদ্র রোগী ও তার পরিবারের খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয় রসিকের পক্ষ থেকে। রংপুর সিটিকর্পোরেশনের উদ্যোগে ও করোনা হাসপাতালের টেলি মেডিসিন সেবা পেয়ে এ পর্যন্ত ৩০৯ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। রংপুর নগরীর গুপ্তপাড়া এলাকার অগ্রণী ব্যাংকের ড্রাইভার রফিকুল ইসলামের গত ২৮ মে নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসে এবং ২০ জুন তিনি সুস্থ্য হন। তিনি বাড়িতেই চিকিৎসা নেন। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে করোনা সেবা দেয়া চিকিৎসকরা প্রতিদিন মোবাইল ফোনে তাকে পরামর্শ দিত। সব সময় খোঁজখবর নেয়ায় তার মনোবল বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে তিনি সুস্থ্য হয়ে কর্মস্থলে যোগদানের চিন্তা করছেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, যে ক’দিন তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন সেই ক’দিন প্রতিবেশিরা তাকে ও তার পরিবারকে হেয় চোখে দেখেছে। কেউ কোন খোঁজ না নিলেও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা তার খোঁজ রাখায় পরিবারের হতাশা অনেকটা কেটে যায়।
রংপুর সিটিকর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডাক্তার কামরুজ্জামান তাজ সাংবাদিকদের জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে প্রতিদিনই আমরা করোনা রোগীদের টেলি মেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি জানান, সাধারণ মানুষ চলাফেরায় সরকারি বিধি নিষেধ না মানায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের প্রতি অন্যান্যরা মানবিক আচরণ করেন না এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
রংপুর সিটিকর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, করোনা রোগীদের সেবার দিক থেকে দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনের তুলনায় রংপুরের সেবার মান অনেক ভাল। জনগণ সচেতন হলে খুব দ্রুত এই মহামারী কমে যাবে। রংপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার হিরন্ব কুমার রায় সাংবাদিকদের জানান, করোনা প্রতিরোধে কয়েকটি ওয়ার্ডকে পর্যবেক্ষণ করে সে সবের জোন চিহ্নিত করে সিদ্ধন্তের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত এলে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ