শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মাঠের রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হতে আরও কয়েকমাস লেগে যেতে পারে

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল: করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা সব কিছু ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করলেও রাজনৈতিক অঙ্গনের ‘লকডাউন’ আপাতত শিথিল হচ্ছে না। ফলে এখনই মাঠে গড়াচ্ছে না রাজনীতি। সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন কিংবা শ্লোগান- রাজনীতির এই চিরচেনা ছবিটি পাল্টে গেছে। 
করোনাভাইরাস রাজপথের রাজনীতিকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে টেনে নিয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে কবে মুক্তি মিলবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। গত রোববার থেকে অফিস-গণপরিবহনসহ প্রায় সব কিছু সীমিত পরিসরে খুললেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঠে নামতে আরও সময় চায় রাজনৈতিক দলগুলো। নেতারা মনে করেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী মাস থেকে সীমিত পরিসরে শুরু হতে পারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এর আগে ই-রাজনীতি অর্থাৎ ভার্চুয়াল মাধ্যমেই সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ড চলবে। তবে লকডাউন তুলে দেয়ার পর যেভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এরই মধ্যে এলাকা ভিত্তিক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ফলে মাঠের সেই রাজনীতির চিত্র দেখা যেতে আরও কয়েকমাস সময় লেগে যেতে পারে। 
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত করোনা মহামারিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা চালাবেন তারা। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ঝুলে আছে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সব মিলে দলগুলোর কর্মকাণ্ডে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনাভাইরাসের মতো মহামারিতে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে দেশের মানুষ। এ পরিস্থিতিতে মাঠে দলীয় রাজনীতি নেই- এটা সত্যি, তবে আমরা বসে নেই। তিনি বলেন, রাজনীতি হচ্ছে জনগণের জন্য। জনগণের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোই রাজনৈতিক দলগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। জনগণের দল হিসেবে বিএনপি সেই কাজটিই করছে। আপাতত আমরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখে নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। সাধ্যমতো আমরা তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পুরোদমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হওয়া কঠিন। তবে এ কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা সংক্রমণের আশঙ্কায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে আমাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, করোনা সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এখনও এই কাজ অব্যাহত রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে এর চেয়ে বড় কাজ আর কি হতে পারে। এটাও তো রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাজের মধ্যেই পড়ে। তবে মাঠের রাজনীতি বা সংগঠন গোছানোর যে কাজ, সেটা এখনই শুরু করা সম্ভব নয়। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের জনসমাগমের ওপর বিধিনিষেধ এখনও বহাল আছে।
করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচি নিয়ে সঙ্কটে পড়া অসহায় মানুষদের পাশে থাকতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাস সঙ্কট না কাটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তাদের মানবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। এর আগে পুরোপুরিভাবে মাঠের সাংগঠনিক কর্মসূচিতেও ফিরতে চান না তারা।
করোনা সঙ্কটের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখায় আওয়ামী লীগের অনেক কাজ জমে রয়েছে। ২০-২১ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের আগে ও পরে কয়েক দফায় মিলিয়ে তৃণমূলের প্রায় অর্ধেক সাংগঠনিক জেলার ও উপজেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে এখনও অর্ধেক বাকি। তাছাড়া সম্মেলন হলেও অনেক জেলা-উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। অন্যদিকে সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের জাতীয় সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। একই অবস্থা ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগেরও। এছাড়া করোনা সঙ্কটের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আরও তিন সহযোগী সংগঠন। সেগুলো হল- মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগ।
একই পরিস্থিতি মাঠের বিরোধী দল বিএনপিরও। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখেছে দলটি। আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত পুনর্গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। দলীয় কর্মকাণ্ডও নেই আগের মতো। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে প্রযুক্তির সহায়তা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে কয়েকবার স্থায়ী কমিটির সভাও করেছে। দলের মহামচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অনলাইনে নিয়মিত ব্রিফিং করছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নেতারা। দলীয় কর্মকাণ্ড না থাকলেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে দলটি। সারা দেশে অসহায় মানুষকে সাধ্যমতো সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন নেতারা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ