শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ঈদ যাত্রায় ১৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার : গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঈদুল ফিতরের যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ১৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত ও ২৮৩ জন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ১৫৬টি দুর্ঘটনায় ১৮৫ জন নিহত ও ২৮৩ জন আহত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ‘ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নুর নবী শিমু, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি, তাওহীদুল হক লিটন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহিন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির আমজাদ হোসেন, মোস্তানসিরুল হক চৌধুরী, জিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এ কারণে যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রতিবছর ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর গণপরিহন বন্ধ থাকায় ঈদযাত্রা ব্যক্তিগত পরিবহনে সীমিত ছিল। তা সত্ত্বেও ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল আগের চেয়ে বেশি। গত ১৯ জুন থেকে ৩১ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনে ১৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত ও ২৮৩ জন আহত হয়েছেন। ওই সময়ে রেলপথে ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের একটি ঘটনা ঘটলেও তাতে কেউ হতাহত হননি। একই সময়ে নৌপথে ছয়টি ছোট-বড় বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৪৫ জন নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ১৩ দিনে দুর্ঘটনায় মোট ২৮৫ জন মারা গেছেন।
ঈদযাত্রার এই ১৩ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ২৫ মে। ওই দিন ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ২৪ মে। ওই দিন ছয়টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত ও দু’জন আহত হন। আর একদিনে হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঘটে ১৯ মে। ওই দিন ১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৫৪ জন আহত হন।
এই সময় একদিনে সর্বোচ্চ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ঈদের দিন ২৫ মে। সেদিন ১৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হন।
১৩ দিনে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৪৫ জন চালক, ৩৩ জন নারী, ২৮ জন পথচারী, ২৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৪ জন শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, পাঁচজন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, তিনজন শিক্ষক, তিনজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, তিনজন সাংবাদিক এবং একজন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য, ১৮ জন নারী, ১২টি শিশু, ১৪ জন শিক্ষার্থী, তিনজন শিক্ষক, ৩২ জন চালক, সাতজন পরিবহন শ্রমিক, একজন প্রকৌশলী, তিনজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এই সময়ে এক ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে গাইবান্ধায়। জেলার পলাশবাড়িতে যাত্রীবাহী ট্রাক খাদে পড়ে গেলে ১৩ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়। সিরাজগঞ্জ সদরেও যাত্রীবাহী ট্রাক উল্টে চারজন নিহত ও সাতজন আহত হন। রাজধানীর কল্যাণপুরে কার-অটোরিকশা-কার ত্রিমুখী সংঘর্ষে চারজন নিহত ও ১২ জন আহত হন।
প্রতিবেদনে সংগঠিত দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণে বলা হয়, মোট যানবাহনের ৩৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮ দশমিক ২১ শতাংশ অটোরিকশা, ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮ দশমিক ২১ শতাংশ অটোরিকশা, ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৬.২৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ০.৯৭ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩৮ দশমিক ২৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে ও শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ রেল-যানবাহন সংঘর্ষ দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
এই সময় দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সাধারণ ছুটি বা লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। ৯০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত বন্ধ থাকলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এখন ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনকে বিকশিত করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনাকেও মহামারির মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ