শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

করোনার ভয়াবহতায় সবকিছু খুলে দিয়ে সরকার কানে তুলো দিয়েছে

গতকাল সোমবার গুলশান চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা মহামারীর ভয়াবহতা বিবেচনায় না এনে সবকিছু খুলে দিয়ে ‘সরকার কানে তুলো দিয়েছে’ বলে মন্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কাল থেকে দেখছি, যে রেলগাড়ি চলছে এবং ট্রেনগুলোতে সেই গাদাগাদি করে মানুষ আসছে। এরমধ্যে আপনারা দেখেছেন যে, বাসে রীতিমতো মারামারি হচ্ছে বাসে উঠার জন্য, জায়গা পাওয়ার জন্য। এটা সম্ভব না বাংলাদেশে এভাবে গণ-পরিবহনকে নিয়ন্ত্রণ করবেন? যেখানে আপনি অফিস খুলে দিয়েছেন, অফিস খুললে তো লোকজন তো আসবেই। লঞ্চেও একই অবস্থা হয়েছে। এখন সরকারের অবস্থা হচ্ছে যে- কানে দিয়েছি তুলো’। তারা কানে তুলো দিয়েছে। কানে দিয়েছি তুলো, যা খুশি বলেন আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা তো আছি।
ফখরুল বলেন, বার বার করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের(সরকার) নিয়োজিত যে টেনিক্যাল পরামর্শক কমিটি রয়েছে তারাও বলছেন যে, এটা(সব কিছু খুলে দেয়া) একটা সুইসাইডাল। এটা করলে একটা ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হবে। তারা সেই কথা শুনেননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর যে ব্যক্তিগত চিকিৎসক যিনি আছেন আবদুল্লাহ(অধ্যাপক এম আবদুল্লাহ)সাহেব, তাকে এডভাইজার হিসেবে নেয়া হয়েছে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন যে, এটা ভয়্বাহ অবস্থার সৃষ্টি করবে, সংক্রমণ আরো ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। এটা পরিষ্কার যে, তারা (সরকার) ব্যর্থ হয়েছে এই করোনা ভাইরাসের উদ্ভুত যে পরিস্থিতি সেটাকে সামাল দিতে।
আমরা মনে করি, এটা আরো সময় নিতে পারতো। ভারতে দেখেন, তারা সব রাজ্যের চিফ মিনিস্টার, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিদের সঙ্গে কথা বলেছেন, কথা বলে আরো একমাস লকডাউন বাড়িয়েছে। যে কথাটা আমি বার বার বলেছি, দায়িত্বশীলতা নেই বলেই সরকার এভাবে তুঘলকি কারবার করছেন যেটা জনগনকে পুরোপুরিভাবে মহাবিপদের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের একলা চলো নীতি, সেই একলা চলো নীতি পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ৭৭ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ দেয়া হবে, কোনো ইনসেনটিভ না। এটা কিন্তু একটা কৌশল। যে ক্শৌল আপনি দেখছেন খুনাখুনিও হচ্ছে। এক ব্যাংকের ডিরেক্টর আরেক ব্যাংকের ডিরেক্টরকে ধরে নিয়ে আসছে বাসায়, তাকে বন্দুক ধরছে। তারা আবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশ থেকে চলেও যাচ্ছে। হোয়ার ইজ গর্ভমেন্ট, সরকার কোথায়? আজকে এই কারণে এতো ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে সেজন্যই।
তিনি বলেন, আমরা কিছু বললেই তো বলে যে, আমরা উসকানি দেয়ার চেষ্টা করছি, আমরা সমালোচনা করছি। একজন তো প্রায় বলেন যে, বিষোদগার করবেন না। আরে বিষোদগার করে আপনারা যে অবৈধভাবে সরকার দখল করে আছেন সেটা বলছি না। আমরা বলছি যে, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন এটা পারছেন না করতে, এই জিনিসটা করা উচিত ছিলো।
বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ‘অমানবিক’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে একটা অমানবিক কাজ করা হয়েছে। আর এমনিতেই মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বাসে কারা উঠে? কম আয়ের সাধারণ মানুষেরাই বাসে উঠে। তাদের বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিলো। কার স্বার্থে বাড়িয়েছে?  মালিকদের স্বার্থে বাড়িয়েছে। মালিকদেরকে আবার প্রণোদনা দিচ্ছে, অনুদান দিচ্ছে। পুরো বিষয়টা হয়েছে লুটপাটের জন্য, পুরোপুরি লুটপাট। শুধুমাত্র দুর্নীতির চরমভাবে সুযোগ নিচ্ছে সবাই।
গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনি দেখুন না, এ্থনো ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিট এখনো অনুমোদন পায়নি। পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখেছি এই কিট নিয়েও বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি চলছে, ব্যবসা চলছে, বানিজ্য চলছে। মানুষের এ্ দুর্দিনে যারা মানুষের স্বাস্থ্যকে, জীবনকে পূঁজি করে ব্যবসা করার, বানিজ্য করার, ব্যবসা করার সুযোগ দেয় সেই সরকারকে কি আমরা দুর্ণীতিমুক্ত বলতে পারবো?
সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে শিল্পপতি মরহুম আব্দুল মোনেম, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মোস্তফা কামাল সৈয়দ, শিক্ষাবিদ আবদুল কাদের ভুঁইয়াসহ করোনায় আক্রান্ত মৃতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করে তাদের রুহের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ফখরুল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, তার স্ত্রী শিরিন পারভিন হক, ছেলে বারিশ হাসান চৌধুরী, প্রবীন আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান ও তার স্ত্রীসহ গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও চিকিৎসকের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন তিনি। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ