শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

যুক্তরাষ্ট্রে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ

সংগ্রাম ডেস্ক : পুলিশ কর্মকর্তার হাতে কৃষ্ণাঙ্গ খুনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়েছে। সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে কারফিউ জারি করেও বিক্ষোভকারীদের দমন করা যায়নি। এমন বাস্তবতায় নয়টি অঙ্গরাজ্য সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন হয়েছে। এদিকে এনবিসি নিউজের খবর থেকে জানা গেছে, শনিবার হোয়াইট হাউসের সামনে টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীদেরকে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে পুলিশ জর্জ ফ্লয়েড নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে তাকে আটক করতে গিয়েছিল পুলিশ। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাঁটু দিয়ে তার গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য। নিহত ফ্লয়েড নিরস্ত্র ছিলেন।  নিঃশ্বাস নিতে না পেরে তাকে কাতরাতে দেখা যায়। কৃষ্ণাঙ্গদের দাবি, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন ফ্লয়েড। হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায় ১৩টি অঙ্গরাজ্যের ২৫ শহরে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
ক্যালিফোর্নিয়ার বেভার্লি হিলস, লস অ্যাঞ্জেলেস, কলোরাডোর ডেনভার, ফ্লোরিডার মায়ামি, জর্জিয়ার আতলান্তা, ইলিনোইসের শিকাগো, কেনটাকির লৌইসিভিল, মিনেসোটার মিনেপোলিস, সেন্ট পল, ওহিওর সিনসিনাটি, ক্লেভারল্যান্ড, কলোম্বাস, ডায়টন, টলেডো, ওরিগন ইউজিন, পোর্টল্যান্ড, পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া, পিটসবার্গ, টেনেসির ন্যাশভিল, উথার সল্টলেক সিটি, ওয়াশিংটনের সিটেল, উইসকোনসিনের মিলওয়াউকি শহরে কারফিউ জারি করা হলেও বিক্ষোভকারীদের দমানো যায়নি। গত শনিবার তারা রাস্তায় নেমে পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় সবার উপরে থাকা দেশটিতে সামাজিক দূরত্ব পালন না করেই রাস্তায় নেমে পড়েছে অনেকেই। যাদের মুখে নেই কোনও মাস্কও।
ক্রমে ছড়িয়ে পড়তে থাকা বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সেনা ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত আমেরিকান ন্যাশনাল গার্ডের শরণাপন্ন হয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি-সহ আরও আটটি অঙ্গরাজ্য। মিনেসোটা, জর্জিয়া, ওহাইও, কলোরাডো, উইসকনসিন, কেনটাকি, উটাহ ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের কোথাও কোথাও এরইমধ্যে তারা মাঠে নেমেছে, আবার কোথাও কোথাও তারা মোতায়েন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
গত শনিবার বিক্ষোভকারীরা দ্বিতীয় দিনের মতো হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয়। এর উল্টো পাশে অবস্থিত লাফায়েত্তে পার্কের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করে তারা। এদিন বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার স্প্রে, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়। বিক্ষুব্ধরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতলসহ বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপ করতে থাকে। সন্ধ্যার দিকে একটি ভাগাড়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। কমান্ডিং জেনারেল উইলিয়াম ওয়াকার এক বিবৃতিতে জানান, বিক্ষোভ দমাতে রাত ৯টার দিকে ইউএস পার্ক পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার জন্য  ডিসি ন্যাশনাল গার্ডকে নির্দেশ দেন সেনা সচিব রায়ান ম্যাককার্থি।
এর আগে, বিক্ষোভকারীদের কাউকে কাউকে সিক্রেট সার্ভিসের গাড়ির ওপরে এবং আইসেনহোয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস ভবন সংলগ্ন নিরাপত্তা বুথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সন্ধ্যা ৬টা বাজার আগ মুহূর্তে পুলিশ তাদেরকে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিতে থাকে। তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ারও চেষ্টা করে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিক্ষোভকারীরা লাফায়েত্তে পার্কের বিপরীত পাশে অবস্থান নিয়ে সিক্রেট সার্ভিস ও পার্ক পুলিশের সদস্যদের লক্ষ্য করে গালি ও স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ সদস্যরা পার্কে স্থাপিত নিরাপত্তা বেষ্টনীর পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। বেষ্টনীগুলোকে আরও শক্তভাবে আটকে রেখে বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার স্প্রে ছুড়তে থাকে তারা। পিপার স্প্রেতে ভারি হয়ে ওঠে হোয়াইট হাউসের বাতাস। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ পেনসিলভানিয়া এভিনিউ প্লাজাকে ১৭ স্ট্রিট থেকে পৃথককারী বেষ্টনী টপকে যেতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার প্লাজায় সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘ভয়ানক ব্যাপার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। নিহত আফ্রিকান-আমেরিকানের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েডের ছবি হাতে বিক্ষোভ দেখান ও ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ স্লোগান দেন। এ প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় হোয়াইট হাউস অস্থায়ীভাবে লকডাউন করে দেওয়া হয়; গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এ বাসভবনের প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার পথগুলো বন্ধ করে দেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ