ঢাকা, বুধবার 17 April 2024, ০৪ বৈশাখ ১৪৩০, ৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ ক্রমশই ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। বাগেরহাটসহ উপকূলবর্তী এলাকায় এরইমধ্যে থেমে থেকে বৃষ্টি আর দমকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে আট ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উপকূলের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।

মাছ এবং মধু আহরণ করতে যাওয়া প্রায় ৮০০ জেলে-মৌয়াল রয়েছে সুন্দরবনে। জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগেরহাটের শরণখোলায় বলেশ্বর নদী পাড়ের রায়েন্দা এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি গ্রামে প্রবেশের উপক্রম হয়েছে। সুন্দরবনের মধ্যে তিন ফুট উচ্চতায় পানি প্রবেশ করেছে। 

এদিকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত বাগেরহাটের বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অ্যালার্ট এস্টেট-৪ জারি করা হয়েছে। বন্দরের সব নৌযান নিরাপদ স্থানে রাখার পাশাপাশি বন্দরে সব ধরনের পণ্য উঠানামার কাজ বন্ধ রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আসা উপকূলবাসীর বাড়িঘর এবং সহায় সম্পদ রক্ষায় টহল জোরদার করেছে বাগেরহাট পুলিশ।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত জেলার এক হাজার ৩১টি সাইক্লোন শেল্টারে এক লাখ ৩০ হাজার উপকূলবাসী আশ্রয় নিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব মেনেই এসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সেখানে প্রবেশের আগে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয় নেয়া মানুষদের মাঝে শুকনা খাবার, পানিসহ অন্যান্য খাদ্য সরবারহ করা হয়েছে।

জেলায় ৮৪টি মেডিকেল টিম ও ১১ হাজার ৭০৮ জন সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে এবং বিভিন্ন উপজেলায় ২০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ সাত লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনে মধু আহরণ আর মাছ ধরতে বন বিভাগ থেকে অনুমতি (পাশ) নিয়ে কয়েকদিন আগে সাড়ে ছয় হাজার জেলে ও মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ জন জেলে-মৌয়াল বর্তমানে বনেই অবস্থান করছে। এদের কেউ কেউ নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের মধ্যে ছোটছোট খালে আবার কেউ কেউ বন বিভাগের অফিসগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। সুন্দরবনের নদী-খালে জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান জানান, বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় আট ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রায়েন্দা এলাকায় বলেশ্বর নদী পাড়ে পুরাতন বেড়িবাঁধ উপচে পানি গ্রামে প্রবেশের উপক্রম হয়েছে।

পানি যাতে বাঁধ উপচে গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য কাজ চলছে এবং জেলায় মোট ৩১২ কিলোটিমার বাঁধ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান জানান, আবহাওয়া  অফিস মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় সর্বোচ্চ সতকর্তা হিসেবে মোংলা বন্দরে অ্যালার্ট এস্টেট-৪ জারি করা হয়েছে। বন্দরে সব ধরনের পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রয়েছে। বন্দরে অবস্থানরত সব নৌযান নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রস্ততি নেয়া হয়েছে। উপকূলের যে সব মানুষ তাদের বাড়িঘর ফেলে আশ্রয় কেন্দ্রে আসছে তাদের সহায় সম্পদ রক্ষায় পুলিশ কাজ করছে বলে পুলিশ সুপার জানান।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির জানান, বাগেরহাট স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তত রাখা হয়েছে।- ইউএনবি

ডিএস/এএইচ

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ