বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

প্রয়োজন সম্মান ও সহযোগিতা প্রদর্শন

তিনি এমনই। যেটা বলতে ইচ্ছে হয়, বলে ফেলেন। অত চিন্তা-ভাবনা বা গবেষণার ধার ধারেন না। তাইতো বলে ফেললেন,  প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আসুক বা না আসুক দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে করোনা নিয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গত ১৫ মে এমন ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আরো অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি এবং ভাইরাস কিংবা ফ্লু আসবেই, আপনাকে এর বিরুদ্ধে লড়াই করেই চলতে হবে।’ এদিকে বিশেষজ্ঞরা এখনই সবকিছু সচল  করার বিরোধিতা করছেন। তাদের দাবি, এটা হলে ভাইরাসটি আরো ব্যাপক হারে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়বে। আর সমালোচকরা বলছেন, নবেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও সব সচল করতে চাচ্ছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট, বিশেষজ্ঞ ও সমালোচকদের বক্তব্যে আমরা ভাবনার তিনটি ধারা লক্ষ্য করলাম। একটু চিন্তামগ্ন হলে তিনটি ধারাতেই কিছু বার্তা পাওয়া যাবে, যা ফেলে দেয়ার মতো নয়। এসব বার্তার সমন্বয়ে আমরা জীবনযাপনের একটা পথ খুঁজে পেতে পারি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পরস্পরকে সোনার ও বোঝার মতো ধৈর্য আমাদের আছে কী? আর যদি দম্ভ ও অহঙ্কারের কথা বলি, তাহলে বলতে হয়- এসব ভাইরাসও ইতোমধ্যে মানুষের, সভ্যতার অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে।
করোনা বিপর্যয়ের মধ্যেও আশাবাদী হওয়ার মতো খবর পাওয়া যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের টিকা ছয়টি বানরের দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এটি কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। করোনার টিকা প্রয়োগের এই ফলাফল আশা জুগিয়েছে। এখন মানুষের দেহেও এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। এ গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। এ  টিকা প্রাণীগুলোর নিউমোনিয়া হওয়া থেকে সুরক্ষা দিয়েছে। কয়েকশ’ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এটি অনুমোদন পেলেই প্রচুর পরিমাণে ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে। আর বাজারে এর দাম বেশি হবে না বলে জানানো হয়েছে। দাম কমানোর লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা হবে এই টিকা। এদিকে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সোরেন্টো থেরাপিউটিকস নামে একটি বায়ো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। শুক্রবার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. হেনরি জি জানান, ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি আবিষ্কার করেছেন তারা। এটি করোনা রোগীদের চিকিৎসায় শতভাগ কার্যকর। এমনকি অ্যান্টিবডিটি দেহে প্রয়োগ করা মাত্র চারদিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন। আর আপনার শরীরে যদি আমাদের নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি থাকে তবে আপনার সামাজিক দূরত্বের দরকার নেই, আপনি নির্ভয়ে সমাজে চলতে পারবেন।’
টিকা এবং অ্যান্টিবডি আবিষ্কারের উদ্যোগ আমাদের জন্য খুবই ভালো খবর। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, এগুলো  যেন পৃথিবীর সব দেশের মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়। দাম যেন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে। করোনা চিকিৎসার মধ্যে যেন জাতিগত বিদ্বেষ কিংবা রাজনীতির হলাহল প্রবেশ না করে। এগুলোও করোনার মতো বিপদজনক। সেই অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর হয়েছে। মানুষের সামনে এখন জীবনরক্ষা ও জীবিকা অর্জনের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জিততে হলে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ হতে হবে এবং উদার মনে পরস্পরের প্রতি বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ