বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রহমত মাগফিরাত নাজাতের মাস রমযান

মিয়া হোসেন: ইফতার অর্থ ভঙ্গ করা, সারাদিন রোজা রাখা শেষে সূর্যাস্তের সাথে সাথে মুমিন রোজাদারগণ খাবার খেয়ে ঐ দিনের রোজা ভেঙ্গে ফেলেন। রোজাদারের জন্য ইফতার হলো সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। আর ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার কথাও হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। যথাসময়ে ইফতার করা এবং অন্যকে ইফতার করানোর মধ্যে অনেক নেকী অর্জিত হয়। মুসনাদে আহমাদে হযরত আবুযর গিফারী (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেছেন, রাসূলে কারীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “আমার উম্মত যতদিন পর্যন্ত ইফতার ত্বরান্বিত করবে এবং সাহরী বিলম্বিত করবে, ততদিন তারা কল্যাণময় হয়ে থাকবে। ইফতার করার নির্দিষ্ট সময় সূর্যাস্ত হওয়ার পর মুহূর্ত। এই মুহূর্ত উপস্থিত হওয়া মাত্রই রোজা খোলে ফেলা কর্তব্য। এতে কোনরূপ বিলম্ব করা উচিত নয়। ইফতার ত্বরান্বিত করা কেবল রাসূল (সাঃ) এরই পছন্দ নয়। আল্লাহর নিকটও ইহা অধিকতর প্রিয়। হাদীসে কুদসীতে উদ্ধৃত হয়েছে- আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ইফতার ত্বরানি¦তকারী বান্দাগণই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়।

সহীহাইন গ্রন্থে সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ। একটি আনন্দ ইফতার করার সময় এবং দ্বিতীয়টি তার মনিব আল্লাহর সাথে সাক্ষাত লাভের সময়। আর জেনে রাখ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধি হতেও অনেক উত্তম। আর রোজা ঢাল স্বরূপ। তোমাদের একজন যখন রোজা রাখবে, তখন সে যেন বেহুদা ও অশ্লীল কথা-বার্তা না বলে এবং চিৎকার ও হট্টগোল না করে। অন্য কেউ যদি তাকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে ঝগড়া-বিবাদ করতে আসে, তখন সে যেন বলে, আমি রোজাদার। একটানা ১২-১৪ ঘন্টা ক্ষুধা-পিপাসার দুঃসহ জ্বালা সহ্য করার পর পানাহার করার অবাধ সুযোগ আসে ইফতারের মুহূর্তে। এ মুহূর্তের জন্য বাড়ির ছোট কচি ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এবং ইফতারের মুহূর্তে আনন্দ-ফূর্তি প্রকাশ করে। ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অনেক দোয়া পড়তেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয় (আবু দাউদ)।” সে জন্যই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) ইফতারের সময় বাড়ির সবাইকে সমবেত করে দোয়া করতেন।

  রোজাদারকে ইফতার করানো বিরাট সওয়াবের কাজ হিসেবে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ হযরত যায়েদ ইবনে খালিদ আল জুহানী হতে বর্ণনা করেছেন- তিনি বলেছেন, হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) বলেছেন, যে লোক একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তাঁর জন্য সেই রোজাদারের মতই সওয়াব লেখা হবে। কিন্তু তাতে মূল রোজাদারের শুভ প্রতিফলন হতে এক বিন্দু কম করা হবে না। হযরত সালমান ফার্সী (রা:) বর্ণিত হাদীসটিতে রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর এই কথাটি অধিকতর বলিষ্ঠ ভাষায় ব্যক্ত হয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, এই মাসে রোজাদারকে যে ব্যক্তি ইফতার করাবে তার ঐ ইফতার করাবার কারণে তার গুনাহ মাফ করা হয়। সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে। এবং  রোজাদার রোজার জন্য যে পরিমাণ সওয়াব পায় ঐ ব্যক্তিও সে পরিমাণ সওয়াব লাভ করে কিন্তু তাতে  রোজাদারের সওয়াব একটুও কম হয় না। এ কথার পর নবী করীম (সাঃ) এর নিকট প্রশ্ন করা হয়- ইফতার করাবার মত যার কিছুই নাই, সে কি করবে? তিনি বললেন- সে এক মুঠি খাবার দিয়ে ইফতার করাবে। এক লোকমা রুটি বা খাদ্য না থাকলে কি করা যাবে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন- দুধ দিয়ে ইফতার করাবে। আর ইহাও না থাকলে “পানি দিয়েই  রোজা খোলাবে।” শুনে রাখ রোজাদারকে যদি কোন মুমিন পরিতৃপ্ত করে খাওয়ায় তবে তাকে আল্লাহ আমার হাউজ থেকে এমনভাবে পান করাবেন যে, সে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত মোটেই পিপাসার্ত হবে না। ইবনে মাযাহ ও তারাবানীর অপর রেওয়াতে হযরত সালমান ফার্সী (রাঃ) হতে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে ইফতার করানোর ফযিলত আরো ফুঁটে উঠে। বর্ণিত হয়েছেঃ যে লোক কোন  রোজাদারকে কিছু হালাল জিনিস দিয়েও পানি পান করিয়ে ইফতার করায়, ফেরেশতাগণ রমযান মাসের সমস্ত সময় ধরে তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং জিব্রাঈল (আঃ) কদর রাত্রিতে তার জন্য রহমতের দোয়া করেন।

শরিয়তের নির্দেশ মতো ইফতার করলে এতে যথেষ্ট কল্যাণ নিহিত আছে। এ সময় আল্লাহর কাছে বান্দাহর দোয়া কবুল হওয়ার উত্তম সময়। ইফতার যে কোনো মিষ্টিদ্রব্য দিয়ে করা উচিত। রমজান মাসে রাসুল (সা.) মাগরিবের আজান হলে কয়েকটি ভেজা খেজুরের মাধ্যমে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে সাধারণ শুকনো খেজুর খেতেন। এর ব্যতিক্রম হলে সামান্য পানি-ই ছিল রসুল (সা.)-এর ইফতার। সুতরাং, এসব সামগ্রী দিয়ে নবী (সা.)-এর মতো আড়ম্বরহীন ইফতার হওয়া উচিত। যদি এসব কারো কাছে না থাকে, যে কোনো প্রকার হালাল খাদ্যই হচ্ছে ইফতার। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসূলে করিম (সা.) প্রতিটি রোজার মাঝরাতে পানাহার, ইফতার বর্জনকে নিষেধ করেছেন। তখন একজন লোক আরজ করে বলল, ওহে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি যে এমনটি করেন। উত্তরে হুজুর (সা.) বললেন, তোমরা আমার মতো কে আছ? হ্যাঁ, সত্যি আমি ওই রকম রোজা রাখি। কেননা, আমার দয়াময় আল্লাহ আমাকে খাওয়ান আর পানও করান।’ সুতরাং, এই হাদিস থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, ইফতার রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এর সুষ্ঠুতার মধ্যে সিয়ামের পূর্ণতা নির্ভর করে।

রমযান মাসে সিয়াম পালনের অর্থ হচ্ছে শুধু দিনের বেলা খাবার পরিহার নয়, বরং নিজেকে বিভিন্ন প্রকার পাপাচার থেকে বিরত রাখার অঙ্গীকার। রোজা সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই প্রতিদান প্রদানের অঙ্গীকারবদ্ধ। আল্লাহর কাছে তার প্রিয় বান্দা সহজে পৌঁছার বড় মাধ্যমই হলো রোজা। রোজা পালনের ফজিলত ও প্রতিদান দেন আল্লাহ নিজেই। অন্য সব আমলের সওয়াব ফেরেশতাদের মাধ্যমে পৌঁছান কিংবা আমলের সওয়াব পূর্বনির্ধারিত থাকে। কিন্তু রোজাই একমাত্র আমল, যার সওয়াব আল্লাহ নিজেই দান করবেন। কেননা, মানুষ সব আমল তার নিজের জন্য করে আর রোজা আল্লাহর জন্য। মানুষের সিয়াম সাধনা জগতের মালিকের জন্য। আল্লাহর কথা প্রিয় নবীর কণ্ঠে ঘোষিত হয়েছে, ‘সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশগুণ’ (বুখারী)।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ