শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বোধোদয় হোক তবে

মাইমুনা সুলতানা : ॥ পূর্বপ্রকাশিতের পর ॥
কুরআনের বিবরণ অনুযায়ী মাদয়ান ও আইকাবাসীদের ধ্বংসের মূল কারণ ছিল- বেইনসাফ, ওজনে কম দেয়া ও অপরের অধিকার হরণ করা।
“আর মাদয়ানবাসীদের কাছে আমি তাদের ভাই শো’য়াইবকে পাঠালাম। সে বললো, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। আর মাপে ও ওজনে কম করো না। আজ আমি তোমাদের ভালো অবস্থায় দেখছি, কিন্তু আমার ভয় হয় কাল তোমাদের উপর এমন দিন আসবে যার আযাব সবাইকে ঘেরাও করে ফেলবে। আর হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! যথাযথ ইনসাফ সহকারে মাপো ও ওজন করো এবং লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য সামগ্রী কম দিয়ো না। আর পৃথিবীতে বিপর্যয় ছড়িয়ে বেড়িয়ো না। আল্লাহর দেয়া উদ্বৃত্ত তোমাদের জন্য ভালো যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো। মোটকথা আমি তোমাদের উপর কোন কর্ম তত্ত্বাবধানকারী নই। তারা জবাব দিল, হে শো’য়াইব! তোমার নামায কি তোমাকে একথা শেখায় যে, আমরা এমন সমস্ত মাবুদকে পরিত্যাগ করবো যাদেরকে আমাদের বাপ-দাদারা পূজা করতো? অথবা নিজেদের ধন সম্পদ থেকে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী খরচ করার ইখতিয়ার আমাদের থাকবে না? ব্যস, শুধু তুমিই রয়ে গেছো উচ্চ হৃদয়ের অধিকারী ও সদাচারী!” (সূরা হুদ, ১১: ৮৪-৮৭) “তারা বললো, হে শো’য়াইব! তোমার অনেক কথাই তো আমরা বুঝতে পারি না। আর আমরা দেখছি তুমি আমাদের মধ্যে একজন দুর্বল ব্যক্তি। তোমার ভ্রাতৃগোষ্ঠী না থাকলে আমরা কবেই তোমাকে পাথর নিক্ষেপে মেরে ফেলতাম। আমাদের উপর প্রবল হবার মতো ক্ষমতা তোমার নেই।” (১১:৯১) “শেষ পর্যন্ত যখন আমার ফায়সালার সময় এসে গেলো তখন আমি নিজের রহমতের সাহাযে শো’য়াইব ও তার সাথী মু’মীনদেরকে উদ্ধার করলাম। আর যারা জুলুম করেছিল একটি প্রচন্ড আওয়াজ তাদেরকে এমনভাবে পাকড়াও করলো যে, নিজেদের আবাসভূমিতে তারা নির্জীব নিস্পন্দের মতো পড়ে রইলো, যেন তারা সেখানে কোনদিন বসবাসই করতো না। শোন, মাদয়ানবাসীরাও দূরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে যেমন সামূদ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল।” (১১:৯৪-৯৫)
মূসা (আ) এর জাতি : মূসা আ এর সময়কার ঘটনাগুলো হলো ফেরাউন কেন্দ্রিক। ফেরাউন কোন ব্যক্তির নাম নয়। বরং এটি হলো তৎকালীন মিশরের সম্রাটদের উপাধি। ক্বিবতি বংশীয় এই সম্রাটগণ কয়েক শতাব্দীব্যাপী মিশর শাসন করে। হযরত মূসা আ এর সময়ে পরপর দু’জন ফেরাউন ছিল। সবসম্মত ইসরাঈলী বর্ণনাও হলো এটাই এবং তিনি দু’জনেরই সাক্ষাত লাভ করেন। প্রথম উৎপীড়ক ফেরাউনের নাম ছিল রেমেসিস-২ আর ডুবে মরা ফেরাউন হলো তার পুত্র মানেপতাহ বা মারনেপতাহ। লোহিত সাগর সংলগ্ন তিক্ত হরদে সে সসৈন্য ডুবে মরে। সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম সাগরতীরে যেখানে ফেরাউনের লাশ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, আজও জায়গাটি অপরিবতীত আছে। বর্তমানে এ জায়গার নাম জাবালে ফেরাউন বা ফেরাউনের পর্বত।
কুরআনে অত্যাচারী ও খোদাদ্রোহী শাসক হিসেবে সর্বাগ্রে ফেরাউনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার সম্পর্কে কুরআনের প্রায় ২৭ টি সূরায় ৭৫ টি স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। কুরআনের ভাষ্যমতে, ফেরাউনের খোদায়ীর দাবী ও মানুষের উপর সীমাহীন জুলুম নির্যাতনের কারণে তাকে ধ্বংস করা হয়েছে।
“আমি মূসা ও ফেরাউনের কিছু যথাযথ বৃত্তান্ত তোমাকে শুনাচ্ছি এমনসব লোকদের সুবিধার্থে যারা ঈমান আনে। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে ফেরাউন পৃথিবীতে বিদ্রোহ করে এবং তার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়। তাদের মধ্য থেকে একটি দলকে সে লাঞ্ছিত করতো, তাদের ছেলেদের হত্যা করতো এবং মেয়েদের জীবিত রাখতো। আসলে সে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।” (সূরা কাসাস, ২৮:৩-৪) “আর ফেরাউন বললো, হে সভাসদবগ! আমি নিজেকে ছাড়া তোমাদের আর কোন প্রভু আছে বলে জানি না। ওহে হামান! আমার জন্য ইট পুড়িয়ে একটি উঁচু প্রাসাদ তৈরী করো, হয়তো তাতে উঠে আমি মূসার প্রভুকে দেখতে পাবো। আমি তো তাকে মিথ্যুক মনে করি। সে এবং তার সৈন্যরা পৃথিবীতে কোন সত্য ছাড়াই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করলো এবং মনে করলো তাদের কখনো আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। শেষে আমি তাকে এবং তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এখন এ জালেমদের পরিণতি কী হয়েছে দেখে নাও।” (২৮:৩৮-৪০) মানুষের সামনে নিদর্শন হিসেবে পেশ করার জন্য ফেরাউনের লাশটাকে আল্লাহ নিজেই সংরক্ষণ করেছেন। আল্লাহর ভাষায়- “এখন তো আমি কেবল তোমার লাশটাকেই রক্ষা করবো যাতে তুমি পরবর্তীদের জন্য শিক্ষণীয় নিদর্শন হয়ে থাকো। যদিও অনেক মানুষ এমন আছে যারা আমার নিদর্শনসমূহ থেকে উদাসীন।” (সূরা ইউনুস, ১০:৯২)
আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে উপরোক্ত কুরানিক বর্ণনার আলোকে এবার আমাদের একটু আত্মপর্যালোচনা করা প্রয়োজন। একটু ভেবে দেখুন তো যে সকল কারণে পূর্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে আল্লাহ আযাবের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করেছিলেন সেই পাপগুলো থেকে আমাদের বর্তমান আধুনিক সভ্যতা কী কোন অংশে মুক্ত আছে? নাকি আমাদের উত্তরাধুনিক পৃথিবী স্বীয় যোগ্যতাবলে পাপিষ্ঠতায় আরো অত্যধিক প্রাগ্রসর? প্রতিটি সচেতন বিবেক নিঃসন্দেহে এ সাক্ষ্যই দেবে যে, পাপাচারিতার নিত্যনতুন কৌশলে বর্তমান পৃথিবী অতীতের যে কোন জাতিকে ছাড়িয়ে গেছে। তাহলে আমরা এ ব্যাপারে কিভাবে এতটা নিশ্চিন্ত হলাম যে, সবশক্তিমান স্রষ্টাও নব নব প্রক্রিয়ায় আমাদেরকে শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবেন না? আল্লাহ নিজেই বলছেন, “জালিমরা যা করছে সে ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে করো না।” (সূরা ইব্রাহীম:৪২)
তাই মানবজাতিকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান ভোগ করানোর ব্যাপারে আল্লাহর চিরন্তন নীতিগুলোর সাথে পৃথিবীর চলমান সংকটগুলোকে মিলিয়ে দেখা খুব খুব প্রয়োজন। আমরা যদি সাম্প্রতিক সময়ের কথাই চিন্তা করি, এই তো গত বছরেই বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ পৃথিবীকে দারুণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বিশ্বের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত আমাজনের বিশাল অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, অস্ট্রেলিয়াকে গ্রাস করে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় তীব্র দাবানলে চরম বিপর্যয় তৈরি হয়, জাপান ও ভারতে তীব্র দাবদাহে অনেক লোক মারা যায়, ভারত ও বাংলাদেশের কিছু অংশে আঘাত হানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণি, চীন ও জাপানে টাইফুনের আঘাতে অনেক অঞ্চল লণ্ডভণ্ড ও প্লাবিত হয়ে যায়, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইদাইয়ের আঘাতে ব্যাপক মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি হয়। এগুলো তো গত বছরের বিপর্যয়ের কিছু চিত্র। বর্তমানে আমরা যে ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা তো পুরো বিশ্বকে প্রকম্পিত করে দিয়েছে। গত বছরের শেষ নাগাদ চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা’র ভয়াবহ থাবা অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সমগ্র বিশ্বের ব্যবস্থাপনাকে ওলট-পালট করে দিয়ে পৃথিবীকে কার্যত একটি কারাগারে পরিণত করে দিয়েছে। করোনা’র নির্মম হানায় এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রাণ হারিয়েছে ৩০ হাজারের বেশী মানুষ। সেই সাথে অনেক দেশে এখনো পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও এখন চরম হুমকীর সম্মুখীন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতা সত্ত্বেও করোনা মোকাবিলায় মানুষ ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। একটা ক্ষুদ্র অণুজীবের কাছে উন্নত মনুষ্যজাতি একেবারে অসহায় হয়ে গেছে। পাশাপাশি আফ্রিকা মহাদেশ হয়ে বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়া পঙ্গপালের আক্রমণেও মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে এসব পঙ্গপালের ১০ লাখের একটি ঝাঁক একদিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। যার ফলে বিশ্বে বড় ধরণের খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এমনকি ১০ ভাগের ১ ভাগ মানুষের বেঁচে থাকার মতো খাবারের অভাব দেখা দিকে পারে। এগুলো মোকাবেলায়ও মানুষ তেমন কিছুই করতে পারছে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষের সাধ্য নেই প্রকৃতির বিচার থেকে আত্মরক্ষা করার।
পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী বেড়ে গেছে। সীমিত আকারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিময় মনে করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ের বিপর্যয়গুলোকে সেই স্বাভাবিকতার মধ্যে ফেলা যায় না। এটাই আমাদের ভাববার বিষয়। এগুলো কি তাহলে আমাদের কর্মফল নয়? বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের অবাধ্যতায় আমরা যে লাগামহীন জীবন-যাপন করছি, এর প্রতিফল থেকে কি আমরা রেহাই পেতে পারি? যে সকল অন্যায়-অনাচারের ফলে পূববর্তী জাতিগুলোকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, সেসব কিছুতে আরও বেশী সিদ্ধহস্ত হওয়ার পরও আমাদের প্রতি স্রষ্টার অনুগ্রহ বর্ষণের চিন্তা করাটা নিছক বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়।
এবার আমাদের বর্তমান সময়ের কিছু কার্যলিপির একটা চিত্র সামনে আসা প্রয়োজন। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় যেসব অরাজকতা পরিলক্ষিত হয় সেগুলোই বিশ্বকে ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পরাশক্তিগুলোর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চাভিলাষ, ক্ষমতালিপ্সার মোহান্ধতা, সীমাহীন স্বার্থপরতা তাদেরকে একেবারে বেসামাল করে দিয়েছে। পারস্পরিক আধিপত্য বিস্তারের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় দুর্বল দেশগুলো তাদের শক্তি প্রদশনের অসহায় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মানবতার ধ্বজাধারী, মুখোশধারী উন্নত বিশ্ব সহযোগিতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে নিজেদের করায়ত্বে এনে যুগের পর যুগ শাসন, শোষণ ও নিষ্পেষণ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাদের যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায় ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ার মত উন্নত, সমৃদ্ধ আরব দেশগুলোও বিধ্বস্ত বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য মানুষ উদ্বাস্তু ও শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে। সমগ্র মুসলিম বিশে^র বিরুদ্ধে অমুসলিম জাতিগুলো একজোটে অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে অনধিকার চর্চা ও অমানবিকতার চূড়ান্ত সীমায় উপনীত হয়েছে। আর আফ্রিকার মতো অনুন্নত দেশগুলোতো তাদের কাছে ছেলের হাতের মোয়া। এককথায় পুরো বিশ্বকে নিয়ে ওরা দাবার গুটির মতো খেলছে, যার অসহায় শিকার হচ্ছে বিশে^র অগণিত নিরীহ, নিরপরাধ মানুষ। এরপরও কি এটা মনে করার সুযোগ আছে যে, স্রষ্টা এসব অন্যায়-অনাচারের নীরব দর্শক হয়েই থাকবেন? নির্যাতিত মজলুমের ফরিয়াদে সাড়া দিয়ে মানবজাতিকে তাদের কর্মফল দেখাবেন না? এমনটা কখনোই হতে পারে না, এটা আল্লাহর ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
মানবজাতির প্রতি আল্লাহর ক্রোধের কারণগুলো একটু পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। পৃথিবীব্যাপী চরম অব্যবস্থাপনার ফলে আল্লাহ প্রদত্ত অঢেল সম্পদের প্রাচুর্যতা সত্ত্বেও পৃথিবীতে অগণিত মানুষ খাদ্যাভাবে মারা যায়। ২০১৯ সালের ঋঅঙ এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সে বছর বিশে^র ৮২ কোটি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে পড়েছে এবং মারা গেছে প্রায় ৯০ লাখ। খাদ্যের অভাবে গড়ে প্রতিদিন ২৫ হাজার, প্রতি ৩ সেকেন্ডে ২ জন ও প্রতি ৫ সেকেন্ডে ১ টি শিশু মারা যায়।
বিশ্বব্যাপী মুসলিম শাসিত ও সংখ্যালঘুদের উপর যে সীমাহীন উৎপীড়ন ও দমননীতি চলে তার চিত্র সত্যিই শিউরে উঠার মতো এবং প্রতিটি সচেতন বিবেককেই তা তাড়িত করবে। ইজরাঈল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বিশে^র সবচেয়ে বেশী আলোচিত একটি ইস্যু। ইজরাঈলের দমননীতিতে অস্তিত্ব সংকটে পড়া মাজলুম ফিলিস্তিনিরা যুগ যুগ ধরে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অসংখ্য মানুষ উদ্বাস্তু ও শরণার্থী হয়ে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে গাজাবাসীরা অমানবিক দুর্ভোগের শিকার। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ইজরাঈলী অবরোধের ফলে গাজা হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার। এই এলাকাটি সবসময় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা থাকে। প্রয়োজনীয় জীবনধারণের সামগ্রীও ওদের কাছে পৌঁছাতে পারে না। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, পানি আর চিকিৎসার অভাবে কত হাজার নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছে তা হয়তো অজানাই থেকে যাবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, অবরোধের কারণে গাজায় জিডিপির ক্ষতি হয়েছে ৫০ শতাংশের বেশী। বিসিসি’র তথ্য মতে, ২০০৮ ও ২০১২ সালে দু’দফা হামলায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ শিল্প কারখানা ধ্বংস করে দেয়া হয়। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে গাজার ৩ টি হাসপাতাল ও ১০ টি মেডিকেল সেন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল। এছাড়াও ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়ত ইজরাঈল-ফিলিস্তিনী সংঘর্ষে ও ইজরাঈলী সাঁড়াশি হামলায় অনেক নিরীহ ফিলিস্তিনী প্রাণ হারায়।
চীনে উইঘর মুসলিম নির্যাতন আরেকটি কালো অধ্যায়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক একটি কমিটি ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে জানতে পারে যে, চীন সরকার উইঘুরদের স্বায়ত্ত্বশাসিত এলাকাকে মূলত একটি বন্দী শিবিরে পরিণত করেছে। সেখানে ১০ লাখের মতো মানুষকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আরও বলছে, এসব ক্যাম্পে যাদেরকে রাখা হয়েছে তাদেরকে চীনা ম্যান্ডারিন ভাষা শেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর অনুগত থাকতে। আরো বলা হচ্ছে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা করতে অথবা সেই ধর্ম পরিত্যাগ করতে। এসব ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসতে পারা কয়েকজনের সাথে বিবিসি কথা বলতে পেরেছে, তাদের কাছ থেকে নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। চীন সরকারের দাবি, তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি ইসলামপন্থী গ্রুপের সন্ত্রাসী তৎপরতা মোকাবেলা করছে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সেখানকার লোকজনের উপর চীনের দমন-পীড়নের কারণেই সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। (চলবে)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ