শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৩৫ হাজার ছাড়াল আক্রান্ত সাড়ে ৭ লাখ

* আইসোলেশনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী
* যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু লাখ ছাড়াতে পারে - ট্রাম্প
* করোনায় মারা গেলেন জাপানিজ কমেডিয়ান কেন শিমুরা
স্টাফ রিপোর্টার: মহামারি করোনা তার দাপট দেখিয়ে চলেছে। প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছে অজস্র প্রাণ। গত একদিনে নতুন করে আক্রান্ত করেছে বিশ্বের এক লাখ মানুষকে। মোট আক্রান্ত বেড়ে এখন ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬২। বিশ্বজুড়ে প্রাণহানি ৩৫ হাজার ৬ জন। এসময় সুসস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩১৭ জন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে এ সংখ্যা জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত। ভাইরাসটির কবলে পড়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণ দিতে হয়েছে ইতালিকে। সেখানে মৃত্যুর সংখ্যাটা এখন ১১ হাজার ছুঁই ছুঁই। এদিকে স্পেন আজ সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মারা গেছেন ৮৩২ জন। দেশটিতে মোট মৃত ৬ হাজার ৮০৩। চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও সেখানকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হচ্ছে ধীরে ধীরে। ভাইরাসটি প্রাদুর্ভাবের নতুন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৪১ হাজারের বেশি আক্রান্ত। করোনায় প্রাণহানিতে চীনকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে ইতালি এবং স্পেন। ইউরোপের বাকি দেশগুলোর অবস্থাও ভয়াবহ।
ভৌগলিক সীমানাকে তোয়াক্কা না করা এই ভাইরাস পৃথিবীর সব মহাদেশের মানুষকে এমন একটা অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে যে গোটা বিশ্ব এখন করোনা নিয়ে আতঙ্কিতই শুধু নয় শঙ্কিতও। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৩০০ কোটির অধিক মানুষ এখন লকডাউন বা বাংলা ভাষায় যাকে বলে ঘরবন্দি। বিশ্বের অর্থনীতির অবস্থা নাজুক। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিশাল এক অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে বিশ্ব। এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে প্রথম সারির দেশগুলোও। হাজার হাজার কোটি ডলার প্রণোদনা দিচ্ছে অনেক দেশ। তবে ভাইরাসটির কাছে এটাকেও খুব সামান্য বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্ধশতাধিক প্রথম সারির নেতা করোনায় আক্রান্ত। এশিয়ার অবস্থাও নাজুক। সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে ইরান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এশিয়াকে সতর্ক করে বলেছে, এই অঞ্চলটিও করোনা প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে, যদি সরকারগুলো আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেয়। তবে ভাইরাসটির উৎপত্তি চীনের যে প্রদেশে শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা টানা কয়েকদিন ছিল না। যারা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তারা সবাই বিদেশ ফেরত। তবে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় দফা করোনা ‘বিষ্ফোরণের’ শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আইসোলেশনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী, করোনা আক্রান্তের আশঙ্কা: মহামারি করোনা ভাইরাস ইসরাইলেও হানা দিয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আক্রান্তের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সংসদীয় উপদেষ্টা রিভকা পালুচ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত কয়েকদিন নেতানিয়াহু, নেসেট সদস্য ও অন্যান্যদের সংস্পর্শেই ছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্যা জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার স্টাফদের সাময়িকভাবে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। নেতানিয়াহুর অফিস থেকে বলা হয়েছে, ভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তারা পৃথক থাকবে। তবে আশা করা হচ্ছে নেতানিয়াহু করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেননি। এদিকে ইসরাইলি চ্যানেল টুয়েলভ সোমবার সকালে জানিয়েছিলো, নেতানিয়াহুর সংসদীয় উপদেষ্টা রিভকা পালুচের করোনা ভাইরাস পজিটিভ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে এক সপ্তাহের জন্য আইসোলেশন করা হবে।
এরপর নেতানিয়াহুর অফিস থেকে জানানো হয়, নেতানিয়াহু আইসোলেশন করার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ তিনি পালুচের সঙ্গে সাক্ষাত করেননি। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও হয়নি। ইসরাইলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, করোনা ভাইরাস নিয়ে পরবর্তী কী করা উচিত তা নিয়ে তারা পর্যালোচনা করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, নেতানিয়াহু তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সঙ্গে সমন্বয় করে চলছেন। তিনি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলি কঠোরভাবে মেনে চলছেন। বেশিরভাগ কাজ বাড়ি থেকে ভিডিওর মাধ্যমে করে চলছেন। ইসরাইলের নীল ও সাদা দলের নেতা বেনি গ্যান্টজ ও গবি আশকানাজির মতে, নেতানিয়াহু যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে তাকে ও তার স্টাফদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। এদিকে ইসরাইলে এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছেন। আর আক্রান্ত ২ হাজার ছাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু লাখ ছাড়াতে পারে - ট্রাম্প : যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে প্রাণহানি এক লাখ কিংবা তারও বেশি হতে পারে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই শঙ্কার কথা জানান তিনি। দেশটিতে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সামাজিক দূরত্ব ও ফেডারেল করোনাভাইরাস গাইডলাইনের মেয়াদ আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এর আগে মধ্য-এপ্রিলে ইস্টারের আগে দেশজুড়ে যে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে; তা শিথিল করা হতে পারে বলে আভাষ দিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুহারে পৌঁছাবে যুক্তরাষ্ট্র। করোনার সর্বোচ্চ বিস্তারের সময় দেশটির হাসপাতালগুলোতে মানুষের ঠাই পাওয়া কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এর আগে, রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ টকশোতে অংশ নিয়ে দেশটির জাতীয় অ্যালার্জি এবং সংক্রামক ব্যাধি ইনস্টিটিউটের প্রধান ডা. অ্যান্থনি ফসি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত এক থেকে দুই লাখ মানুষ মারা যেতে পারেন। আক্রান্ত হতে পারে আরও কয়েক মিলিয়ন মানুষ। সিএনএনের সঙ্গে আলাপকালে অ্যান্থনি ফসি বলেছেন, আমি বলবো এই মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ থেকে দুই লাখ মানুষ মারা যাবে। আমরা মিলিয়ন মিলিয়ন রোগী পেতে যাচ্ছি। তবে আমি এই হিসাব-নিকেশে আটকে থাকতে চাই না। কারণ মহামারিটি এখন চলমান। এটি সত্যও হতে পারে আবার ভুল প্রমাণিতও হতে পারে। হোয়াইট হাউসে করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার একমাত্র উপায়। আগামী জুনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র করোনার এই লড়াই থেকে মুক্ত হবে।
করোনায় মারা গেছেন জাপানিজ কমেডিয়ান কেন শিমুরা : জাপানিজ কমেডিয়ান কেন শিমুরা। বাংলায় ডাবিং করা অনেক ভিডিওতে তার নাম ‘কাইশ্যা’ বলে প্রচার করা হয়। এই কমেডিয়ান আর নেই। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সোমবার জাপানের ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং অর্গানাইজেশন জানায়, টোকিওর একটি হাসপাতালে রোববার (২৯ মার্চ) তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন কেন শিমুরা। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালের দিকে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন এই কমেডিয়ান। ১৯৫০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাপানের টোকিওতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিমুরার ‘বকটনো-সাম’ শট জাপানি কৌতুকাভিনেয়দের মধ্যে অস্বাভাবিক ছিল। সমসাময়িক সমাজের বর্তমান অভিভাবকদের (একটি কোম্পানির প্রেসিডেন্ট, একজন রাজনীতিবিদ, পরিবার প্রধান, স্কুল প্রিন্সিপাল, জাপানের প্রধান ইয়াকুজা গ্যাং) একটি নির্বোধ রাজার অধীনে দীর্ঘদিন দেশে বসবাসের শোতে শিমুরার আরেকটি জনপ্রিয় শট হল ‘হেনা ওজি-সান’ (একটি ঘৃণ্য বয়স্ক ব্যক্তি), যিনি নবজাতক মেয়েদের সঙ্গে নিজেকে পরিবেশন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত ১৪২০০৪, প্রাণহানি ২৪৮৪ : যুক্তরাষ্ট্রে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত কয়েকদিনে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের চেয়েও যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।
দেশটিতে নতুন করে আরও ১৮ হাজার ৪২৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার ৪ জন। অপরদিকে দেশটিতে প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান হয়ে নতুন করে আরও ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২ হাজার ৪৮৪ জন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪ হাজার ৫৫৯ জন। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২ হাজার ৯৭০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনার এই সঙ্কটের মধ্যে দেশটিকে সতর্ক করেছেন সরকারি সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফসি। এক সতর্ক বার্তায় তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসে প্রাদুর্ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত এক থেকে দুই লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। তার মতে, দেশটিতে আরও কয়েক মিলিয়ন মানুষ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। সিএনএনকে অ্যান্থনি ফসি বলেন, আমি বলব এই মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ থেকে দুই লাখ মানুষ মারা যাবে। আমরা মিলিয়ন মিলিয়ন রোগী পেতে যাচ্ছি। তবে আমি এই হিসাব-নিকেশে আটকে থাকতে চাই না। কারণ মহামারি এখন চলমান। এটি সত্যও হতে পারে আবার ভুল প্রমাণিতও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখন পর্যন করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। সেখানেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
এদিকে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে মুঠোফোনের মাধ্যমে সকল বাসিন্দাদের চলাচলের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। কোটি কোটি মানুষের মোবাইল ফোন ট্র্যাকের মাধ্যমে করোনার বিস্তার কীভাবে হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করছে দেশটির কেন্দ্রীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি), অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় সরকার মানুষের অবস্থান ও চলাচল সংক্রান্ত পাওয়া এসব তথ্য বিশ্লেষণ করছে। তাতে মানুষের গতিবিধির ওপর নজরদারি করা হচ্ছে।
স্পেনে লাশের স্তূপ, আজও প্রাণ গেল ৮১২ জনের: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে যেন লাশের স্তূপে পরিণত হয়েছে ইউরোপের দেশ স্পেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আরও ৮১২ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯। এছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ। সোমবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৮৫ হাজার ১৯৫ জনে দাঁড়িয়েছে। রোববারও এই সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ৭৯৭ জনে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশটি এখন চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে; চীনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৪৭০। নতুন করে ৮১২ জনের প্রাণহানির পর দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৪০ জনে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটির সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিলেও এর লাগাম টানতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনার প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনতে দেশটির সরকার সোমবার থেকে বেশকিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সোমবার থেকে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটির অপ্রয়োজনীয় কর্মীরা বাড়িতে অবস্থান করবেন। গত ১৪ মার্চ থেকে দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়।
একদিন আগে রোববার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত অন্তত ৮৩২ জনের প্রাণহানি ঘটে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে করোনার ভয়াবহ প্রকোপ শুরু হয়েছে ইতালি এবং স্পেনে। এই দুই দেশে আক্রান্ত এবং প্রাণহানি করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।
আমিরাতে নতুন ১০২ জন করোনায় আক্রান্ত, মোট ৫৭০ : সংযুক্ত আরব আমিরাতে নতুন করে আরও ১০২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৭০ জনে। এ ছাড়া মারা গেছেন একজন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ জন। রোববার (মার্চ ২৯) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে আমিরাতে সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭০ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন আগের দুইজনসহ মোট ৩ জন। আর নতুন তিনজনসহ ৫৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এশিয়াকে সতর্ক করে বলেছে, এই অঞ্চলটিও করোনা প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে, যদি সরকারগুলো আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেয়। তবে ভাইরাসটির উৎপত্তি চীনের যে প্রদেশে শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা টানা কয়েকদিন ছিল না। যারা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তারা সবাই বিদেশ ফেরত। তবে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় দফা করোনা ‘বিস্ফোরণের’ শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে আরও একজনের মৃত্যু : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার গভীর রাতে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৩ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ২৬ মার্চ তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হন। এই নারীর বাড়ি দার্জিলিংয়ে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দুইজনে পৌঁছেছে। প্রথম মৃত্যু হয়েছিল কলকাতার দমদমের বেসরকারি একটি হাসপাতালে। প্রবীণ এক নাগরিক মারা যান। কলকাতার বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে প্রথম ভর্তি তিনজন রোগীর সর্বশেষ রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় রোববার স্বস্তি ফিরে এসেছিল চিকিৎসকদের মধ্যে। তাদের মনে হয়েছিল যে চিকিৎসায় সাড়া মিলেছে। তাদের লক্ষ্য ছিল, এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৭ জন রোগীর চিকিৎসা তারা এগিয়ে নিতে পারবেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও তিনজন রোগীর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তবু তারা মনে করছেন, তাদের চিকিৎসাপদ্ধতি রোগীদের সুস্থ করে তুলতে পারবে।
সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১। মৃত মানুষের সংখ্যা ২। অন্যদিকে ভারতে বেড়েছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। এখন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৯ জন। মারা গেছে ২৭ জন। দেশব্যাপী লকডাউনে যারা সাড়া দিচ্ছে না, সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। রোববার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের বিকল্প নেই। এই লকডাউনকে যেকোনো মূল্যে সফল করতে হবে।
ভারতের আন্তরাজ্য সীমানা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আন্তরাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অবাধ যাতায়াত থাকবে। আর লকডাউনের কারণে গোটা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শ্রমিকদের আর সেই রাজ্য ছেড়ে কষ্ট করে নিজের রাজ্যে ঢুকতে হবে না। নিজ নিজ রাজ্যে শ্রমিকদের ক্যাম্প করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার পরিস্থিতি ঠিক হলে তাদের নিজ নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আন্তরাজ্য সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় পশ্চিমবঙ্গে কার্যত বন্ধ রাখা হয়েছে আন্তরাজ্য সীমান্ত। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গাড়ি মুক্ত রাখা হয়েছে তালিকা থেকে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে রয়েছে ওডিশা, বিহার, ঝাড়খন্ড, সিকিম, ভুটান এবং নেপালের সীমান্ত। অন্যদিকে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তীর্ণ স্থল ও নৌসীমান্ত। করোনাভাইরাস আক্রমণের পর এবার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের এবং নেপাল ও ভুটান সীমান্তের কড়া নজরদারি শুরু করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তারাও গোটা সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। বিশেষ করে যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই এবং নৌসীমান্ত রয়েছে, সেখানে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। শুরু হয়েছে ত্রিস্তরীয় নজরদারি। বিএসএফের ডিআইজি কুণাল মজুমদার বলেছেন, ‘আমরা সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছি। এখন সীমান্তে বন্ধ হয়ে গেছে চোরাচালান। আমরা চাইছি করোনা যেন আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে। এ জন্য বাড়তি বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।' ২২৮ কিলোমিটার হেঁটে অবশেষে ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মধ্যপ্রদেশের শ্রমিক ৩৮ বছরের রণবীর সিং।
দিল্লির হোটেলে কাজ করতেন তিনি। লকডাউনের জেরে হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি বাড়ি ফিরতে দিল্লি থেকে হাঁটতে শুরু করেন। রণবীরের বাড়ি মধ্যপ্রদেশের মোরেলা জেলার বডফরা গ্রামে। ২২৮ কিলোমিটার আসার পর আগ্রার সিকান্দারার কৈলাস মোড়ে অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। আর যেতে পারেননি ১২৪ কিলোমিটার দূরের নিজের গ্রামে। সংবাদমাধ্যম বলেছে, এভাবে বিভিন্ন রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা নিজ রাজ্যে হেঁটে যাওয়ার পথে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ শিশুও রয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ