শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মাচা ছাড়াই চাষাবাদ হচ্ছে বরবটি

 

খুলনা অফিস: করোনা আতঙ্কের মধ্যেও স্বপ্ন বুনে যাচ্ছে বাংলার কৃষকরা। যার দৃষ্টান্ত দেখা যায় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা হতে সাতক্ষীরা রোডের দুই পাশে। নজর কাড়ে সবুজের সমারোহ। মনে হয়, এ যেন পল্লী কবির নকশী কাঁথার মাঠ।

খুলনা-সাতক্ষীরা রোডে ডুমুরিয়া উপজেলা হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার গেলে বরাতিয়া গ্রাম। এ এলাকার অধিকাংশ কৃষকই খাট জাতের বরবটির চাষাবাদ করে। দেশের এই সঙ্কটাপন্ন সময়ে করোনা আতঙ্কের মধ্যে নিজের সুরক্ষা মেনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষি কাজে। সকাল থেকে কেউবা আগাছা পরিষ্কার, কেউবা ক্ষেতের অতিরিক্ত ডগা ছাঁটাই, আবার কেউবা ব্যস্ত ফসল উত্তোলনে। এ উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের প্রগতিশীল উচ্চ শিক্ষিত কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক। তিনি এ বছর এক বিঘা জমিতে খাট জাতের বরবটি চাষাবাদ করেছেন। তারা আগে মাঁচায় বা বানে লম্বা জাতের বরবটি চাষ করতেন। খরচ বেশি হলেও লাভের দেখা মিলতো কম। 

তিনি জানান, ২০১৪ সালে শ্বশুরবাড়ি সাতক্ষীরা যাই। সেখানে খাট জাতের বরবটি দেখতে পাই। কিছু বীজ নিয়ে এসে আমার নিজের জমিতে বপন করি। ফলন ভালো ছিল। বর্তমানে বরাতিয়ার অনেক কৃষকই এ জাতের বরবটি চাষাবাদ করছে। এবার এক বিঘা জমিতে এটি চাষাবাদ করতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। রোপণের পর ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে খরচ উঠে লাভ হয়েছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। ঝুঁকি কম। খাট জাতের এ গাছের বান বা মাচা লাগেনা। সপ্তাহে দু’বার করে বরবটি ওঠানো হয়। এটি একটি।

একই গ্রামের আরেক কৃষক রামকৃষ্ণ মল্লিক জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার ১বিঘা জমিতে জৈব উপায়ে অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ১০ কেজি টিএসপি, ১০ কেজি এমপি এবং ১৫০ কেজি কেঁচো সার দিয়ে চাষাবাদ করেছি। বালাইনাশক হিসেবে মেহগনির তেল ও ট্রাইকো কম্পোস্ট ব্যবহার করছি। এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা বিক্রয় করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে আরও ৫০-৬০ হাজার টাকা বিক্রয় করতে পারবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, এটি একটি উচ্চ মূল্যের ফসল। ১ বিঘা জমি থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রয় করা যায়। বরবটিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-১, বি-২, সি, ক্যালসিয়াম, ডি, এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বরবটিতে এন্টি ক্যান্সার উপাদানও রয়েছে। এটি একটি নাইট্রোজেন ফিক্সিং ক্রপ। যা বাতাস থেকে নাইট্রোজেন নিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। ফলে পরবর্তী ফসলে ১৫-২০ শতাংশ ইউরিয়া সার কম লাগে। তিনি আরও জানান, এবছর এ উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে খাট জাতের বরবটি চাষাবাদ হয়েছে। এটি সম্প্রসারণে আমরা কৃষককে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। মাঠে গিয়ে কৃষকের পাশে থেকে তাদের নিয়মিত পরামর্শও দিচ্ছি।

এ ব্যাপারে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, খুলনা অঞ্চলের সবজি ভা-ার ডুমুরিয়া। বর্তমানে এ উপজেলায় বরবটিসহ সকল সবজি সম্প্রসারণে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। খাট জাতের বরবটি করতে মাচা খরচ লাগেনা। ফলে কমে খরচে কৃষক বেশি লাভবান হতে পারে এ জাতের বরবটি চাষাবাদ করে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ