মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

করোনা আতঙ্কে খুমেক হাসপাতাল রোগী শূন্য

খুলনা অফিস : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল রোগী শূন্য হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে একজনের মৃত্যুর পর রোগীরা হাসপাতাল ছেড়েছেন। এছাড়া সম্পূর্ণ হাসপাতালটিকে করোনা ইউনিট করার ঘোষণা দিয়ে কর্তৃপক্ষও কোনও নতুন রোগী ভর্তিও করছেন না।
জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে খুমেক হাসপাতালে প্রায় দেড় হাজার ভর্তি রোগী ভর্তি থাকে। সেখানে ২৫ মার্চ ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২৮০ জন। ৫০০ শষ্যার এ হাসপাতালে এখন অর্ধেক বেডই খালি। আর ২৬ মার্চের মৃত্যুর ঘটনার পর ২৭ মার্চ পুরো হাসপাতালই রোগী শূন্য হয়ে গেছে।
এদিকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালেও রোগী ভর্তি কমে গেছে। খুলনার উপজেলাগুলোতেও সাধারণ রোগের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের হার ৩০ ভাগে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, এখানে করোনার প্রভাবে দিনকে দিন রোগী ভর্তি কমে গেছে। ২৬ মার্চ এক রোগীর মৃত্যুর পর ডাক্তার নার্সসহ ১৬ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়। এরপর হাসপাতাল রোগী শূন্য হয়ে যায়। আর এ হাসপাতালটিকে করোনা ওয়ার্ড করার পরিকল্পনা নেয়ার কারণে নতুন করে রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছিল না।
খুমেক হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সিনিয়র স্টাফ নার্স রমা রানী দাশ বলেন, করোনার প্রভাবে রোগী কমতে কমতে ২৫ মার্চ দুপুরে মাত্র ১০ জন ছিল। ২৬ মার্চ রাতে সবাই নিজ দায়িত্বে চলে যেতে চায়। তখন তাদেরকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দেওয়া হয়।
খুমেক হাসপাতালের ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মোস্তফা কামাল পাশার (৭০) স্ত্রী পারুল বেগম বলেন, সোমবার এখানে তার স্বামীকে ভর্তি করানো হয়েছে। স্ট্রোক করার পর তাকে পিরোজপুর থেকে এখানে আনা হয়েছে। তিনদিনেও তার জ্ঞান ফেরেনি। তবে হাসপাতালে একজনের মৃত্যুর পর আতঙ্ক দেখা দেয়। এ কারণে তারা হাসপাতাল ছেড়েছেন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, খুলনার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে রোগী ভর্তির হার ৩০ ভাগে নেমে এসেছে। এখন করোনার প্রভাবের কারণে অন্যান্য রোগী হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছেন না। খুলনা জেনারেল হাসপাতালের ২৫০টি বেডের ৭০ ভাগি এখন খালি থাকছে। উপজেলা পর্যায়ে এখন সব হাসপাতালেই ৫০ বেডের। কিন্তু সেখানেও সিট খালি থাকছে। তবে, ফোনে পরামর্শ গ্রহণের হার বেড়েছে। জেলা ও উপজেলার জন্য ১০ চিকিৎসক ও টিম এ জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
তিনি বলেন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালটিকে করোনা কোয়ারেন্টিন ইউনিট করার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে এখানে নতুন রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না।
হোম কোয়ারেন্টিনে ১৭২৬, আইসোলেশনে ৫ : খুলনায় এখন পর্যন্ত বিদেশফেরত ১ হাজার ৭২৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এছাড়া করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ৫ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১১৯ জনকে। শুক্রবার সকাল ১০টায় খুলনা সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়। কোয়ারেন্টিনে যাদের রাখা হয়েছে তারা সম্প্রতি ভারত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, ইতালি, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন।
সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানান, বিদেশফেরত ব্যক্তিদের নিজ নিজ বাড়িতে থাকতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। তারপরও অন্তত ১৪ দিন তাদের বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
‘এছাড়াও যাদের শরীরে জ্বর, সর্দি-কাশি রয়েছে তাদেরকে আক্রান্ত সন্দেহে খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।’ হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের মধ্যে রয়েছেন খুলনার দাকোপে ৯৫ জন, বটিয়াঘাটায় ৮৬ জন, রূপসায় ১০৬ জন, তেরখাদায় ৩২ জন, দিঘলিয়ায় ৫২ জন, ফুলতলায় ৬১ জন, ডুমুরিয়ায় ৭৮ জন, পাইকগাছায় ১২২ জন, কয়রায় ২০৬ জন, খুলনা মহানগরীর ৮৮৮ জন।
অন্যদিকে ছাড়পত্র পেয়েছেন দাকোপের ১৫ জন, বটিয়াঘাটায় ১১ জন, রূপসায় ১১ জন, পাইকগাছায় ৩২ জন, কয়রায় ৩৫ জন, দিঘলিয়ার ৬ জন, তেরখাদার ৪ জন ও খুলনা মহানগরীর ৫ জন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে আরও একজন পুরুষকে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে এ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে পাঁচ জন ভর্তি হলেন।
এ ইউনিটের প্রধান ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, সকালে মেহেরপুর জেলার গাঙনী থেকে ৩৫ বছরের একজন পুরুষকে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আসেন।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘খুলনায় নতুন ১১৫ জন হোম কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট ১৭২৬ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।’ এর আগে ঢাকায় এক করোনা আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে একই হাসপাতালে থাকা এক ব্যক্তি খুলনায় এসে মারা গেছেন। তার করোনা ছিল কিনা জানতে নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
করোনা পরীক্ষায় খুলনার তিন জনের স্যাম্পল পাঠানো হলো ঢাকায় : করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য খুলনা থেকে তিন জনের স্যাম্পল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে মৃত ব্যক্তির স্যাম্পলও রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট প্রধান ডা. শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর স্থানীয়ভাবে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনজনের স্যাম্পল সংগ্রহ ও লোক মারফত তা ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই তথ্য জানা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, মৃত মোস্তাহিদুরের স্যাম্পল সংগ্রহের পর তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি চার জনের মধ্যে পুলিশ সদস্য ও শিক্ষিকার স্যাম্পলও সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
তিন দিনের মধ্যে আসবে করোনা শনাক্তের মেশিন : করোনা শনাক্ত করার সুবিধার্থে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে আসছে পিসিআর মেশিন। এ মেশিন স্থাপনের জন্য কক্ষ নির্ধারণ করা হচ্ছে। পিসিআর মেশিনটি আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে খুলনা পৌঁছাতে পারে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, ‘পিসিআর মেশিনটি স্থাপনের জন্য কক্ষটি দেবে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সে লক্ষ্যে কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ