ছেলের চিকিৎসা নিতে এসে
চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা: যশোরের চৌগাছা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে এসে চিকিৎসক-কর্মচারিদের হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে পুলিশের সহায়তায় হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে আব্দুর রাজ্জাক (৫০) ও তার ছেলে গোলাম রসুল (১৮)। আহতরা উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার সকাল ১১ টায় চৌগাছা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। পরে চৌগাছা থানা পুলিশের সহযোগিতায় বাপ-ছেলে দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। আহত বাবা আব্দুর রাজ্জাকের মাথায় সেলাই-ব্যান্ডেজ বাঁধতে হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানান, বুধবার সকালে আব্দুর রাজ্জাক তার অসুস্থ ছেলে গোলাম রসুলকে নিয়ে চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে টিকিট সংগ্রহের সময় রোগিরা তাদের পছন্দমত চিকিৎসক দেখাতে চান। এসময় রোগিদের পছন্দমত ডাক্তার দেখানো যাবেনা বলে টিকিট দেয়ার দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের রাধূনী (কুক) টিটো হোসেন অপারগতা প্রকাশ করে এবং রোগিদের গালমন্দ করে। প্রতিবাদ করলে কাউন্টারে থাকা টিটো ছেলের সামনেই বাবা আব্দুর রাজ্জাকের মুখে একটি চড় মারে। এতে অসুস্থ ছেলে গোলাম রসুল ক্ষীপ্ত হয়ে টিটোর দিকে চড়াও হয়। এসময় টিটো চেয়ার থেকে উঠে বাপ-ছেলেকে বেধড়ক পিটাতে থাকে। এক পর্যায়ে মারপিট করতে করতে তাদের হাসপাতালের ৪১ নং রুমে দায়িত্বপালনরত মেডিকেল অফিসার উত্তম কুমারের রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে পিটাতে থাকে। এসময় টিটোর সাথে মারপিটে হাসপাতালের অন্য একাধিক ষ্টাফ, এমনকি ডাক্তার উত্তম কুমার এবং ডাক্তার তৌহিদও অংশ নেয়। তার বাবা-ছেলেকে বেধড়ক মারপিট করে আব্দুর রাজ্জাকের মাথা ফাটিয়ে দেয়। ঘটনার সময় জাহিদুল ইসলাম নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী মুঠোফোনে স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন সাংবাদিক হাসপাতালে যান। এসময় আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান (৪৮) সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন “হাসপাতালের স্টাফদের ব্যবহার মোটেও ভাল না। আজও বিনা কারনেই ডাক্তার-ষ্টাফ মিলেই বাপ-ছেলেকে এভাবে পিটিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফ জানিয়েছেন কুক টিটো প্রায় সময়ই রোগিদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে। কুক হয়েও টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পেয়ে সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রোগিকে মারপিট করেছেন কেন জানতে চাইলে অভিযুক্ত কুক টিটো হোসেন ঘটনা অস্বীকার বলেন রোগিরাই আমাকে মেরেছে। আপনি বাপ-ছেলেকে কোন রুমে আটটে রেখেছিলেন প্রশ্ন করলে টিটো বলে ফেলেন উত্তম স্যারের রুমে। আবারো জিজ্ঞাসা করলে বলেন ৪২ নম্বার রুমে। তাহলে আপনারা সকলেই মেরেছেন প্রশ্নে আর কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকেন টিটো। চৌগাছা উপজোলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা.লুৎফুন্নাহার বলেন, আমি অফিসে ছিলাম। নিচে ঝামেলা হচ্ছে শুনে গিয়ে দেখি সবকিছু থেমে গেছে। আপনার ডাক্তার-ষ্টাফরা রোগিদের মারপিট করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাতাহাতি হয়েছে শুনেছি। তবে তাদের রুমে আটকিয়ে মারা হয়েছে কিনা আমি জানিনা। অভিযুক্ত মেডিকেল অফিসার উত্তম কুমার বলেন, ঝামেলা দেখে আমি রুমের পাশেই ছিলাম। আমি মারিনি। তবে বক্তব্য নেয়ার জন্য ডাক্তার তৌহিদকে আর হাসপাতালেই পাওয়া যায় নি। তার মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। সত্যিই যদি সেবা নিতে আসা রোগিদের আহত করা হয়, তাহলে ন্যাক্কারজনক ঘটনাই ঘটেছে। ঘটনার পরই হাসপাতালে উপস্থিত হন চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান। ডা. লুৎফুন্নাহারের রুমে তাকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, পক্ষপাতিত্ব না করে ঘটনার সত্যতা তুলে ধরুন। পরে তিনি ওই রোগিদের সাথে কথা বলেন। চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এমন ঘটনার সংবাদ পেয়ে অফিসারদের হাসপাতালে পাঠিয়ে ছিলাম। তারা আহতদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে এসেছেন। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।