শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আক্রমণ থেকে বাঁচতে আমাদের করণীয়

ডাঃ মোঃ মুহিব্বুল্লাহ : রোগ নয় রোগী আমাদের আপন। এজন্য রোগী থেকে দুরত্বে না থেকে বিপদে তার সেবা শুশ্রুষার পাশাপাশি রোগের সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার জন্যেও চালাতে হবে সর্বাত্মক সংগ্রাম। কেননা রোগ কোনো মানুষেরই বন্ধু না। সে সবাইকেই পীড়া দেয় এবং সমান প্রাণঘাতকও বটে। এখন আমার স্বজনকে যেমন কষ্ট দিচ্ছে সে আমার শরীরে সংক্রামিত হলে আমাকেও সেই কষ্ট থেকে রেহাই দিবেনা। তাইতো স্বজনকে কষ্টের হাত থেকে মুক্তি দিতে তার সেবাকে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি সে রোগ যেন আমাকে, প্রতিবেশী ও তামাম জাতিকে আক্রমণ করতে না পারে সেদিকে রাখতে হবে সজাগ দৃষ্টি ও থাকতে হবে সর্বাধিক সতর্কতাবলম্বী হয়ে। তবে নবেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবার ব্যাপারে আমাদের যা মনে রাখা দরকার তা হলো এ ভাইরাসটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। যা রোগীর হাঁচি ,কাশি ,ঘাম ও মল-মুত্রের বাষ্প কনিকা বা আর্দ্রতা থেকেই বেশী সংক্রমিত হয়। এজন্য রোগীর হাঁচি, কাশি ও ঘাম থেকে অন্যদেরকে রক্ষা করতে রোগীকে হাঁচি বা কাশি দিতে মুখে কাপড় ব্যবহার করতে পরামর্শ দিতে হবে। মুসাফাহা বা করমর্দন করতে গেলেও মোজা ব্যবহার করা ভালো।
তবে রোগীর সংস্পর্শ থেকে এসে তাড়াতাড়ি সাবান বা পরিষ্কারক দ্বারা হাত ধুয়ে নিতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বিছানা, পরিধেয় বস্ত্রাদি ও খাবারের বাসনপত্র আলাদা করা ভালো। অনেক মানুষের ঘর্ম ও নি:শ্বাসের আর্দ্র স্থান যেমন বাজার বা সমাবেশ জাতীয় মিলনকেন্দ্র থেকে দূরে থাকাও জরুরী। কওমি মাদ্রাসা এবং গার্মেন্টসের মতো অধিক মানুষের অবস্থানস্থলে করোনাভাইরাসের লক্ষণের কোনো রোগী দেখা গেলে তাকে জরুরী ভিত্তিতে ছুটি প্রদান ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা সবার জন্য কল্যাণকর। রোডেঘাটে, হাটে-বাজারে চলার পথে মাক্স পরিধান করা ও ঘরে ফিরে ভালোভাবে পয়পরিষ্কার হওয়া অত্যাবশ্যকীয় কাজ হিসেবে পালন করা দরকার।
ইসলামের সুন্নাতি সুসম খাদ্যপ্রামিড থেকে খাদ্যতালিকা প্রনয়ন করে সাপ, বাদুর ও কুকুর জাতীয় করোনাভাইরাসের জনক সুলভ কোনো বিষধর প্রাণী ভক্ষণ থেকে বিরত থাকাও করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা উপায়। সর্বোপরি এ করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে আমাদের আরো যত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তার প্রারম্ভে রয়েছে তার প্রাথমিক লক্ষণ সমুহ জানা। তার প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়ানুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকা। রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা বিভাগে করোনাভাইরাস সনাক্তকরণ সামগ্রী ও উপকরণ পর্যাপ্ত ও ত্রুটিহীন থাকাটাও জাতীয় অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। কিছুতেই সুনিশ্চিত না হয়ে তাদের জীবননাশকে পরিনত হওয়া মোটেও মানবীয় গুনাবলির পরিচয় দেওয়া হয়না। রোগ হয়েছে বলেই তারা বাঁচার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে এমনটা নয়।
প্রতিষেধক আবিস্কৃত না হলেও প্রতিপালকের কৃপায়ই সকল মানব দেহে রয়েছে সকল প্রকার ভাইরাসের এন্টিভাইরাস বিশেষ। যারফলে যেকোনোভাবেই যেকোনো আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করতেই পারে। তাছাড়া গ্রেফ আক্রান্তদের থেকে করোনা সংক্রমিত হয় এমনটাওতো না যে এই আক্রান্ত জনকে শেষকরে ফেললেই এ ভাইরাস নির্মূল হয়ে যাবে। আসলে এ ভাইরাস জন্ম নেয়ার পরিবেশটাকেও কম গুরুত্ব দিলে চলবে না।
যেভাবে প্রথমে মানব দেহে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে সেভাবে নতুন করে পরিবেশের কারণেওতো এ ভাইরাস জন্ম নিতে পারে। আর সে কারণেই আক্রান্তের সাথে পৈশাচিক আচরনের মাধ্যমে তার বিপদকালে ও মুমূর্ষু মুহূর্তে নির্জন পরিবেশে ফেলে রেখে কষ্টের উপর দুঃখ না দিয়ে বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসিকতার সাথে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করে চলাই উচিত। যেই প্রবাসীরা এই দেশ ও জাতির জন্য প্রাণপণ করে চলছিলো আজ তাদের সাথে যেন অমানবিক আচরণ করা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার। কিছুতেই যেন শুধু দুচারটা লক্ষণ দেখা গেলেই আমরা তাকে করোনা আক্রান্ত মনে করে দুরত্বে অবস্থান না করি। কেননা এই করোনাভাইরাস আগমনের আগেও সর্দি, জ্বর, কাশি,গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা,শ্বাসকষ্ট ও অস্থিরতার মতো এ লক্ষণ ছিল। কিন্তু তখনতো আমরা তাদেরকে ভয় করে দুরে না থেকে ঠিকই চিকিৎসা দিয়েছি। এখন কেনো নিশ্চিত না হয়ে দূরত্ব বজায় রাখব? তবে এটা হতে পারে যে এই  লক্ষণ যেহেতু তাহলে করোনাভাইরাস হতে পারে।
১৯৬০সালে যখন প্রথম করোনাভাইরাস আবিস্কৃত হলো তখন থেকেই এ রোগের কিছু এস্পেসিফিক লক্ষণ নির্ণীত হয়েছে। সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, জ্বর, হাঁচি, অবসাদ ও শ্বাসকষ্ট এরোগের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ বিশেষ। এছাড়া আরো কিছু লক্ষণ থাকলেও গুরুতর এহেন লক্ষণ বিশেষের কোনো রোগী নজরে পড়লেই প্রথমে তাকে পরিক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়কল্পে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। তারপর নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে নিজেদেরকেও যেনো সে রোগে আক্রান্ত করতে না পারে সেদিকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। নবেল করোনাভাইরাসের মতো কোনো মহামারি যখন কোনো ভুখন্ড বা বিশ্বময় দেখা যায় তখন তার সম্পর্কে গবেষণার সকল তথ্যাদি সর্বপ্রকার প্রচার মাধ্যমে সর্বাধিক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। তার লক্ষণ ও করণীয় বিষয়ক প্রচারণা যদি পত্রপত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন, মোবাইল এসএমএস, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের এবং সভা সেমিনারের মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
তাহলে মানুষ হিসেবে আপামর সকল জনতার মধ্যেই সচেতনতার জন্ম হবে এবং সকল দুর্দম মহামারি থেকেও জাতিকে মোটামুটি ভাবে রক্ষা করা যাবে। যেহেতু করোনাভাইরাস এক বৈশ্বিক মহামারী সেহেতু তার মোকাবেলা ও প্রতিহতের ব্যাপারে তামাম বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সকল কাজ গুলোকে গুরুত্বের সাথে পালন করে চলতে হবে। করোনাভাইরাসের জন্মের ৬০এর দশক পেরিয়ে সাম্প্রতিক কিছুদিন আগে চীনের সাপ, কুকুর ও বাদুর জাতীয় প্রাণী ভোজি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্য পুনরাগমন করে বিশ্বময় ছড়িয়ে যেয়ে আজ এ কটাদিনেই বিশ্বের আট হাজারের মতো মানুষের প্রাণনাশ করেছে।
চীন, ইরান ও ইতালির মতো কিছু দেশে মাত্র চব্বিশ ঘন্টায় প্রায় তিন শত প্রাণও ঝরিয়েছে এ ভাইরাস। অতি দ্রুত এ নবেল করোনাভাইরাসের সাঁড়াশি আক্রমণে তামাম জাহান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে। অনতিবিলম্বে এ ভাইরাসের আক্রমণ রুখে দিতে না পারলে ক্রমবর্ধমান এ করোনাভাইরাসের এলোপাথাড়ি থাবায় বিশ্ব এক বিপর্যস্ত বিরান ভুমিতে পর্যবসিত হতে পারে। সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি দুর্দম ঝুঁকির মধ্যে নিমজ্জিত হতে পারে।
তবে এহেন বালামুসিবত যে সৃষ্টিকর্তার পক্ষথেকে আসে সে সম্পর্কে বিশ্বের সকল ধর্মের মানুষের একটা বিশ্বাস আছেই। তাই বৈশ্বিক এই ভয়ংকর দানবীয় রাক্ষসী করোনাভাইরাসের হাত থেকে বিশ্বমানবতাকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রত্যাশার পাশাপাশি উক্ত করণীয় গুলোকে সবার দ্বারে পৌঁছে দিয়ে পালন করতে উদ্ভুদ¦ করা উচিত। সুতরাং আসুন আমরা দুর্দম করোনাভাইরাসের ম্যাসাকারী থাবা থেকে রক্ষা পেতে তামাম জাহানের মানুষ একযোগে কাজে লেগে যাই। পাশাপাশি আমরা আমাদের দেশকে করোনা মুক্ত রাখতে গবেষকদের গৃহীত সকল পরামর্শগুলোকে পুংখানুপুংখ ভাবে কাজে পরিনত করতে সকলেই যত্নশীল হই।
[email protected]

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ