শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

করোনাভাইরাসের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সব ধরনের ক্রিকেট -বিসিবি সভাপতি

স্পোর্টস রিপোর্টার : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সব ধরনের ক্রিকেট। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের স্বীকৃত কোনো টুর্নামেন্ট বা খেলা মাঠে গড়াবে না। গতকাল দুপুরে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ খবর জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ফলে স্থগিত হলো মাত্র শুরু হওয়া ঢাকা প্রিয়িার লিগ (ডিপিএল)। বিসিবি সভাপতির ভাষ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে তো নয়ই, এপ্রিলের ১৫ তারিখের আগে আর প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়ানোর সম্ভাবনা নেই। বিসিবিতে জরুরি বৈঠকের পর এমন সিদ্বান্তের কথা জানান বিসিবি সভাপতি।  করোনাভাইরাস থেকে খেলোয়াড়দের রক্ষা করতেই বিসিবি এমন সিদ্বান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি। পাপন বলেন,‘করোনাভাইরাসের সংক্রমনে বিশ্বের সকল খেলাধুলা থমকে গেছে। প্রথম রাউন্ডের পরই আমরা ডিপিএল স্থগিত করেছিলাম। তখন  আমরা জানতাম না পরিস্থিতি কি হবে। তাই আমরা ঘোষনা দিয়েছিলাম, দ্বিতীয় রাউন্ডও স্থগিত করা হবে। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।  তাই আমরা একমত হয়েছি, ক্রিকেট চালিয়ে যাবার মত পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। একসময়, খেলোয়াড় ও ক্লাবগুলো  এই পরিস্থিতিতে ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভাইরাসটি সংক্রমনের ফলে তারা ভিন্ন মতামত দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, পরবর্তীতে নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট স্থগিত করার সিদ্বান্ত নিয়েছি আমরা। যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তবে আমরা আবারো ক্রিকেট খেলা শুরু করবো।’পাপন অবশ্য স্পষ্টভাবে বলেননি, কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং খেলার জন্য অনুকূল হবে। তবে তিনি আশা করছেন, আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ডিপিএল। পাপন বলেন, ‘প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে, তাই আমরা নির্দিষ্ট সময় নিয়ে সিদ্বান্ত নিতে পারছি না। আমরা যদি জানতাম, মার্চের পর পরিস্থিতি বদলে যাবে তবে আমরা ৩১ মার্চ বলতাম। তবে আমরা বলতে পারি না, এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতি বা অবনতি হবে। আমরা মনে হয় না, ১৫ এপ্রিলের আগে ডিপিএল শুরু করা সম্ভব এবং এটি আরও পিছিয়ে দেয়া হতে পারে।’ বিসিবি সভাপতি জানান, শুধুমাত্র খেলোয়াড়রাই নন সকলেরই করোনাভাইরাস নিয়ে সর্তক হওয়া প্রয়োজন। এখন ক্রিকেটের সময় নয়। তিনি বলেন,‘লিগ শুরুর পর প্রত্যক ক্লাব থেকে খেলোয়াড়দের সচেনতা সর্ম্পকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। তাদের এখন একই নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আমরা আশা করবো, তারা বাইরে যাবে না এবং অন্যকে স্পর্শ করবে না। এটি লক ডাউন করা সম্ভব নয় কিন্তু যদি সম্ভব হয় এটি লক ডাউন করা উচিত।’ পাপন আরও বলেন, ‘বিসিবির স্টাফদের জন্যও একটি নির্দেশনা বহাল থাকবে। এটিকে হালকাভাবে নেয়ার কোন উপায় নেই। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া প্রত্যেক  খেলোয়াড় এবং স্টাফদের বাইরে না যাবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ সব ধরনের ক্রিকেট বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেখলাম যে, এখন অনেক কিছুই বদলাচ্ছে,  খেলোয়াড়দের ইচ্ছাটাও আগের মতো নেই। এছাড়া কিছু ভিন্নমতও আসছে। তো সবদিক বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, দেশের সব ধরনের ক্রিকেট বন্ধ, আপাতত স্থগিত। পরবর্তী  ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত, পরিস্থিতি উন্নতির আগে আমরা কিছু বলতে পারছি না। পরিস্থিতি বদলালে আমরা খেলা শুরুর নতুন সূচি ঘোষণা করব।’ প্রিমিয়ার লিগ তো বন্ধ হয়ে গেল। এখন ক্লাব ও ক্রিকেটাররা কি করবেন? তাদের প্রতি বোর্ডের নির্দেশনা কি? জবাব দিতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি সরাসরি হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বলেননি। তবুও এক লম্বা চওরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যার সারমর্ম হলো আপাততঃ শুধু মাঠের খেলাই বন্ধ নয়। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা ও করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে সব ধরনের অনুশীলনও বন্ধ। মাঠে গিয়ে অনুশীলন করা বহুদুরে, সম্ভব হলে বা খুব দরকার না পড়লে ক্রিকেটারদের ঘরের বাইরে না যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অনেক কথার ভিড়ে বিসিবি বিগ বস ক্রিকেটারদের জানিয়ে দিয়েছেন, একদম না পারলে বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভাল। এছাড়া অন্য কারো সংস্পর্শে যত কম আসা যায়, সে চেষ্টাও করতে হবে। বলছি না লকডাউন করতে হবে, করতে পারলে ভাল হত। মোটকথা ওদেরকে (ক্রিকেটারদের) সাবধানে থাকতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের সব খেলাধুলাই এখন প্রায় বন্ধ কিংবা স্থগিত। যেহেতু মাঠের ক্রিকেট বন্ধ। তাই অনেক দেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট  বোর্ড অফিস বন্ধ। পার্শ্ববর্তী ভারতের ক্রিকেট অভিভাবক সংস্থা বিসিসিআইয়ের স্টাফদের জন্য অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সবাইকে বাসায় বসে কাজ করতে বলা হয়েছে। বিসিসিআইসির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ ক্রিকেট সংস্থা সিএবিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও কি বন্ধ থাকবে? করোনাভাইরাসের কারণে বিসিবি স্টাফরাও কি অফিসে না এসে ঘরে বসে কাজ করতে পারবেন? সাংবাদিকদের কাছ থেকে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন,‘ওটা আপনারা দেখতে পাবেন। প্রতিদিন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। এখন একটা বলব, পরে আরেকটা, তা তো হয় না। আমরা নিজেরাই সতর্ক হবো। আপাতত লিগ বন্ধ করেছি এবং যা করা দরকার করা হবে। এটা শুধু আমাদের জন্য নয়, সকলের জন্য একতা কথা যে জিনিসটাকে হালকা করে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কাজেই আমাদের সচেতন হতে হবে। যতটুকু সম্ভব বাসা থেকে না বের হতে বলা হয়েছে। জরুরি ছাড়া খেলোয়াড় এবং বোর্ডে যারা আছে তাদের বাসা থেকে না বের হবার কথা বলা হয়েছে।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ