শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মিরপুরে পুড়ল ঝুটের গুদাম ॥ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে আগুনে পুড়েছে কয়েকটি ঝুট গুদাম। গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কর্তব্যরত কর্মকর্তা লিমা খানম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট সাড়ে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে সেমি-পাকা কয়েকটি গুদামঘর পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি। ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। একজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এবং আরেকজনকে মিরপুরের স্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকেল ৫টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভে যায়। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ বলছে, আগুনে মোহাম্মদ হোসেন ও ইসরাফিল নামের দুই ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, বেলা ১টা ২৩ মিনিটে পল্লবী থানার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার ঝুটপট্টির গোডাউনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট কাজ শুরু করে। সর্বমোট ১৫টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনের সূত্রপাত ঝুটের গোডাউন থেকে হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আগুনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে গত বুধবার রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের ঝিলপাড় বস্তিতে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে দুই শর বেশি ঘর পুড়ে যায়।
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না
আগুনে পুড়ে যাওয়া মিরপুর-১০ নম্বরের ঝুটপট্টি ও এর পাশের দু’টি ভবনের কোথাও অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তৎপরতা চালানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না সেখানে। ফলে আগুন নেভাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মো. জিল্লুর রহমানসহ প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর-১০ নম্বরের জল্লাদখানা এলাকায় অবস্থিত জুটপট্টির সামনে রয়েছে খান গার্মেন্টস। এর পাশে রয়েছে আরও একটি দোতলা ভবন। সেটিতেও ছিল জুটের গোডাউন।
লে. কর্নেল মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মুহূর্তে আগুন পাশের দুটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়েছি। তবে পাশের কোনও ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। পাশের ছয়তলা ভবনের (খান গার্মেন্টস) নিচ থেকে চারতলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরেই ছোট-খাটো আগুন ছিল। সেগুলো আমরা নিজেদের প্রযুক্তি ও উদ্যোগে নির্বাপণ করেছি। ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের কোনও ধরনের ব্যবস্থা দেখা যায়নি।’
ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা বলেন, জুটের গোডাউন ও পাশের দুটি ভবনের কোনোটিতে এককভাবে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে একই সময় দুটি ভবন ও জুট গোডাউনে আগুন ছিল। তিনটি জায়গায় আগুন নিয়ন্ত্রণে তিনটি পথে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া পাশের ভবনগুলোতে আগুন নেভাতে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। কারণ, সেখানে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত স্পেস ছিল না। আর ভবনগুলোতে কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না।
আগুনের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য পেতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত খান গার্মেন্টসের মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, দুপুরে খাবারের বিরতি ছিল। তাই গার্মেন্টসের অধিকাংশ শ্রমিক বাইরে ছিল। যারা ভেতরে ছিল, জুটপট্টিতে আগুন লাগা দেখে তারাও বাইরে চলে যায়। আমার গার্মেন্টসের বেশকিছু যন্ত্রপাতি ও মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আগুন প্রথমে জুটের গোডাউনে লেগেছে। তবে আগুনের সূত্রপাত কীভাবে, তা তারা জানেন না। জুটপট্টির আগুনের ফুলকা উড়ে পাশের ভবনগুলোতে গেছে। এরপর ওই ভবনগুলোতেও আগুন লাগে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফোরকান বলেন, ‘আগুন জুটপট্টিতে প্রথমে দেখেছি। এখানে গার্মেন্টস জুট গোডাউন করে রাখা হয়। অনেকে বিড়ি-সিগারেট খায়। তবে আগুন কীভাবে লেগেছে তা আমি বলতে পারবো না।’
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় ৮ জন আটকা পড়েছিল। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। তবে মোহাম্মদ হোসাইন (২২) নামে জুটপট্টির একজন আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ