বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ধাক্কা?

১৩ মার্চ, দ্য ওয়াল : করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতালিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রায় সব দোকান। ভারতও প্রায় সব ধরনের ভিসা বন্ধ করেছে। টুইটার কোম্পানি কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছে, অফিসে না এসে বাড়ি থেকে কাজ করতে। পণ্য ও মানুষের চলাচলে এতরকম নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাণিজ্য। আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনা ভাইরাস মহামারীর জের ধরে শিগগিরই বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘনিয়ে আসতে পারে বিপর্যয়। শুরু হতে পারে ভয়াবহ মন্দা।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১২৭টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৯ জন মানুষ। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে চার হাজার ৯৮৩ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭০ হাজার ৩৮৭ জন।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বেশ কিছু শহর ও এলাকাকে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানির বিমান চলাচল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে খেলা। দোকানে ভিড় করে মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করছেন। তাদের আশঙ্কা কিছুদিন পর দোকানপাট একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।

ইয়ারদেনি রিসার্চ ইনকর্পোরেটেডের প্রতিষ্ঠাতা এড ইয়ারদানি লিখেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের মহামারীর জেরে শিগিগরই শুরু হতে পারে অর্থনৈতিক মন্দা।’

এর আগে বিশ্ব জুড়ে মন্দা দেখা গিয়েছিল ২০০৮ সালে। ২০২০ সালে আবারও এমন পুনরাবৃত্তি হতে পারে।অর্থনীতিবিদরা অনেকেই নিশ্চিত, শিগগিরই মন্দা শুরু হবে। কতদিন তা স্থায়ী হবে, সেই নিয়ে এখন চলছে বিতর্ক।

সারা বিশ্বে গত বৃহস্পতিবার ধস নেমেছে শেয়ার বাজারে। বাদ যায়নি ভারতও। দেশটির সেনসেক্স ও নিফটিতে নথিভুক্ত প্রতিটি শেয়ারেরই দাম কমেছে। একদিনেই ভারতের শেয়ার বাজার থেকে উড়ে গেছে ১১ লাখ কোটি রুপি।

এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপান বাদে অন্যান্য সব দেশে শেয়ারের দাম কমেছে গড়ে ৩.২ শতাংশ। জাপানে নিক্কি সূচক নেমেছে ৫.৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে পতন শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। ২০০৮ সালের মন্দার পরে এই প্রথম ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ নামছে হু হু করে। কয়েক দশক বাদে এই প্রথমবার চীনের অর্থনীতির বহর কমছে। জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির অর্থনীতির বহরও কমতে শুরু করেছে।

মন্দার আশঙ্কা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন প্যাসিফিক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জোয়াকিম ফেলস। তার মতে, ‘ইউরোপ ও আমেরিকায় এখনই মন্দার আশঙ্কা নেই’। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ল্যারি সামার্স বলেন, ‘করোনা ভাইরাস তাদের দেশে খুব বড় ধরনের সংকট ডেকে নিয়ে আসতে পারে।’

মন্দা হোক বা না হোক, বিশ্ব জুড়ে অর্থনীতির বিকাশ যে কমবে, সে ব্যাপারে অর্থনীতিবিদরা একমত। ব্যাংক অব আমেরিকার অর্থনীতিবিদরা আগে বলেছিলেন, চলতি আর্থিক বছরে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বিকাশ হবে ২.৮ শতাংশ হারে। এখন তারা বলছেন, বড় জোর ২.২ শতাংশ বিকাশ হতে পারে।

জে পি মর্গান চেজ অ্যান্ড কোম্পানির অর্থনীতিবিদরা বলেন, মন্দা শুরু হতে বেশি দেরি নেই। তাদের মতে, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ যদি শিগগিরই কমে যায় এবং বিভিন্ন দেশের সরকার যদি বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়, তাহলে মন্দা এড়ানো যেতে পারে। একইসঙ্গে তারা বলেন, তেলের দাম কমার ফলে মন্দার শক কম লাগবে।

আপাতত করোনা ভাইরাসের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ যৌথভাবে খরচ করছে ১৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এখনও পর্যন্ত বড় কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। জার্মানির চ্যান্সেলার অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, তিনি শিগগিরই মহামারী রুখতে বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কিন্তু এখনও কোনও উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ