শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সরকার করোনা নিয়ে উদাসীন-মোশাররফ

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাস ইস্যুতে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘সরকার মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। তারা করোনা ভাইরাস নিয়ে উদাসীন। তাইতো করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এখনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ‘করোনা ভইরাস: বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ড্যাব সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদ, অধ্যাপক আমিনুল হক ও আব্দুস সালাম প্রমুখ।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গত বছরের ডেঙ্গুর ব্যাপারে সঠিক তথ্য দেয়নি। তেমনই করোনা নিয়েও সরকার সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে তিনজন আক্রান্ত, কিন্তু আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি তিনজন নয়, আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।

মোশাররফ বলেন, জনগণকে সচেতন করা উচিৎ। ডাক্তার এবং নার্সরা করোনা রোগীর কাছে যে যাবে তার কোনও ব্যবস্থা নাই। সবার নজর দেয়া উচিত করোনা ভাইরাস মোকাবিলার প্রতি। কিন্তু আমি মনে করি, সরকার এখনও উদাসীন করোনা ভাইরাস নিয়ে। সরকার ব্যস্ত আছেন মুজিব জন্মশতবর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে।

খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জল এবং স্থলবন্দরগুলোতে যে প্রিভেনটিভ ম্যাটারগুলো দরকার সরকার তা করছে না, করতে পারছে না। ইতোমধ্যে ১২১টা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। করোনা ভাইরাসের এখনও কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বাংলাদেশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে আছে।

তিনি বলেন, সরকার এখনও করোনা ভাইরাস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমার পরিচিত একজন বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি বিমানবন্দরে। আমি নিজেও দেখেছি কাউকে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে না। নদী এবং সমুদ্র বন্দরগুলোতেও কোনও স্ক্যানিং ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ সরকার বলছে আতঙ্কের কিছু নেই, সব ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বিশেষ কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থাই নেই।

এসময় ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব তুলে ধরে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে- ১. করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কমিটিতে মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে দলমত নির্বিশেষে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের যেমন- প্রকৌশলী, শিক্ষক চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিকদের সংশ্লিষ্ট করা হোক। একইভাবে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোতেও সমাজের বিভিন্ন স্তরের ও বিভিন্ন পেশার মানুষদের একীভূত করা হোক। দেশের সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া এই ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলা করা দুরূহ হবে। ২. দেশের অভ্যন্তরে করোনা ভাইরাসের অনাকাক্সিক্ষত হানা ঠেকাতে কার্যকরী স্কিনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে দেশের জনগণকে অবহিত করা হোক। 

৩. যথাযথ চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি সম্পর্কে অনতিবিলম্বে জনগণকে অবহিত করা হোক। সেক্ষেত্রে কোথাও কোনো দুর্বলতা বা ব্যত্যয় জনগণের কাছে পরিলক্ষিত হলে এখন প্রস্তুতি পর্বেই সেগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। ৪. করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে ও চারপাশের মানুষকে মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে অবহিত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি অনতিবিলম্বে শুরু করা হোক। ৫. অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক ও নার্সদের প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টের কোনও অস্তিত্ব আমাদের দেশে দৃশ্যমান নয়। যা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী, তা আমরা জানতে চাই এবং অবিলম্বে তা সংগ্রহ করার দাবি জানাচ্ছি।

বক্তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের এই চরম দুঃসময়ে সরকার সঠিক বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের প্রস্তাবিত পথে অগ্রসর হয়ে দেশের জনগণের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, তার দায় সম্পূর্ণভাবে এই সরকারকেই বহন করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ