বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬১ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ ॥ আগে নেয়া টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ৬১ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ এবং আগে নেওয়া ভাতার টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার তথা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী। এ নির্দেশে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সেখানকার মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া, প্রকৃত এক নারী মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মিলিশিয়া ক্যাম্পের সহযোগী ও বেতনভুক্ত নারীকর্মীর মেয়েকে গেজেটভুক্ত করায়ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য কিছু তথ্য-প্রমাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। যাদের এসব কাগজ নেই কিংবা যারা এসব কাগজ জমা দিতে পারেননি তাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ভাতা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এক লিখিত নির্দেশে ৬১ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা স্থগিত করেন। সেখানে বলা হয়, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর টেলিফোনে নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখারও নির্দেশনা রয়েছে।
এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবু হোরায়রাহ, মুক্তিযোদ্ধা দাবি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ওয়াসেল সিদ্দীকি এবং বিজয়নগর উপজেলার সাবেক কমান্ডার হাবিলদার তারা মিয়া বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমরা দ্রুত এই দুটি আদেশ বাতিলের দাবি জানাই। তা না হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শত শত মুক্তিযোদ্ধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইবে।’
স্থানীয়রা জানান, ভাতা থেকে বাদ দেওয়া ৬১ জনের মধ্যে খ্যাতনামা নারী মুক্তিযোদ্ধা সায়রা বেগমের নামও রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্ত্র হাতে দুঃসাহসী ভূমিকা রাখা নারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সায়রা বেগম অন্যতম। ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ’ শীর্ষক জেনারেল শফিউল্লাহর লেখা গ্রন্থ এবং একাত্তরের ‘কন্যা জায়া জননী’ শীর্ষক মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার লেখা গ্রন্থে ঐতিহাসিক মুকুন্দপুর যুদ্ধে সায়রা বেগমের ভূমিকা ও অবদানের বর্ণনা রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল সাঈদ স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেন, সায়রা বেগমের জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে সংগ্রহ করা সামরিক গোয়েন্দা তথ্যে মুকন্দপুরে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত, আহত ও বন্দি হয়। হস্তগত হয় প্রচুর সমরাস্ত্র। দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের এটাই একমাত্র যুদ্ধ যেখানে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর পক্ষে একজনও হতাহত হননি। তিনি এই কৃতিত্বের অংশীদার হিসেবে সায়রা বেগমকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ত্যাগ স্বীকারকারী নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সায়রা বেগমসহ ৬১ জনের সবাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।  আমি এই বিতর্কিত নির্দেশের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে ভাতা পুনরায় চালু করার আহ্বান জানাই।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অনেক দুর্র্ধর্ষ অপারেশনের সাহসী গেরিলা কমান্ডার, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধারা আমরণ অনশন করতে পারে।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ঘটনাকে নিন্দনীয় ও দুঃখজনক উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে গঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যদি মিলিশিয়া ক্যাম্পের কর্মীর সন্তান হাজেরা বেগম কুট্টিকে বীরাঙ্গনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে তাহলে আমরা যাবো কোথায়?’ তিনি মুক্তিযোদ্ধা নয় এমন ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে আমরা এসব বিতর্কিত অ-মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য রেজুলেশন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে ব্যক্তিগত শুনানিতে উপস্থিত হয়ে তথ্য-প্রমাণ দাখিল করেছি। এরপরও অদ্যাবধি তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। দুর্ভাগ্য আমাদের, কোথাও একটা গলদ আছে নিশ্চয়!

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ