ক্রিকেট টেস্টে জয়
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ক্রিকেট টেস্টে ইনিংসের ব্যবধানে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট যোদ্ধারা। খেলা পাঁচদিনের হলেও মঙ্গলবার চতুর্থ দিনের প্রথমার্ধেই জয় নিশ্চিত করেছে তারা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৫৬০ রান। এর জবাবে মাত্র ১৮৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছে জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়রা। ফলে প্রথম ইনিংসের ২৬৫ রানের সঙ্গে যোগ হয়ে দেশটির মোট রান দাঁড়িয়েছিল ৪৫৪। উল্লেখ্য, প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৬ উইকেট হারিয়ে ডিক্লিয়ার করে নিজেদের খেলার সমাপ্তি টেনেছিল। সে কারণে জিম্বাবুয়ের শুধু ইনিংস পরাজয় ঘটেনি, একই সঙ্গে ১০৬ রানের বিরাট ব্যবধানেও হেরেছে দেশটি।
এই টেস্টে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশের পারফরমেন্স। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং-এর সকল বিভাগেই বাংলাদেশের ক্রিকেট যোদ্ধারা সমান দাপটের সঙ্গে খেলেছে। জিম্বাবুয়েও তাই পরাজয় মানতে ও মাথা নুইয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে। সাবেক উইকেট কিপার ও তারকা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ২০৩ রান করেও অপরাজিত থেকেছেন তিনি। তার চারের সংখ্যা ছিল ২৮টি। এটা তার দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মিরপুর স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই তিনি প্রথমবার ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, সেবারের মতো এবারও মুশফিককে সঙ্গ দিয়েছেন মমিনুল। অধিনায়ক হিসেবে প্রচন্ড চাপে থেকেও মমিনুল করেছেন ১৩২ রান। অর্থাৎ তিনিও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন।
বাংলাদেশের বোলাররাও যথেষ্টই দেখিয়েছেন। বোলারদের মধ্যে নাঈম একাই নিয়েছেন পাঁচটি উইকেট। নাঈম নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। কারণ, একই ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়া খুব কম বোলারের পক্ষেই সম্ভব হয়। অন্যদিকে নাঈম এবার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন দ্বিতীয়বারের মতো। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচেই মমিনুল পাঁচ উইকেট নিয়ে রেকর্ড করেছিলেন। এবার পাঁচ উইকেট তো নিয়েছেনই, সব মিলিয়ে নয়টি উইকেট নেয়ার অনন্য সাফল্যও অর্জন করেছেন।
আমরা ইনিংসের ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেট যোদ্ধাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। একটি মাত্র বিজয়ই অবশ্য অভিনন্দন জানানোর কারণ নয়। আসল কারণ হলো, জয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ দল এক ধরনের খরার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া শুধু নয়, আফগানিস্তানের মতো নবাগত দলের কাছেও বাংলাদেশ পরাজিত হয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, বহুদিন পর, প্রকৃতপক্ষে ৪৫০ দিন পর মঙ্গলবার বাংলাদেশের ক্রিকেট যোদ্ধারা জয়ী হয়েছে। আমাদের আশা ও বিশ্বাস, এভাবে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আগামী দিনগুলোতেও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাবে তারা। নতুন পর্যায়ে এই বিজয়ের শুরু হতে পারে আগামী এপ্রিলে- যখন তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার জন্য সে দেশে যাবে। অমন আশা ও বিশ্বাসের কারণ হলো, ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ এরই মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি প্রতিযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত এবং আইসিসি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিলেও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলংকা, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তো বটেই, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে পর্যন্ত হারিয়ে দেয়ার রেকর্ড রয়েছে ক্রিকেট যোদ্ধাদের। আমরা মনে করি, সঠিক কৌশল ও পরিকল্পনার পাশাপাশি ধৈর্য, সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটানো গেলে বাংলাদেশের পক্ষে যে কোনো দেশের বিরুদ্ধেই জয়ী হওয়া সম্ভব হতে পারে। ইতপূর্বে দু’ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রথমে পাকিস্তানকে এবং তারপর অহংকারী ও ষড়যন্ত্রকারী দেশ ভারতকে সিরিজ হারানোর কৃতিত্বে সে ধারণাই পাওয়া গেছে। সেবার ভারতকে শুধু হারিয়েই দেয়নি, ক্রিকেট যোদ্ধারা ভারতকে ‘বাংলাওয়াশও’ করেছিল।
দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও তাই গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে আশা করি, সামনের পাকিস্তান সিরিজেও সাফল্যই অর্জন করবে বাংলাদেশ। সে যোগ্যতা যে রয়েছে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ডিফিটের মাধ্যমে তার প্রমাণই রেখেছে আমাদের ক্রিকেট যোদ্ধারা। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অনন্য সাফল্যের জন্য ক্রিকেট যোদ্ধাদের প্রতি আবারও আমরা অভিনন্দন জানাই।