শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মুন্সীগঞ্জে সরকারি খাসজমি খাল ও নদীর তীর দখল করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের পাশে সরকারি পরিত্যক্ত জমি, খাল এবং নদীর তীর দখল করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে একটি প্রভাবশালী মহল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত খাসকান্দি গ্রামের বজলু হাওলাদারের ছেলে আহাম্মেদ হাওলাদার খাসকান্দি গ্রামের পাশে স্টিল ব্রিজ সংলগ্ন সরকারি জায়গা দখল করে গাড়ীর গ্যারেজ ও বালুর ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ব্রিজের ঠিক ডালু অংশ জুড়ে তাই এই রমরমা ব্যবসায় জনভোগান্তিসহ পরিবহন চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটে। শুধু তাই নয় এই আহাম্মদ হাওলাদার নূরানী কোল্ড স্টোর সংলগ্ন রজতরেখা নদীর তীরেও গড়ে তুলেছেন বালু ব্যবসার পকেট। পাশাপাশি কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারি খাল ও পরিত্যক্ত সরকারি ভূমি, কবরস্থান দখল করে সেখানেও আরো ৩ টা বালু বিক্রির পকেট তৈরী করেছে। রাস্তার পাশে তার এই বালু ব্যবসার কারনে ট্রলি ও ট্রাক সব সময় যানজট লাগিয়ে রাখে। একটু বাতাস আসলে রাস্তায় চলাচলকারী পথচারী, পরিবহনে থাকা যাত্রী এবং পাশর্^বর্তী গ্রামের মধ্যে বালু উড়ে যায়। সবচেয়ে বেশী ধুলোবালুতে আক্রান্ত হচ্ছে সরকারি চর কদমতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা। ৫টি স্থানে প্রায় ৫ একর সরকারি জমি দখল করে চলছে এই রমরমা বালু ব্যবসা। দখলদার আহাম্মেদ হাওলাদার প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এলাকার ভুক্তভোগীরা কোন প্রকার প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি আজও। তার এই দখদারিত্বে সরকারি নদী ও খাল ভরাটের পাশাপাশি পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। একটু বাতাস হলেই বালু উড়ে প্রধান সড়ক,মানুষের বসতবাড়ী ও পাশ্ববর্তি স্কুলের ভিতর এবং স্থানীয়দের ফসলি জমির ফসল বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ হয়। সরেজমিনে খাসকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খাসকান্দি ব্রিজের ডালে প্রায় এক একর জায়গা জুড়ে আহাম্মেদ নামের এক ব্যক্তি গাড়ীর গ্যারেজ ও ইট বালুর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তার একটু উত্তর রজত রেখা নদীর নূর কোল্ড স্টোরের পাশে সরকারি জমিতে আরো একটি বালুর পকেট। এছাড়ও কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেও আরো ৩টি বালু ব্যবসার প্রতিষ্ঠান। বছরের পর বছর এই দখলদারিত্ব চললেও প্রশাসন আজও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী আহাম্মেদ হাওলাদার বলেন, এই ৫টি প্রতিষ্ঠান আমি গড়ে তুলেছি। সব জায়গা সরকারি না অধিকাংশ জমি ব্যক্তি মালিকানা। সরকারি জায়গায় পড়লে সরকারি লোক বললে সরিয়ে দিবো। এ সময় ব্যক্তিমালিকানা সংক্রান্ত প্রমাণ চাইলে আহাম্মেদ আরো বলেন, সারাদেশেই তো এভাবে চলছে কিছু নিজের কিছু অন্যের। আপনারা রিপোর্ট করলে আমার সমস্যা হবে । পরে তিনি প্রতিবেদককে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে সংবাদ প্রচার না করার জন্য অনুরোধ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ফারুক আহাম্মেদ বলেন, আহাম্মেদ নামের ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনার জন্য গিয়েছিলো। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্তরা কৌশলে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে অচিরেই সরকারি জায়গা থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা ও বালুর ব্যবসা উচ্ছেদ করা হবে।
শ্রীনগর খালের জায়গা দখল
মুন্সীগঞ্জ শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের ভাগ্যকুল বড় খালের জায়গা দখল করে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পদ্মা নদী থেকে এ খালটি আড়িয়াল বিল হয়ে ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীতে মিশেছে। পূর্বে এই খাল দিয়ে লোকজন লঞ্চ, স্ট্রিমার, পানসি, ডিঙ্গি, ঘাসি, কার্ফ ও গয়না নৌকা যোগে রাজধানী ঢাকাতে যাতায়াত করত। পদ্মা নদী থেকে এই খাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির আড়িয়াল বিলে প্রবেশ করত। দখল দূষণের কারনে এ খালটির সেই আগের রূপ আর নেই। এখন আর পাওয়া যায় না দেশী সেই মাছ। চলে না আর রঙ্গে বেরঙ্গের সেই নৌকা, লঞ্চ ও ষ্টিমার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদী ভাগ্যকুল বাজার ঘেয়ে শুরু হয় এ খালটি। বালাশুর বৌ-বাজার, উত্তর বালাশুর টেটামারা হয়ে আড়িয়াল বিলে প্রবেশ করে। আড়িয়ালর বিল থেকে এখালটির বিভিন্ন শাখা খাল বেড় হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে যোগ হয়। ভাগ্যকুল বাজার অংশে খালটি শুরু মুখ থেকে মের্সাস পদ্মা এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী মোঃ নান্নু বেপারী, অলক এন্টার প্রাইজ স্বত্বাধিকারী মাইন চৌধুরী পুলক খালটির পশ্চিম পাশটি বালু ভরাট করে ভবন নির্মান করে এবং খালটির পূর্ব পাশটি জামাল ঢালী, আমজাত হোসেনগং বালুু ভরাট করে বিভিন্ন টিনের ঘর নির্মাণ করে খালটি দখল করে নেয়। বালাশুর বৌ-বাজারে পাশে সেলিম মোল্লা, কাঞ্চন মোল্লা গং খাল ভরাট করে ভবন নির্মাণ করে দখল করে নেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুজ্জামান সাংবাদিকদের আক্ষেপ করে বলেন, আপনার অনেক নিউজ করেন দেখি। কিন্তু ভূমিদস্যূরা যে এ ঐতিহ্যবাহী খালটি দখল নিয়েছে এব্যাপারে একটু লিখেন। তাহলে দেশ ও জাতি কিছূ পাবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাম্মৎ রহিমা আক্তারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলাশয় কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না। যারা বন্ধ করেছে তাদের আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ