শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ভারতীয়রা পিটিয়ে হত্যা করেছে বাংলাদেশীকে বিক্ষুব্ধ জনতার রোষে পুড়েছে বাড়িঘর

সংগ্রাম ডেস্ক : একজন বাংলাদেশীকে হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পঞ্চগড়ে একটি ভারতীয় ছিটমহলে বেশকিছু ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানকার পুলিশ জানিয়েছে গারাতি ছিটমহলে সর্বোচ্চ ৩৫টি বাড়ি বাংলাদেশীরা পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার পর ছিটমহলটি পরিদর্শন করেছেন, এমন একজন সাংবাদিক বলেছেন, অন্তত ৫শ' ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। ঐ ছিটমহলটিতে একজন বাংলাদেশীকে পিটিয়ে হত্যা করার পর তার লাশ সময়মত ফেরত না দেয়াকে কেন্দ্র করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। বিবিসি। পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়ন সংলগ্ন গারাতি ছিটমহলে এই ঘটনা ঘটে। সীমান্ত থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার ভেতরে এই ভারতীয় ছিটমহলে গত বৃহস্পতিবার রাতে একজন বাংলাদেশী প্রবেশের পর সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের গণপিটুনিতে মারা যায়। পরে পুলিশ শুক্রবার সারাদিন ধরে ঐ ব্যক্তির লাশ ফেরত আনার চেষ্টা করলেও গভীর রাতে তা ফেরত দেয়া হয়। এ কারণেই স্থানীয় বাংলাদেশীরা ক্ষেপে যায় বলে জানান পঞ্চগড় পুলিশ সুপার শাহরিয়ার রহমান। তিনি বলেন, স্থানীয় ৫/৭ হাজার লোক উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ছিটমহলের মোট বাড়ির সংখ্যাই হচ্ছে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ। এর মধ্যে বেছে বেছে টার্গেটের বাড়িগুলোতে আগুন দেয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যে, ২৫ থেকে ৩০টি বাড়ি, বড়জোড় ৩৫টি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। ঘটনার পর পঞ্চগড়ের সাংবাদিক আব্দুর রহীম ঐ ছিটমহল পরিদর্শনের পর বলেন, চতুর্পাশে হাজার হাজার লোক দর্শকের মত দাঁড়িয়ে আছে, আর ভেতরে একের পর এক বাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে। আমরা ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পাই, অনেক মানুষ আখ ক্ষেত এবং বাড়িঘরের আশপাশে কান্নাকাটি করছে। সেখানে কেউ কেউ আবার তাদের ধন-সম্পদ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। আর বাড়িগুলো জ্বলছে। তিনি বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পায়ে হেঁটে আমি প্রায় এক দেড়শ' বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখেছি। এছাড়া সব মিলিয়ে ৫শ' বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। বিবিসির প্রশ্ন আপনি দেখলেন প্রায় দেড়শ'র মতো বাড়ি তাহলে কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে, ৫শ বাড়ি পুড়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ঐ সাংবাদিক বলেন, চতুর্পাশের আরো অনেক লোকজন আমাদের কাছে এসেছে। তাদেরও বাড়ি পুড়েছে বলে তারা বলেছে। পুরো ছিটমহলের অর্ধেক পর্যন্ত কোন বাড়িঘর নেই। তাতে যদি তেরো শ' বাড়িঘর থাকে তাহলে তার অর্ধেক প্রায় ৬শ ধরেছি আমি। পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন যে, ছিটমহলের বাইরের বাংলাদেশী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে প্রচন্ড উত্তেজনা ছিল। আমাদের কথায় তারা ঐ ছিটমহলে ঢোকেননি তবে লাশটি একটি জটিলতা সৃষ্টি করেছে। গতকালকে তারা লাশটি ফেরত দিলে আজকের এই সমস্যাটা হতো না। কিন্তু কি জন্য তারা গতকাল দিনের মধ্যে আমাদের লাশ ফেরত দিলো না তার কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি জানান, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি এবং বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। ভারতীয় পক্ষ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি বলেও তিনি জানান। আমাদের দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, ভারতীয়রা এক বাংলাদেশীকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়। নিহতের নাম রমজান (৫০)। ওই ঘটনায় গতকাল শনিবার পঞ্চগড় সদর জেলার গারাতি ছিটমহলে বিক্ষুব্ধ লোকজন হামলা চালিয়ে বাড়ী ঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক ও পুলিশ সুপার শাহরিয়ার রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ সুপার মো. শাহরিয়ার রহমান জানান, ছিটমহল হওয়ার কারণে আমাদের কিছুটা সমস্যা আছে। তবে দোষীদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। এদিকে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ছিটমহলের অধিবাসী ৩ ভারতীয় নাগরিককে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তারা হলেন- ছিটমহলে বসবাসকারী নুর হোসেন (৫৫)-, জবেদ আলী (৪৫) ও জালাল (৪০) নামে তিন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশ সীমানার জিয়াবাড়ী হাটের কাছে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ