শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদঘাটে ১৮ বছর ধরে রেল ফেরি সার্ভিস বন্ধ

গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলী : বালাসিঘাট ও জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাটের যমুনা নদীর রেল ফেরী সার্ভিসটি ১৮ বছর ধরে বন্ধ থাকায় এ পথে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের ১৩ জেলার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে লাখ লাখ রেল যাত্রী।

ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় তিস্তামুখ ঘাট ও জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে যমুনা নদীতে রেল ফেরীর সার্ভিস চালু করে। তৎকালীন ব্রিটিশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর জেলার গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারি, দিনাজপুর, পঞ্চগর ও ঠাকুরগাও জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যাত্রী ও মালামাল পারপারের জন্য যোগাযোগ গড়ে তুলতে এ ফেরী সার্ভিসটি চালু করা হয়। এরপর থেকেই এ ঘাট দিয়ে স্বল্প ব্যায়ে অল্প সময়ে যাত্রী পারাপার, কৃষি পণ্য, ডিজেল, সার সরবরাহসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন করা হতো। ১৯৯০ সালের পর যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরী সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মানের আগে দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট পর্যন্ত ট্রেনে যাতায়াত করত এতদাঞ্চলের মানুষ। এছাড়াও সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া হয়েও ট্রেনে এ ঘাট দিয়ে মানুষ চলাচল করত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর থেকে যাত্রীবাহী লোকাল, মেইল ট্রেন ও আন্তঃনগর একতা, তিস্তা, করতোয়া ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কিছুদিন মালবাহী ওয়াগন চলাচল করলেও ওয়াগন ফেরী বন্ধ থাকায় তা নিয়মিত চলাচল করে না। বছরের অধিকাংশ সময়ই ওয়াগন ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে। এতে রাজধানীর সাথে উত্তরাঞ্চলের শত বছরের রেল যোগাযোগের একাংশের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে রেলের বোনারপাড়া থেকে তিস্তামুখ ঘাটের এবং ত্রিমোহনী থেকে বালাসীঘাটের রেল লাইনের মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট ও চুরি হয়ে যাচ্ছে। বেহাত হচ্ছে রেলের কোটি কোটি টাকার ভূমি। এছাড়াও বসে বসে বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন ফেরী বিভাগের কয়েকশত কর্মচারী।

একটি সূত্রে জানায়, ২০০১ সালে যমুনা সেতু চালুর পর যমুনা নদীর ভাঙ্গন ও নাব্যতা হ্রাসের অজুহাতে গাইবান্ধার বালাসীঘাট এবং জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যে রেলওয়ে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ফেরি সার্ভিসটি বন্ধ থাকায় রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৩ জেলার পণ্য সরবরাহ এবং যাত্রী পারাপারে বহু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। রংপুর গাইবান্ধা কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার বিশাল জনগোষ্ঠী অনেক পথ ঘুরে দীর্ঘ সময় পার করে ঢাকায় প্রবেশ করতে হয়। তাই এই এলাকার জনগন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিন চালিত শ্যালো নৌকায় নদী পারাপর হয়। এতে এক দিকে সময়ের অপচয় হয় অন্য দিকে ব্যয় হয় অতিরিক্ত টাকা। পাশাপাশি বালাশী ও বাহাদুরাবাদ ঘাটকে কেন্দ্র করে উপার্জনশীল কুলি শ্রমিক হোটেল ব্যবসায়ী কর্মচারীসহ অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানায়, যমুনা নদীতে অসংখ্যক চর জেগে ওঠায় নদীর নাব্যতা অনেক কমে গেছে। তাই ফেরি সার্ভিসটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে ২০১৩ সালে তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ওই এলাকা পরিদর্শনে এসে ফেরি সার্ভিসটি পূনরায় চালুর ঘোষণা দিয়ে ছিলেন। কিন্তু এর পর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও ফেরি সার্ভিস এখনও চালু করা হয়নি। এছাড়াও ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারি মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উক্ত দুই ঘাটের সংযোগ চ্যানেল পরিদর্শন করে রেল ফেরি চালুর ঘোষনা দেন তবুও কার্যকর হয়নি।

অপরদিকে, বালাসী বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যে যোগাযোগ চালুর জন্য গাইবান্ধাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। রামসাগর ট্রেন পুনরায় চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে গত শনিবার এলাকাবাসীর ব্যানারে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি আধা ঘন্টা অবরোধ করে রাখা হয়। রেলওয়ে লালমনিরহাট ভিডিশনাল ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (ডিটিএস) স্নেহাশীষ চন্দ্র দাস ট্রেন অবরোধের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও অবরোধকারীদের সাথে কথা বলেন এবং তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে এরুটে সরকারের ট্যালেন নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ