বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দু’দফায় সময় বাড়িয়েও নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না খুলনার আধুনিক কারাগার নির্মাণ কাজ

খুলনা অফিস: দুই দফায় সময় বাড়িয়েও নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি খুলনার আধুনিক কারাগারের। বৃহৎ এ কারাগারের নির্মাণ কাজের সাথে নতুন করে আরও কিছু কাজ যুক্ত হওয়া এবং কারাগারের সামনে থাকা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণেরও প্রস্তাব আসায় কাজ সম্পন্ন হতে বিলম্ব হচ্ছে। কাজ সম্পন্ন হতে আরো প্রায় দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গত বছরের জুনে এ কারাগারের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারিত থাকলেও পরবর্তীতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

খুলনা জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় তিনগুন কারাবন্দী থাকছেন পুরাতন এ কারাগারে। কারাগারের বিভিন্ন ভবনের কক্ষে আটোসাটো করে থাকছেন বন্দীরা। কারা কর্তৃপক্ষ সব কিছু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও বন্দীরা নানা অসুবিধায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। ১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদের তীরে নির্মাণ করা হয় ৬০৮ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জেলা কারাগার। বর্তমানে এ কারাগারে নারী-পুরুষ মিলিয়ে বন্দীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬শ’।

খুলনার গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন জেলা কারাগারের সামনের ভাগে প্রায় ৩ একর জমি নতুন করে অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কারাগারের সামনে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি অনিরাপদ। ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠে কারাগারের নিরাপত্তা বিঘœ ঘটাতে পারে। তাছাড়া কারা অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন ৪ তলা হাসপাতালটি ৫ তলা করণের প্রস্তাব রয়েছে। কারারক্ষীদের বাসভবন আরও স¤প্রসারণ, দর্শনার্থীদের স্থান ও ভবনের বর্ধিতকরণসহ বেশ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগ আরও জানায়, ২০০৮ সালে খুলনায় নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১১ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তা অনুমোদন হয়। এরপর স্থান পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণসহ সকল প্রক্রিয়া শেষে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে আধুনিক কারাগার নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। বাইপাস সড়কের পাশে ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদের হাসানখালী মৌজায় ৫৬ একর জমির ওপর ২৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার বন্দী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ কারাগারের নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। মেয়াদ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে সকল কাজ শেষ করার কথা। তাছাড়া খুলনার নতুন এই কারাগারটি গড়ে তোলা হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে নির্মাণ করা হবে ছোট-বড় ৫২টি ভবন। বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের পৃথক স্থান, মা ও শিশুদের জন্য পৃথক ব্যবস্থাসহ নারীদের ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও পুরুষ বন্দীদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকছে। আরো থাকবে বন্দীদের জন্য স্কুল, আধুনিক লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, সেলুন, লন্ড্রি ইত্যাদি। এছাড়া কারাগারে শিশুদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। শিশুসহ মা বন্দীদের জন্যও থাকবে আলাদা ১টি ওয়ার্ড। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দীদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে। তবে এখন আরও কিছু কাজ সম্প্রসারণের প্রস্তাবনা এসেছে।

খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. ওমর ফারুক বলেন, আধুনিক কারাগারে ইতোমধ্যেই প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। তবে, শেষ হতে দেড় থেকে দু’ বছর সময় লাগতে পারে।

গণপূর্ত বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নতুন করে নানা প্রস্তাবনা আসায় তা সম্ভব হচ্ছে না। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে দু’বছরের মত সময় প্রয়োজন হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ