শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

প্রিয় এই গ্রহের ভবিষ্যতটা কেমন হবে

মহাবিশে^র ছোট্ট একটি গ্রহ আমাদের এই পৃথিবী। সুজলা, সুফলা এই পৃথিবী মানববান্ধব। তাইতো পৃথিবী আমাদের এত প্রিয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, প্রিয় এই পৃথিবীর মানুষ মানুষের বন্ধু হতে পারছে না, বান্ধব হতে পারছে না। এর জ¦লন্ত উদাহরণ ২০১৭ সাল। ২০১৭ সালের আগস্টে আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নৃশংস অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। ওই অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পথে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় ৭ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা। ওই অভিযানে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। গ্রামের পর গ্রাম জ¦ালিয়ে দেয়া হয়। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করা হয়। মিয়ানমার সেনাদের এই নিষ্ঠুর ও বর্বর অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান হিসাবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল। অথচ এত বড় একটি নিষ্ঠুর ও বর্বর অভিযানের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসেনি বর্তমান সভ্যতার শাসকরা। প্রতারণামূলক কিছু শোভন শব্দ অবশ্য উচ্চারিত হয়েছে তাদের মুখ থেকে, এর মাধ্যমে মজলুম রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশায় কোনো তারতম্য ঘটেনি। হতাশাজনক এমন পরিস্থিতিতে ন্যায়বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়ায় আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ করে গত নবেম্বরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করে গাম্বিয়া। সেই মামলায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা রুখতে গত ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক আদেশ দিয়েছেন আইসিজে। আদেশে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে রক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে মিয়ানমার সরকারকে। একই সঙ্গে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে অগ্রগতিমূলক প্রতিবেদন চার মাসের মধ্যে আইসিজেতে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আইসিজের আদেশ যদি মিয়ানমার না মানে তাহলে কী হবে? আইসিজের আদেশের পর পরই মিয়ানমারের অং সান সুচির সরকার জানায়, তাদের দেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোনো গণহত্যা হয়নি। এর আগেও একই দাবি করে দেশটি। অথচ বিশ^বাসী দেখেছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণ ও জ¦ালাও-পোড়াও অভিযান। এদিকে আইসিজের আদেশের বিষয়ে গ্লোবাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ইনিশিয়েটিভ অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টের আইন উপদেষ্টা ও সমন্বয়কারী কিংসলে অ্যাবোট বলেন, ‘গণহত্যা সনদ মতে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় মিয়ানমারকে বাধ্য করার জন্য বৃহস্পতিবারের (২৩/০১/২০২০) আদেশ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আদেশ মানতে মিয়অনমার আইনগতভাবে বাধ্য। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সর্বোচ্চ আদালতের তৈরি করা আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা মানতে এই আদেশ দেশটির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।’ এ ছাড়া আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আইসিজের সিদ্ধান্ত ও আদেশ ছিল সর্বসম্মত।

এখন দেখার বিষয় হলো, মিয়ানমার কী করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উঠলে চীন, রাশিয়াসহ অন্যদেশগুলো ন্যায়ের পক্ষে সঙ্গত ভূমিকা পালন করবে কি-না। সভ্যতার শাসকরা যদি ন্যায়সঙ্গত ভূমিকা পালনে এগিয়ে না আসে, তাহলে আমাদের প্রিয় এই গ্রহের ভবিষ্যতটা কেমন হবে?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ