আইসিজের অন্তর্র্বর্তী আদেশ বাংলাদেশ ও মানবতার জয়
স্টাফ রিপোর্টার: রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্র্বর্তী আদেশে বাংলাদেশ ও মানবতার জয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগ শহরে আইসিজের আদেশের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণহত্যা থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সুরক্ষায় নিজের ক্ষমতার ভেতর থেকে মিয়ানমারকে সব পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আদেশ দিয়েছেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। খবর রয়টার্সের। এর আগে গত মাসে এক সপ্তাহের শুনানির সময় ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি আদালতকে মামলাটি বাদ দিতে অনুরোধ করেছিলেন। আদালত বলেছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতের আদেশ মিয়ানমারের জন্য মানা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া আদেশটি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে।
এদিকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইকুয়েডরে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) সম্মেলনে এই সহায়তা চান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইকুয়েডরে জিএফএমডি’র শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তখন তিনি বলেন, বিশ্বে কোনো দেশই এখন একা চলতে পারে না। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশ তাদের সাময়িক আশ্রয় দিলেও বিপুল মানুষের এই ভার বহন করা সম্ভব নয়। এই সংকট সমাধানে আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা চাই।
ড. মোমেন বলেন, ভবিষ্যতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে যথেষ্ট অবদান রাখার জন্য জিএফএমডিও ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা, অভিবাসনের বিষয়টি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সঙ্গেও দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত রয়েছে। সে কারণে সুশাসন ও উন্নয়নের ইস্যুগুলোর মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকা উচিত। কারণ অভিবাসন কোনো এক দেশের বিকাশের সঙ্গেও জড়িত। তিনি বলেন, আমরা এখন সারাবিশ্বে বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রক্রিয়ায় বিকাশ দেখছি। জিএফএমডিকে আমি অনুরোধ করব এই আঞ্চলিক উদ্যোগগুলোতে অভিবাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হতে হবে। ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি ইকুয়েডরের রাজধানী কিইটোতে ১২তম জিএফএমডি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্ব বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে।
এদিকে রায় সম্পর্কে আদালত বলছে, ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়ার অনুরোধসাপেক্ষে বেশ কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ মঞ্জুর করেন আদালত। গণহত্যা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্র্বতীকালীন জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার যে আবেদন গাম্বিয়া করেছে, তা যৌক্তিক বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। আদালত বলেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্র্বর্তীকালীন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না সেই বিচারের এখতিয়ার জাতিসংঘের এই আদালতের রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশনের ভিত্তিতে এই মামলা করার মতো প্রাথমিক অধিকারও গাম্বিয়ার আছে।
এ বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার নেই বলে মিয়ানমার যে দাবি তুলেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এ বিচারপতি। সনদের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর আওতায় (ধারা ৮ ও ৯) এ মামলা দায়েরের গাম্বিয়ার প্রাইমা ফেসি অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত। আদালত মনে করেন, গণহত্যা সনদের ধারা ২-এর আলোকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী একটি বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী (প্রোটেক্টেড) গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্ব আদালতের এ রায়টি চূড়ান্ত। তবে বাস্তবিক হচ্ছে এটি কার্যকর করার কোনো উপায় নেই।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন চালানো হয়েছে, তার প্রমাণ সংরক্ষণ করতে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং মিয়ানমারকে অবশ্যই চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরবর্তীকালে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রতি ছয় মাস পরে পরে পাঠাতে হবে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। সব মিলিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে সাড়ে ১২ লাখের বেশি নির্যাতিত রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।