শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান তাবিথ-ইশরাকের

(১) ঢাকা উত্তর বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল (২) ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার : সকল ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকার দুই সিটিতে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন এবং তাবিথ আউয়াল। গতকাল শনিবার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণাকালে ঢাকাবাসীর কাছে এ আহ্বান জানান তারা।
নির্বাচনী প্রচারণার নবম দিন গতকাল শনিবার কোতয়ালী থানাধীন বাংলাবাজার চৌরাস্তা মোড় থেকে গণসংযোগ শুরু করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক। এসময় তিনি বলেন, ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই জোয়ারে সকারের সব চক্রান্ত ভেসে যাবে। তিনি বলেন, ভোট বিহীন এ সরকারের জনগণের কাছে কোন জবাবদিহিতা নেই। জবাবদিহিতা না থাকায় দেশকে যেমন ধ্বংস করা হয়েছে, তেমনি ঢাকা শহরকেও দুনিয়ার সব থেকে অবাসযোগ্য দূষিত শহরে পরিণত করেছে।
ইশরাক বলেন, আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণের গনতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়াসহ ঢাকাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেব। ক্লিন ঢাকা গড়ে তুলতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। বাংলাবাজার মোড় থেকে আহসান উল্লাহ মঞ্জিল, ইসলামপুর, আহসান উল্লাহ রোড, নবাববাড়ি গেট, জিন্দাবাহার, বাওয়ানী স্কুলের গলি, আরমানিটোলা, নয়াবাজারের বাগডাসা লেন, সাত রওজা, আগামসিহ লেন, সিদ্দিক বাজার, কাপ্তান বাজার হয়ে জয়কালি মন্দিরের সামনে গিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
গণসংযোগকালে সড়কের দুই পাশের দোকানপাট ও পথচারিদের হাতে লিফলেট বিতরণ এবং দোকানে দোকানে গিয়ে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এসময় তিনি আশপাশের বাড়িঘরে বসবাসকারি নারী-পুরুষের কাছে ভোট চেয়েছেন হাতের ইশারায়। এদিন বিভিন্ন এলাকায় নারী ভোটাররা দলবেঁধে ইশরাক হোসেনকে ফুল দিয়ে বরণ করতে দেখা যায়। কেউ কেউ তাকে ফুলের মালাও পরিয়ে দেন।
গণসংযোগ চলাকালে নারী-পুরুষসহ অনেকে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন কি-না এ নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান ইশরাক হোসেনকে। তিনিও অভয় দিয়ে তাদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার কথা বলেছেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, এসএম জিলানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, রফিক শিকদার, শরিফ হোসেনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এবং স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গণসংযোগে অংশ নেন।
গণসংযোগে ‘নারী-পুরুষ বাঁধছে জোট- ধানের শীষে দিব ভোট, ইশরাক ভাইয়ের ভয় নাই- রাজপথ ছাড়ি নাই; উন্নয়নের মার্কা- ধানের শীষ মার্কা; ঢাকার ছেলে ইশরাক ভাই- ধানের শীষে ভোট চাই; মাগো তোমার একটি ভোটে- খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে; আসছে দেশে শুভ দিন- ধানের শীষে ভোট দিন; ইশরাক ভাই ভালো লোক- ধানের শীষে দিব ভোট’ ইত্যাদি শ্লোগানে শ্লোগানে সমগ্র এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। এসময় রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ হাত তুলে, অনেককে উঁচু দালানের ছাদে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে ধানের শীষের পক্ষে সমর্থন দিতে দেখা যায়।
অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার জ্যেষ্ঠ পুত্র ইশরাক হোসেন নগরবাসির উদ্দেশ্যে বলেন, আগামি ৩০ তারিখ আপনারা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। জনগণের রায় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা দলবেঁধে ভোট কেন্দ্রে গেলে সরকারের সকল অপকৌশল গণজোয়ারে ভেসে যাবে।
ইশরাক বলেন, এই সরকার জনগণের সকল অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। জনগণের এই হারানো অধিকার আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। আমি আপনাদের ভোটাধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনবো। আপনারা শুধু ৩০ তারিখ ভোট কেন্দ্রে আসুন। নির্বাচিত হলে নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, গত ১৩ বছরে ঢাকা ধ্বংস করা হয়েছে। বাস অনুপযোগী এই শহরকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলাই হবে আমার প্রধান কাজ।
ইশরাক হোসেন বলেন, আমি গতকাল কদমতলী, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকার বেহাল অবস্থা দেখেছি। এই চিত্র শুধু যাত্রাবাড়ী, কদমতলী অথবা শ্যামপুরেরই নয়। এটা পুরো ঢাকারই চিত্র। এর কারণ, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা অনির্বাচিত। ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে। অনির্বাচিত সরকার ও মেয়রের জবাবদিহিতা না থাকায় ঢাকার এই বেহাল অবস্থা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নীমতলীর ট্র্যাজেডি আর নয়
পুরান ঢাকার নিমতলীতে ২০১০ সালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ব্যাপাক জানমালের ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, আমরা নিমতলীর ট্র্যাজিডির মত আর কোন ঘটনা দেখতে চাইনা। আমরা প্রাণহানির মত পরিবেশের অবসান চাই। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ইনশাল্লাহ আমি মেয়র নির্বাচিত হলে এই এলাকাকে ঢেলে সাজানো হবে। নিরাপদ করে গড়ে তোলার জন্য যা যা করণীয় সব কিছু করব।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি'র মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামের বক্তব্যে ইভিএম নিয়ে আমাদের যে শঙ্কা সেটি প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জাল ভোট ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে কিনা, এটি এখন ভোটারদের মূল প্রশ্ন। গতকাল সকালে খিলগাঁও তালতলা এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তাবিথ আউয়াল বলেন, একজন নির্বাচন কমিশনার গতকাল স্পষ্ট করেই বলেছেন ‘কেন্দ্র দখল করা গেলে ইভিএমে জাল ভোট দেয়া যাবে। তার এই বক্তব্যের পর ইভিএম নিয়ে আমাদের বক্তব্য সত্য প্রমাণিত হয়েছে, আশঙ্কা আরো বেড়েছে। কারণ, ক্ষমতাসীনরা কেন্দ্র দখল করতে চাইলে নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে কিনা এ প্রশ্ন ভোটারদের রয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিতে চায়, ভোট দেয়ার পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব ইসির। তিনি বলেন, ভোটারদের মধ্যে কিছুটা ভয়-ভীতি কাজ করছে ঠিকই কিন্তু এবার তারা সব ভয়-ভীতি উপেক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে প্রস্তুত রয়েছে। ভোটাররা চায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে।
তাবিথ আউয়াল বলেন, সব ভোট কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় নিরাত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ভোটাররা আমাদের জানিয়েছেন যত বাধাই আসুন না কেনো তারা সব মোকাবেলা করে কেন্দ্র যাবেন, ভোট দেবেন।
তিনি আরো বলেন, ভোটকেন্দ্রে আমরা থাকবো, নেতা-কর্মীরা থাকবে, এবার জনগণও থাকবে। আমাদের উপর প্রতিপক্ষ হামলা করলেও আমরা শক্ত অবস্থানে থাকবো। আমরা আইন মেনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ভয়-ভীতি আমাদেরকে কাবু করতে পারবে না। তাবিথ বলেন, আমরা দায়িত্ব পেলে দুর্নীতিমুক্ত একটি সিটি করপোরেশন উপহার দিতে পারবো।
তিনি বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলর সবাইকে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হবে। তাহলে মানুষের সেবা নিশ্চিত হবে। পার্ক, খেলার মাঠ, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে হবে। শুধু প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে না, কাজ করতে হবে। আমরা দায়িত্ব পেলে কাজ করে দেখিয়ে দিতে চাই।
দলের নেতাকর্মীরা আগামী ৩০ তারিখ নির্বাচনে ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানে সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
তিনি বলেন, মানুষের গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে। এখন জনগণ ভোট দিতে পারে না। এবার বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোটারদের সাহস জোগাবে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে এবং ভোটারেরা যাতে সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিতে পারে সে সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনারের উপর আস্থা মানুষের নেই। তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও আমরা দেখতে চাই নির্বাচন কমিশন কী করে। সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে  গণসংযোগে অংশ নেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হোসেন, নিপুন রায় চৌধুরী, আকরামুল হাসান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, কাউন্সিলর প্রার্থী হেলাল কবির হেলু, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়ালের পক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন ঢাকাস্থ বরিশাল ঐক্যজোট। এসময় সংগঠনটির নেতা কর্মীরা আগামী ৩০ তারিখ ধানের শীষে তাবিথ আওয়ালকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মুজিবর রহমান সারোয়ারসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
সকালে ২৩নং ওয়ার্ডের খিলগাঁও তালতলা মার্কেট থেকে আজকের গণসংযোগ শুরু হয়। এরপর ২২, ৩৬ ও ৩৫ ওয়ার্ডে গণসংযোগে রয়েছেন তাবিথ আউয়াল। এদিকে বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু সকাল ১১টায় ১৩ সেক্টরের স্কলাস্টিকা স্কুলের পাশে ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয় এলাকা ও ১৪নং ওয়ার্ডে গণসংযোগে রয়েছেন। তার স্ত্রী ও তাবিথ আউয়ালের মা নাসরিন আউয়াল মিন্টু ১৭নং ওয়ার্ডের খিলক্ষেত কুড়িল কাজীবাড়ী থেকে গণসংযোগ শুরু করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ