শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনার ফার্মেসীগুলো নকল ওষুধে সয়লাব

খুলনা অফিস : ‘যে ওষুধ আমার বাচ্চাকে আমি খাওয়াবো না, আমার স্ত্রীকে খাওয়াবো না, আমার পরিবার-পরিজনকে খাওয়াবো না’- ‘সেই ওষুধ আমি কেনো বিক্রয় করি। আমার তো এই ওষুধ বিক্রয় করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। যারা এই ওষুধ বিক্রয় করে তারা অবশ্যই জেনে শুনে বিক্রয় করেন। একটা হসপিটালের মাল বিক্রয় করলে চুরির অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, বিদেশের ওষুধ অবৈধভাবে আনলে রাষ্ট্রদোহিতার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু একটা জীবনরক্ষাকারী ওষুধ না দিয়ে নকল ভেজাল ওষুধ বিক্রয় করা মনেই হত্যার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। নকল ভেজাল ওষুধে উৎসাহ কোথায়-এগুলো তৈরি করে কোনো কোম্পানি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। শুক্রবার নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে বাংলাদেশ মডেল ফার্মেসী ও মডেল মেডিসিন সপ এর প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ সব কথা তুলে ধরে।
বিসিডিএস খুলনা জেলা শাখা এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। বিসিডিএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও খুলনা জেলা শাখার সভাপতি মো. মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ, খুলনা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বিপিএম, খুলনা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইদুল ইসলাম, খুলনার ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ, বিসিডিএস কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক ও খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম কবির উদ্দিন বাবলু। স্বাগত বক্তৃতা করেন ম্যানেজমেন্ট সাইন্সেস ফর হেলথ ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক ডাা. ইফতেখার হাসান খান।
সভায় প্রধান অতিথি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধের জন্য আপাতত যে পদ্ধতি রয়েছে দোকানদারকে ইনভয়েসের মাধ্যমে ওষুধ কিনার জন্য অনুরোধ করেন। কোম্পানির অথোরাইজ যে প্রতিনিধি আছে তার কাছ থেকে ওষুধ নিতে হবে। এর বাইরে নকল ও ভেজাল ওষুধ ঠেকানো সম্ভব না। ফিজিসিয়ান স্যাম্পল ওষুধ কোনো দোকানদার বিক্রয় করতে পারবে না। এটা আমাদের আইনগত নিষিদ্ধ। এটা করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা কোম্পানির ফিজিসিয়ান স্যাম্পল (ওষুধ) বিক্রয় না করেন- এ বিষয়ে তিনি খুলনা ডেপুটি সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া এই স্যাম্পল ওষুধগুলো ওষুধ ফার্মেসী দোকানীদের না কেনার জন্য নিদের্শনা প্রদান করেন।
বিসিডিএস কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক ও খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম কবির উদ্দিন বাবলু বলেন, যতো দিন ওষুধ কোম্পানির ওষুধ ভিজিট করা হবে, ততোদিন ফিজিসিয়ান স্যাম্পল দোকানে পাওয়া যাবে। স্যাম্পল আলাদা কালারের করা হোক, অথবা বন্ধ করা হোক। কারণ আমাদের সাধারণ কেমিস্ট স্যাম্পল ওষুধ আসলে বিক্রয় করতে চায় না- পরিস্থিতির শিকার। এদেশের এই যাদের সার্টিফিকেট নিয়ে আমাদের চলতে হয় সেই ডাক্তার যখন স্যাম্পল বিক্রয় করে দেন দোকারদারদের কাছে- তখন এই ওষুধ দোকান কি করবে? স্যাম্পল ওষুধ দোকানদারের কাছে পেলে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মডেল বাংলাদেশ, মডেল ফার্মেসী ও মডেল মেডিসিন সপ তৈরির আগে নিজেকে তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, অস্ট্রোক্যাল-ডি ট্যান্সকম কোম্পানি যার মূল্য হলো ২১০ টাকা, আমরা কিনি ১৯০ টাকায়। ঠিক একই রকমে দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র ১২ টাকা দুইটা প্যাকেট দেখতে একই রকম। এ রকম হাজারও এই ধরনের ওষুধ আছে। আরেকটি ‘মনিস’ ক্যাপসুল এমআরপি দেড় হাজার টাকা কেনা আছে, শুধুমাত্র ১শ’ টাকা একটা বক্সের দাম। ফর্মেসী ট্রেনিং এবং লাইসেন্স প্রদানের প্রসঙ্গে বলেন, যে কয়টা বৈধ লাইসেন্স আছে তার চেয়ে অবৈধ লাইসেন্স বেশি। খুলনায় এমন কোনো মাস নেই দুই একটা লাইসেন্সহীন ওষুধের দোকান হচ্ছে না। কিভাবে আগামী দিনে লাইসন্সেবিহীন দোকানগুলো বন্ধ করা যায় সেটা ভাবতে হবে। অথবা শুধুমাত্র মানসম্মত দোকানকে লাইসেন্স দিতে হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, নকল ওষুধের কথা আমরা অনেক শুনেছি, আমি কিন্তু দেখিনি। সত্যি কথা বলতে এতো দিন ডাক্তারি করছি, নকল ওষুধ চোখে পড়েনি, আজকে দেখলাম নকল ওষুধ কাকে বলে। একনজরে দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটা আসল, কোনটা নকল। প্রশাসন যদি ঠিক থাকে, তাহলে এই চক্রকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, আড়াইশ’র ওপরে মেডিসিন কোম্পানি রয়েছে দেশে। এর মধ্যে অনেক কোম্পানি মানহীন ওষুধ উৎপাদন করে।
বিসিডিএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও খুলনা জেলা শাখার সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সাবস্ট্যান্ডার্ড- নিম্নমানের ওষুধ তো ভালো দোকানদার বিক্রয় করে না। যাদের পুঁজি নেই, একটা দোকান খুলে বসছেন, সামান্য কিছু সেল হচ্ছে- তারা এই নকল ওষুধ বিক্রয় করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ