বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দুর্ভাবনার এক রাতে

হেলাল আরিফীন  : আজ আবার মনটা হুট করে খারাপ হলো রায়হানের । আর একবার মনটা খারাপ হয়ে গেলে সহজে ভালো হয় না। নীলা আজও এলো না । একটা ফোন করারও প্রয়োজন মনে করল না ও। হুম, এমনই হয় । সময়ে সব সম্পর্কই বোধহয় একদিন ফিকে হয়ে যায় । রায়হানই ওর নম্বরে রিং করল কয়েকবার। কিন্তু ফোনটা বন্ধ পেল ও । আচ্ছা, নীলার কিছু হয়নি তো ? দুশ্চিন্তারও অন্ত নেই । আজকাল কত কিছুই হতে পারে রাস্তাঘাটে। না, আর ভাবতে পারছে না রায়হান। সোফায় নিজেকে এলিয়ে দিয়ে বসল ও । রাত এগারটা বাজতে চলল। নীলা আজকে আর আসবে না । ঘুমিয়ে পড়া দরকার । একটু ঝিমুনি আসতে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ল ও । কয়েকবার বেল টিপে কোন সাড়া না পেয়ে চাবি দিয়ে ইয়েল লকটা খুলে ভেতরে ঢুকল নীলা । রায়হানকে সোফায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বলল, এই , কোথায় ঘুমিয়েছ ? ঘুম পেয়েছে, বিছানায় গিয়ে ঘুমাবে না ? সোফাতেই ঘুমিয়ে কাদা হতে হবে ? 

রায়হান কাঁচা ঘুম থেকে জেগে গিয়ে নীলাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে বলল, তু—তুমি ? এত রাতে কীভাবে এলে ?

নীলা মৃদু হেসে বলল , এলাম একভাবে । রাতে খেয়েছ কিছু ?

না । 

তার মানে তুমি খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছ ? ফ্রিজে খাবার টাবার নেই ? ফুরিয়ে গেছে সব ? 

না, এখনও ফুরায়নি। কম তো আর রান্না করে রেখে যাওনি যে ফুরিয়ে যাবে ? 

তাহলে ফ্রেশ হয়ে দুচোখ থেকে ঘুমটা তাড়াও। আমি কাপড়চোপড় পাল্টে খাবার টেবিলে আসছি। 

রায়হান হাতমুখ ধুয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে বসল। নীলা মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করে দুটি প্লেটে পরিবেশন করতে করতে বলল, একা একা কেমন ছিলে? খুব ভাল? 

রায়হান অনুযোগের স্বরে বলল, তুমি বাসায় না থাকলেই বুঝি আমি ভালো থাকি? 

নীলা অভিমানী গলায় বলল, আমি বাসায় থাকলে এটাসেটা নিয়ে তোমার ভুল ধরি। তোমার সাথে যেঁচে ঝগড়া করি। কী করব বল, তোমার সাথে ঝগড়া করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। 

রায়হান গম্ভীর গলায় বলল, তোমার ফোন বন্ধ ছিল কেন? সেই সন্ধ্যা থেকে চেষ্টা করছি। দুঃখিত দুঃখিত শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। 

নীলার মুখটা হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে গেল। রায়হান ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, কী ব্যাপার, কী ভাবছ? 

নীলা কিছু না বলে খাবারের প্লেটটা বাড়িয়ে দিল রায়হানের দিকে। প্লেটটা নেয়ার জন্য হাত বাড়াতেই রায়হানের হাত ফসকে মেঝেতে পড়ে ভেঙে অনেকগুলো টুকরোয় ছড়িয়ে পড়ল সেটি। আর তখনই ঘুম থেকে সত্যিকারার্থে জেগে উঠল রায়হান। পাশের সোফাটায় মোবাইল ফোনটাতে অনবরত রিং বাজছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কে একজন গম্ভীর গলায় বললেন, আপনি কি রায়হান বলছেন? 

জি, আপনি? 

আমি অ্যাপোলো হসপিটাল থেকে ডক্টর শিলা বলছি। 

রায়হান শংকিত গলায় বললেন , অ্যাপোলো হসপিটাল------ জি, বলুন!

নীলা কি আপনার স্ত্রী? 

জি ডক্টর--- কী হয়েছে ওর----!

আপনি এখনই আমাদের হসপিটালে চলে আসুন। 

কেন , কী হয়েছে ওর!

আপনার স্ত্রী অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ