মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

২৯ লাখ মোটরবাইকের দখলে সড়ক ॥ দুর্ঘটনায়ও শীর্ষে

 

* নিবন্ধিত মোটরবাইক ২৮ লাখ ৫৩ হাজার

* লাইসেন্সধারী বাইক চালক ১৩ লাখ ৬০ হাজার

* ২০১৯ সালে বাইক দুর্ঘটনা ১ হাজার ৯৮টি

নাছির উদ্দিন শোয়েব: ‘রাইড শেয়ারিং’ এর নামে ঢাকার সড়কে কত সংখ্যক মোটরবাইক চলছে এর সংখ্যা কারো জানা নেই। এমনকি বিআরটিএ’র কাছেও সঠিক তথ্য নেই। বলা যায়, ঢাকার সড়ক এখন মোটরবাইকের দখলে। বিআরটিএর-সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী-সারাদেশে প্রায় ২৯ লাখ মোটরবাইক নিবন্ধিত আছে। তবে নিবন্ধন ছাড়াও চলছে আরও বহু মোটরবাইক। আর দুর্ঘটনার শীর্ষেও রয়েছে এ বাহনটি। 

বেসরকারি সংস্থা নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মোটরবাইকের স্থান শীর্ষে। গবেষকরা বলছেন, সারাদেশে এখন বাস-মিনিবাস, ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয় মোটরবাইকে। এর পরই রয়েছে ট্রাকের স্থান। দিন দিন এই যানের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ব্যবহারের কারণে বাড়ছে লাইসেন্সবিহীন মোটরবাইকের চালক।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএ বলছে, দেশে এখন নিবন্ধিত মোট যানবাহন ৪৩ লাখ এক হাজার ৬১০টি। এরমধ্যে মোটরবাইকের সংখ্যা ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৯টি। যা মোট যানের অর্ধেকেরও বেশি। তবে ২৮ লাখ মোটরবাইকের বিপরীতে লাইসেন্সধারী মোটরবাইক চালক আছেন ১৩ লাখ ৬০ হাজার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটরবাইক দুর্ঘটনা শীর্ষে থাকার প্রধান কারণ হেলমেট ব্যবহার না করার প্রবণতা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও বেপরোয়া ড্রাইভিং। আর অদক্ষ এবং লাইসেন্সবিহীন চালকতো আছেই। 

সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালে মোট চার হাজার ৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ২২৭ হন নিহত হয়। এসব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সর্বোচ্চ সংখ্যায় এক হাজার ৯৮টি মোটরবাইক দায়ী। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রাক। এ যানবাহনটি মোট ১০৩টি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। বাস রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে, ৯৯২টি। মোট নিহতের ১৯ ভাগ ছিল মোটরবাইক দুর্ঘটনায়। তবে ২০১৮ সালের তুলনায় তা কিছুটা কম। সে বছর ছিলো ২১ ভাগ। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশের সড়কেই বাড়ছে মোটরবাইকের সংখ্যা। 

বিআরটিএ-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে বাংলাদেশে নিবন্ধিত মোটরবাইকের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৭৬ হাজার। ২০১৬ সালে তিন লাখ ৩২ হাজার, ২০১৭ সালে তিন লাখ ৯৫ হাজার, ২০১৮ সালে তিন লাখ ৯৫ হাজার এবং ২০১৯ সালে চার লাখ সাত হাজার নতুন মটরবাইকের নিবন্ধন দিয়েছে দিয়েছে সংস্থাটি। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. এস এম সোহেল মাহমুদ বলেছেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই মোটরবাইক থ্রি ও ফোর হুইলারের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ ভাগ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এটি দুই চাকার ওপর চলাচল করে। বাংলাদেশে বাস্তবে মোটরবাইকের দুর্ঘটনার হার অনেক বেশি। সব তথ্য রিপোর্টে আসে না। সম্প্রতি তিনি একটি গুমাধ্যমকে বলেন, রাইড শেয়ারিং-এর নামে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যে বিপুল পরিমাণ মোটরবাইক নেমেছে তা ইতিমধ্যেই সংকট তৈরি করছে। এখন প্রচুর ফ্রিল্যান্স মোটরবাইকার আছে। ফলে নিরাপত্তা ও সড়ক ব্যবহারের দিক থেকে বড় সংকট তৈরি করবে যদি এখনই নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়। ভিয়েতমান, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া এরইমধ্যে এই সংকটে পড়েছে। তাদের সড়ক দুর্ঘটনার ৬০ ভাগ এখন মোটরবাইকের কারণে। ঢাকা শহরে মোট কত মোটরবাইক চলাচল করছে তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ যেখান থেকেই মোটরবাইক নিবন্ধন করা হোক না কেন তা সারাদেশেই চলতে পারে। তবে ঢাকা শহর থেকে নিবন্ধিত মোটরবাইকের সংখ্যা সাত লাখেরও বেশি। আর গত তিন বছরে যে বিপুল পরিমান মোটরবাইকের নিবন্ধন হয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য রাইড শেয়ারিং। রাইডশেয়ারিং-এর জন্য ঢাকার বাইরে নিবন্ধিত মোটরবাইকও ঢাকায় আসছে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেছেন, সব অবৈধ যান ও চালকদের বিষয়ে পুলিশ সচেতন। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। মোটরবাইক একসময় অনিয়ন্ত্রিত ছিল, এখন সব চালক হেলমেট পড়ছেন, কাগজপত্রও ঠিক রাখছেন। কেউ আইন অমান্য করলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 

মোটরবাইক দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের মতে, মোটরবাইকের সংখ্যা বিবেচনায় দুর্ঘটনায় এ যানবাহনটি শীর্ষে নয়। কারণ ২৭ লাখ মোটরবাইকের মধ্যে এক হাজারের কিছু বেশি মোটরবাইক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। আর চার লাখ বাস ট্রাক মিলে দায়ী ৪০ ভাগ। তবে নানা কারণে মোটরবাইক এখন রাজধানীতে আরেকটি ভীতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরে মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট পরিধানের সুঅভ্যাস গড়ে উঠেছে। কিন্তু জেলা ও গ্রাম-গঞ্জে হেলমেট না পরার প্রবণতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের মোটরসাইকেল চালনায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরও প্রশাসনের সামনে দিয়ে লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল ও অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোররা মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। এছাড়াও দুয়ের অধিক আরোহী নেয়া, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো ও চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে কথা বলাই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ