শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

প্রচন্ড শীতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই ৫ শতাধিক বস্তিবাসীর

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর হাজারীবাগের কালশী বাউনিয়া বাঁধ এলাকার বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রায় দুই শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ অগ্নিকান্ড ঘটে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীরা চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন। সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় প্রচন্ড শীতে মাথা গোঁজার ঠাইটুকু হারিয়ে ফেলছেন অনেকেই।
শীতের মধ্যে নারী-শিশু, বৃদ্ধরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আগুন লাগার পর অনেই ঘর থেকে কোনো শীতবস্ত্র বা আসবাবপত্র বের করতে পারেনি। হাড়কাঁপুনি শীতে পুড়ে যাওয়া বস্তিবাসীরা খোলা আকাশের নীচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কেই কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে ও আশেপাশের ভবনের ছাদের নিচেও আশ্রয় নিয়েছেন।
সুবেদ আলি নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী বলেন, ঘরে রাতের খাবার শেষ করে স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে ৮টার দিকে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যান। রাত পৌনে ৩টার দিকে যখন বস্তিতে ফেরেন ততক্ষণে সব পুড়ে শেষ। বসবাসের যে জায়গাটিকে যাওয়ার সময় প্রাণবন্ত রেখে গেছেন, ফিরেই দেখেন সে বস্তির একাংশ কয়লায় পরিণত হয়েছে। ফিরেই স্ত্রী-সন্তানের চিন্তায় অনর্গল কান্না করতে থাকেন তিনি। পরে জানতে পারেন, পরিবারের সবাই নিরাপদে ঘর থেকে বেরিয়েছেন। তবে শীতের রাতে গায়ে থাকা কাপড় ছাড়া আর কিছুই নিয়ে বের হতে পারেননি তার স্ত্রী-সন্তানরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত সোয়া ১২টার পরপরই মূলত ওই বস্তিত আগুন লাগে। তবে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর আগুনের খবর পায় রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে। এরপর সেখানে পাঁচটি ইউনিট পাঠানো হয়। পরে পাঠানো হয় আরও ছয়টি ইউনিট। ১১ ইউনিটের চেষ্টায় রাত সোয়া ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ততক্ষণে আগুনে পুড়ে যায় বস্তিটির প্রায় দুই শতাধিক ঘর। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাউনিয়া বাঁধের ওই বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ থেকে জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসী। তবে টিন ও ঘরের লোহার আসবাবপত্র কিছুটা উদ্ধারযোগ্য হলেও বাকি সব কয়লাই। সেসবই টেনে বের করে আনছেন সর্বহারা বস্তিবাসী।
আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপের উপর মুখে হাত দিয়ে বসে থাকা ভাঙারি দোকানদার রহমত আলী বলেন তিনি ওই বস্তিতে আছেন দীর্ঘদিন। তিনি বলেন, দোকান বন্ধ কইরা স্ত্রী রিনা আক্তার ও চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঘুমাইছি। ঘুমের মধ্যে মানুষের চিৎকার। বাইরে বাহির হইতেই আগুনের তাপ লাগে। ঘরে ঢুকেই চিৎকার দিছি। সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যাই। আগুন নেভার পর দোকান কিংবা বসবাসের ঘর বলতে কিচ্ছু নাই। গরু পুড়ছে, দোকান পুড়ছে, ঘর পুড়ছে। সব পুড়ে মাটির সাথে মিশে একাকার।
রহিমা বেগম নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত নারী বলেন, আগুন লাগছে বলতে পারিনি। কারণ বস্তির শেষ প্রান্তে বাসা ছিলাম। আগুনের খবরে ছুটে আইসা দেখি দোকান পুড়তাছে। আহাজারি করছি। কিন্তু দোকান বাঁচাতে পারিনি। দুই সন্তানের মা ফাতেমা বেগম সব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আনন্দ নিকেতন মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে। সেখানে খাবারের অপেক্ষায় আছেন দুই সন্তানকে নিয়ে। স্বামী শাহজাহান ময়লা গাড়িতে কাজ করেন।
তিনি বলেন, ঘর, জিনিসপত্র বাঁচামু নাকি বাচ্চাদের নিয়া জান বাঁচামু। কোনোরকমে বাইরে আইছি, চোখের সামনে চেয়ে চেয়ে সব পুড়তে দেখছি, কিন্তু কিছুই করার ছিল না। এখন সব শেষ। কষ্ট লাগতেছে, শীতের সময়ে বাচ্চাদের পরনের লাগি কোনো শীতের কাপড়ও নিতে পারি নাই।
স্থানীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৬ আসন) মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, বস্তিটিতে লাগা আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের রাতের থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক বেলায় তাদের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় আরমান স্কুল ও আনন্দ নিকেতনে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গরম কাপড় বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ