শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ক্ষমতাসীন আ’লীগ মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করছে

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টন বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির উদ্যোগে বিজয় র‌্যালি বের করা হয় -সংগ্রাম

# ঠিক ৪৮ বছর পরে কী প্রয়োজন হলো রাজাকারের তালিকা তৈরি করার
# আ’লীগ বিচার বিভাগ ও মিডিয়াকে পর্যন্ত আজকে নিয়ন্ত্রণ করছে
স্টাফ রিপোর্টার : প্রকৃত রাজাকারদের বাদ দিতেই সরকার পাকিস্তানিদের তৈরি করা তালিকা প্রকাশ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার বিকালে বিজয় র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন তারা অনেক কথা বলেছে এবং রাজাকারের তালিকা তৈরি করেছে। ঠিক ৪৮ বছর পরে কী প্রয়োজন হলো তালিকা তৈরি করার। রাজাকারের তালিকা ৪৮ বছর পরে তৈরি করার মধ্যে বলছেন যে, অনেক ভুল আছে। এটা কেনো ভুল? ওটা পাকিস্তানিদের তৈরি করা তালিকা। তাহলে পাকিস্তানিদের তৈরি করা তালিকা দিয়ে আপনি রাজাকারের তালিকা দেবেন- সেটা আপনার তালিকা তো হবে না, এদেশের তালিকা তো হবে না। আমি বলতে চাই, এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। দৃষ্টিভঙ্গিটা রাজনৈতিক। তারা মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক একটা প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করে, এটা তাদের একটা প্রোডাক্ট। ঠিক একইভাবে আজকে এই রাজাকারের তালিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এই সমস্ত তৈরি করে আসল মুক্তিযোদ্ধাদের, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে, প্রকৃত রাজাকার যারা তাদেরকে বাদ দিয়ে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পারে সেই ধরণে তালিকা প্রস্তুত করতে চায়।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিকাল তিনটায় বিজয়র‌্যালী শুরু হয়ে শান্তিনগর মোড় হয়ে আবার পল্টনের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য ব্যানার-ফেস্টুন-জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা, জিয়্উার রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি নিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মী এই র‌্যালিতে অংশ নেয়। র‌্যালিতে বড় আকারের জাতীয় পতাকা এবং দলীয় পতাকা ও ব্যান্ড সঙ্গীতের দলও ছিল। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ মোড় থেকে যখন র‌্যালি শুরু হয় তখন নয়া পল্টন থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত সড়কে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঢল নামে, তিল পরিমাণ মানুষের ঠাঁই ছিল না ওই সড়কে। র‌্যালি শুরু হওয়ার পর অতি কম  সময়ের মধ্যে শান্তিনগরে মোড়ে পৌছায় র‌্যালির প্রথম ভাগ তখন শেষ ভাগ ছিলো নয়া পল্টনের সামনেই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করে বলেন,  এরা (আওয়ামী লীগ) দাবি করে তারা নাকী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত চেতনাগুলোতে এরাই ধ্বংস করেছে, এরাই স্বাধীনতার পরে জনগনকে প্রতারণা করে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই আওয়ামী লীগই সেদিন মানুষের সমস্ত বাক স্বাধীনতা হরণ করে দিয়ে চারটা পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা সেই কথা ভুলে যাইনি। আমরা জানি যে, সেই আওয়ামী লীগের আমলেই এই দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, এদেশে লাথ লাখ মানুষ সেদিন না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছিল। সেই আওয়ামী লীগই আজকে আবার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে আজকে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। তারা সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। এই রাষ্ট্রকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের অর্থনীতি ধবংস করে দিয়েছে, তারা বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে। মিডিয়াকে পর্যন্ত তারা আজকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে দেশে কোথাও গণতন্ত্রের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, বেদনা-ক্ষোভ-ব্যথা নিয়ে আমরা এই বিজয় র‌্যালিতে অংশ নিচ্ছি। আজকের র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেয়ার কথা আমাদের মহান নেত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী যিনি একাত্তর সালে পাক সেনাদের হাতে বন্দি হয়েছিলেন সেই নেত্রী আজকে আমরা স্মরণ করছি। একই সঙ্গে স্মরণ করতে চাই- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যিনি সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে একটা হতাশ জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। যখন রাজনৈতিক নেতারা পালিয়ে গিয়েছিলো তখন তিনি সামনে এসে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা করে আমাদের যুদ্ধে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। আমরা স্মরণ করতে চাই যেসময়ের মুক্তিযোদ্ধাদের যারা তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ৪৮ বছর পরে সেই স্বাধীনতা নিয়ে এসে কী বলতে হচ্ছে? কী দেখতে হচ্ছে? একাত্তর সালে যে চেতনা ও যে স্বপ্ন-আশা নিয়ে আমরা যুদ্ধে নেমেছিলাম সেই আশা, সেই স্বপ্ন, সেই চেতনা সব কিছু ভেঙে খান খান হয়ে গেলো। আমাদের সেই গণতন্ত্রের যে স্বপ্ন, গণতন্ত্রের যে চেতনা, গণতন্ত্রের যে আকাংখা, সেই আকাংখাকে এই দখলদারি সরকার যারা আজকে সম্পূর্ণ জোর করে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে রাষ্ট্র যন্ত্রকে বে আইনিভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা এদেশের মানুষের সমস্ত আকাংখাকে ভেঙে দিয়েছে। যারা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেন তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়, মামলা দেয়া হয়, গুম করে দেয়া হয়। আমাদের যে নেত্রী যিনি দেশের গণতন্ত্রের জন্য তার সারাটা জ্বীন ধরে লড়াই করেছেন, যিন্ িএখনো কারাগারে আছেন তাকে জেলে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে দুর্বার আন্দোলনের জন্য সকলকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র আওয়ামী লীগের বাক্সে বন্দি। এই একটি সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য সারা দেশের মানুষ শান্তিতে নেই। এই অন্যায়-অত্যাচার, এই ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে না পারলে আমরা আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবো না, আমাদের এদেশের জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো না, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারবো না। আজকে এই বিজয় র‌্যালীতে এদেশের জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক সকল জনগনের কাছে আমাদের আমাদের আবেদন-আহবান- আপনারা যে যে অবস্থানে আছেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে এই দেশের এই যে জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে সেই স্বৈরাচারের পতনের আন্দোলন এবং দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে আপনারা সকলে ঐক্যবদ্ধ হোন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, বিজয় অর্জন করেছিলাম, আজকে আমাদের সেই বিজয়ের আনন্দ ধুলিসাত হয়ে গেছে। এই বিজয় দিবসে আমাদের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে বন্দি আছেন। আমরা তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে পারি নাই-এটা আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় যদি আমরা ব্যর্থ হয়ে থাকি , ইনশাল্লাহ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা মুক্ত করবো। প্রস্তুত হোন। ইনশাল্লাহ আমরা সমস্ত ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে জেলের তালা ভেঙে আমরা মুক্ত করব। ইতিপূর্বে আমাদের বহু নেতা-কর্মী রক্ত দিয়েছে, সামনে আমাদের আরো রক্ত দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে আমাদের উল্লাসের দিন নয়, আমাদের ভাববার দিন- গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এদেশের জেলখানায় জেলখানায় আবদ্ধ রেখে আমাদের এই উল্লাস কতটুকু মানাসই। আসুন আমরা মরি বাচি, আমরা ডু অর ডাই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি, বাংলাদেশকে মুক্ত করি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের পরিচালনায় র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানও বক্তব্য রাখেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর র‌্যালি শুরু হয়। বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটি সদস্যরা পায়ে হেটে র‌্যালিতে অংশ নেন।
এই র‌্যালিতে বিএনপির মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, কামরুজ্জামান রতন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শিরিন সুলতানা, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সেলিম রেজা হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, আবদুল আউয়াল খান, হারুনুর রশীদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মাশুকুর রহমান, আমিরুজ্জামান শিমুল, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, নিপুন রায় চৌধুরী, মারুফ হোসেন, অঙ্গসংগঠনের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, কাজী আবুল বাশার, বজলুল বাসিত আনজু, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদুর, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, আনোয়ার হোসেইন, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, হাসান জাফির তুহিন, আবুল কালাম আজাদ, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা ছিলেন। বিজয় র‌্যালী উপলক্ষে নয়া পল্টন, ফকিরের পুল, বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ব্যাপক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান দেখা যায়। র‌্যালির কারণে বিজয়নগরসহ বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজটের জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ