শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বেগম রোকেয়া দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার : আজ ৯ ডিসেম্বর,সোমবার। বেগম রোকেয়া দিবস। বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর সারাদেশে সরকারি বেসরকারী উদ্যোগে রোকেয়া দিবস পালন করা হয়। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারো প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ নারী অধিকার আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
প্রেসিডেন্ট তার বাণীতে বলেন, মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারীমুক্তি, সমাজসংস্কার ও প্রগতিশীল আন্দোলনের পথিকৃৎ। বেগম রোকেয়া উন্নত মানসিকতা, দূরদর্শী চিন্তা, যুক্তিপূর্ণ মতামত প্রদান ও বিশে¬ষণ, উদার মানবতাবোধের অবতারণা এবং সর্বোপরি দৃঢ় মনোবল দিয়ে তৎকালীন নারী সমাজকে জাগিয়ে তোলেন। বাঙালি মুসলিম নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি সর্বদা পর্দার অন্তরালে থেকে নারী শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগ নেন এবং মুসলিম মেয়েদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির পথ সুগম করেন।
তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া সামাজিক নানা বিধিনিষেধ, নিয়ম-নীতির বেড়াজাল অগ্রাহ্য করে আবির্ভূত হন অবরোধবাসিনীদের মুক্তিদূত হিসেবে। তিনি শিক্ষার মাধ্যমে নারীকে ক্ষমতায়িত করা এবং সামাজিক বৈষম্য দূর করে নারীর মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর প্রদর্শিত পথেই উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ প্রত্যয়দীপ্ত নারীরা বিস্ময়কর উত্থান ঘটিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, বেগম রোকেয়ার কর্মে ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আমি আশা করি, বেগম রোকেয়ার কর্মে ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আজকের নারীরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন।’
নিজেদের মেধা ও কর্মের মাধ্যমে নারী উন্নয়নে অবদান রাখায় যারা ‘রোকেয়া পদক ২০১৯’ লাভ করেছেন তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীর অংশগ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ আজ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।
 বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম রোকেয়া এদেশের নারী জাগরণের এক কিংবদন্তিতুল্য পথিকৃত। তিনি নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক। তিনি দূরদ্রষ্টা, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন নারীর ভাগ্যোন্নয়নে শিক্ষা ও স্বাবলম্বিতা অপরিহার্য। শিক্ষাব্রতী এই মহিয়সী নারী সমাজে পিছিয়ে পড়া মুসলিম নারীদেরকে স্বাবলম্বী ও আত্মমর্যাদাশীল করার জন্য তাদেরকে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। বেগম রোকেয়ার জীবন ও তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নেই এদেশের নারী সমাজকে আলোকিত ও আত্মনির্ভরশীল করতে প্রেরণা যোগাবে।
নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জীবন দর্শন, শিক্ষা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নারী সমাজকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদেরকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী প্রফেসর চেমন আরা ও সেক্রেটারি প্রফেসর ডা. হাবিবা আখতার চৌধুরী সুইট। বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষ্যে নারী অধিকার আন্দোলনের নেতৃদ্বয় এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
নেতৃদ্বয় বলেন, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন এদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি তার নিজ জীবনের বাস্তবতার মধ্যেই অনুধাবন করেছিলেন তদানীন্তন সমাজে নারীর পশ্চাদপদ অবস্থান। উপলব্ধি করেছিলেন শিক্ষাই হতে পারে নারীর আত্মমর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রধান অবলম্বন। তার জীবন-কর্ম ও সংগ্রামের লক্ষ্যই ছিল নারী শিক্ষার বিস্তারের মধ্য দিয়ে নারীমুক্তি। তার এই পথচলা মোটেই সহজ ছিল না বরং অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করেই তাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। এই কিংবদন্তী তুল্য নারী তার ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে নারীর প্রতি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে কুঠারাঘাত করেছিলেন। পরিবার, সমাজ ও অর্থনীতি জীবনের এই তিন প্রধান অনুসঙ্গে নারীকে আত্মমর্যাদাশীল হতে তিনি নারী সমাজকে গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তারা বেগম রোকেয়ার কর্মময় জীবন ও আদর্শে নারী সমাজকে আরো উদ্যমী ও অনুপ্রাণিত হওয়ার আহবান জানান।
তারা বলেন, বেগম রোকেয়া নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা ইতিহাসে চিরদিনই স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি তার দূরদর্শীতা ও বিচক্ষণতায় উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, নারীর ভাগ্যোন্নয়নে শিক্ষা ও স্বাবলম্বী হওয়ার কোন বিকল্প নেই। মূলত বেগম রোকেয়ার জীবন ও তার আদর্শ বাস্তবায়নেই এদেশের নারী সমাজকে আলোকিত ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলা সম্ভব। নেতৃদ্বয় বেগম রোকেয়ার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারী সমাজকে নিজেদের নায্য অধিকার আদায় ও দেশ এবং জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার আহবান জানান।
 নেতৃদ্বয় বলেন, মহল বিশেষ বেগম রোকেয়াকে নিয়ে নানাবিধ অপপ্রচারে লিপ্ত। তাদের ভাষায়, নারী জাগরণের এই মহান অগ্রদূত নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় তথা ইসলামী বিধি-বিধানের গন্ডিকে অতিক্রম করেছিলেন। কিন্তু এটি নিছক একটি অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয় বরং তিনি ইসলামী বিধি-বিধানের আওতার মধ্যে থেকেই তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে নারী শিক্ষার সম্প্রসারণে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। আর তা তার বিভিন্ন লেখনী ও জীবনাচারণ থেকে খুবই সুস্পষ্ট। তাই কোন অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে বেগম রোকেয়ার কর্মময় জীবন ও আদর্শ অনুসরণ করে নারী সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রসঙ্গত, বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি উনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ