শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

এক যুগেও উন্নয়নের ছোঁয়া নেই শিমরাইল আন্তঃজেলা ট্রাক টার্মিনালে

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : ঢাকা-চট্টগাম-সিলেট মহাসড়কের পাশেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলমোড় গড়ে উঠা বাংলাদেশ আন্তঃজেলা শিমরাইল ট্রাক টার্মিনাল। ইটের সলিং না থাকায় কাঁচামাটির টার্মিনালটির অবস্থা খুবই বেহাল। টার্মিনাল প্রতিষ্ঠা থেকে নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনরে প্রধান আসামী নুর হোসেনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ টার্মিনাল নিয়ে ছিল নানা আলোচনা। 

টার্মিনালে লোড আনলোড ট্রাক ও লরী কনটেইনার কার্গো উঠানামার কারণে কাঁদামাটির এই বৃহৎ টার্মিনালটিতে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি পরিবহনগুলো উঠানামা ও লোড আনলোড করতে চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে গাড়ি চালকদের। গর্ত, খানাখন্দ ও নালার  কারণে লোড ও আনলোডবাহী পার্কিং করতেও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে গাড়ি চালকরা। সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা থাকালীন এই ট্রাক  টার্মিনালটি  ২০০৭ সালে  নির্মাণর লক্ষে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয় এবং ২০০৮ সালের প্রথম দিকেই এর কাজ শেষ হয় এবং  চালু করা হয় টার্মিনালটি। কিন্তু সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা থাকাকালেও ৪ বছরেও এই টইর্মনালের কোন উন্নয়ন মূলক কজ করা হয়নি বলে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা অভিযোগে জানায়।  পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জকে সিটি করপোরেশনে উন্নিত করা হলেও পেরিয়ে যায় একে একে ৮ বছর। দুই পিরিয়ডে ১২ বছর ধরে চলছে এই সমস্যা। পন্য পরিবহনের সাথে জড়িত ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা রীতি মতো হাফিয়ে উঠেছেন। সুদীর্ঘ ১২ বছর অতিবাহিত হলেও নারায়ণগঞ্জ সিটিকরপোরেশনের উন্নয়নের কোন প্রকার ছোঁয়া না লাগার কারণে ট্রাক টার্মিনালটির নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তে ট্রাক কার্গো পিকাপ আটকে গিয়ে গাড়ি চালরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন শ্রতিনয়তই।  

বৃহৎ এই ট্রাক টার্মিনালটির কর্নধার ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটিকর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ৭ খুনের মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী নূর হোসেন।  তিনি ছিলেন ট্রাক পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি। ওই সময়ে এই ট্রাক টার্মিনালে ছিল মাদকের বিশাল পাইকারী হাট।  যার পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন নূর হোসেন। প্রতিদিন কোটি টাকারও বেশী ফেন্সিডিল বিক্রি হতো এবং প্রকাশ্যে জুয়া চলতোএই টার্মিনালে। ওই সময়ে টার্মিনালে ট্রাক প্রতি চাঁদা নেওয়া হতো ৩শ’ টাকা করে।  ২০১৪ সালে ৭ খুনের পর নূর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার পর একটানা ২ বছর ট্রাক টার্মিনালটি ছিল অভিভাবকহীন। একদিকে টার্মিনালের নাজুক অবস্থা অপরদিকে ট্রাক কাভার্ডভ্যান ও পিকাপ মালিক ও চালকেদের পদে পদে নানা ধরনের সমস্যা বাড়তে থাকে। শত শত গাড়ি মালিক ও সহ¯্রাধিক শ্রমিক প্রতিনয়িতই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে থাকেন, তাদের সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসেনি বলে পিকাপ মালিক ও  শ্রমিকরা জানায়। 

তারা আরও জানায়, ট্রাক টার্মিনালে কোন কমিটি কিংবা কোন অভিভাবক না থাকায় আমাদের বিপদে আপদে কাউকে পাচ্ছিলামনা যার কারণে সমস্যা দিনের পর দিন প্রকট আকার ধারন করতে থাকে।   শিমরাইল মালিক সমিতির সক্রিয় সদস্য মোঃ আকবর হোসেন জানায়, অবশেষে ট্রাক, পিকাপ ও কাভার্ডভ্যান মালিক ও শ্রমিকরা সম্মিলিতভাবে শিমরাইল টেকপাড়ার উদীয়মান তরুন মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে অনুরোধ করি আমাদের এই বিশাল ট্রাক টার্মিনালের অভিভাবকত্ব গ্রহন করার জন্য। সবার অনুরোধে মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে ২০১৭ সালে শিমরাইল ট্রাক পিকাপ ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করি। 

টার্মিনালের হাল ধরার পর থেকে দেলোয়ার হোসেন গাড়ি চালকদের দীর্ঘদিনের বিদ্যমান সমস্যা দেখে টার্মিনালের সংস্কার কাজ শুরু করেন। শিমরাইল ট্রাক পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির উদ্যোগে লাখ লাখ টাকা খরচ করে টার্মিনালে পুরানো বিল্ডিং ভাঙ্গা রাবিশ ফেলে পরিবহন চলাচলের উপযোগী করে তোলেন। বর্ষা মৌসুমে এখানে কাঁদাপানিতে আবারও সেই পুরানো চেহারা ফিরে পায়। এভাবে একের পর খানাখন্দ স্থানে  রাবিশ ফেলা হচ্ছে। একাধিকবার রাবিশ যেসব জায়গা ফেলানো হয়েছে সেসবজায়গা কিছুটা ভাল আছে। চলতি মাসে একাধিকবার ট্রাক টার্মিনালে দেখা দেখা যায় খানাখন্দভরা টার্মিনালের সংস্কার কাজ করছে কয়েকজন মাঠ সংস্কারকর্মী। তারা বিল্ডিং ভাঙ্গা রাবিশ খানাখন্দ ও গর্তে ফেলে ট্রাক টার্মিনালের মাঠ সমান করে ট্রাক চলাচলের উপযোগী করে তুলছেন। 

নারায়ণগঞ্জ সিটিকরপেরেশন থেকে এখন পর্যন্ত এই টার্মিনালের উন্নয়নের জন্য কোন বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি বলে জানালেন মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। তিনি তিনি মালিক সমিতির উদ্যোগে কয়েক লাখ টাকা দিয়ে ইতিপূর্বে মাঠের উন্নয়ন কাজ করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন।  এই টার্মিনালটি নারায়ণগঞ্জ সিটিকর্পোরেশন মাত্র একবার ইজারা প্রদান  করে বিপুল অংকের রাজস্ব আদায় করেছিল। পরে আর ইজারা প্রদান করেনি সিটিকর্পোরেশন।  

নারায়ণগঞ্জ সিটিকরপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম বলেন, টার্মিনালের উন্নয়নের জন্য আমরা একটি প্রস্তাব সিটিকর্পোরেশনে পাঠিয়েছি। প্রস্তাবটি পাশ হলে ট্রাক টার্মিনালের উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে বলে কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম জানান। এই টার্মিনালটি ঢাকা চট্রগ্রাম ও সিলেট মহাসড়ক এর পাশে অবস্থিত তাই এই টার্মিনালে আন্তঃজিলা ট্রাক সমূহ রাতে প্রবেশ করে চালকরা বিশ্রাম নেয়। প্রতিদিন শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান থাকে এই টার্মিনালে।   যেহেতু কাঁচামাটির এই টার্মিনালটিতে লোড বাহী ট্রাক যাতায়াতের কারণে ট্রার্মিনালের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগী গাড়ির মালিক ও শ্রমিকরা আক্ষেপ করে বলেন নারায়ণগঞ্জ সিটিকর্পোরেশন এই টার্মিনালের উন্নয়নের জন্য কাজ করতো তবে টার্মিনালের গাড়ি চালকদের দুঃখ দুর্দশা দূর হতো। দীর্ঘ ১২ বছরেও এই টার্মিনালে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া না লাগার কারণে ট্রাক পিকাপ কার্গো মালিক ও চালকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ