শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

এসএ গেমসে বড় আশা আর্চারী নিয়ে

মাহাথির মোহাম্মদ কৌশিক : আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আসরে সাফল্যের কারণে আর্চারী চলে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। বিশেষ করে প্রথমবারের মতো নিজ যোগ্যতায় অলিম্পিকে খেলার সুযোগ তৈরি করাটা পড়ছে বড় সাফল্যের মধ্যে। রোমান সানাকে তাই বড় তারকা না বলে কোন উপায় নেই। আর প্রথমবারের মতো এই তারকা অংশ নিতে যাচ্ছেন এসএ গেমসে। দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এই আসরে আর্চারী থেকে বড় সাফল্যের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ কয়টা স্বর্ণ জিতবে সেই আশা দেখছেন না কর্মকর্তারা। তবে একাধিক স্বর্নের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারণ সবচেয়ে বড় কথা এবার ভারত খেলছেনা এই ডিসিপ্লিনে। এটাই বাংলাদেশের জন্য বড় সুখবর বলা হচ্ছে। সে কারণে দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর মধ্যে অন্যতম সক্রিয় বলা যেতে পারে আর্চারীকে। দেড় যুগ আগে যাত্রা শুরুর পর এখন সাফল্যে বড় বড় ফেডারেশনকে পেছনে ফেলেছে। বিশেষ করে গত জুনে বিশ্ব আর্চারী চ্যাম্পিয়নশীপে ব্রোঞ্চ জিতে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। মাঠে খেলে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার ঘটনা এটাই প্রথম।
এই আর্চারী থেকেই ইমদাদুল হক মিলন যুব অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। সে হিসেবে অলিম্পিকে নিজ যোগ্যতা বলে খেলা খেলোয়াড় এই আর্চারী থেকেই এসেছে। যদিও ২০১৬ রিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। বিশ্ব র‌্যাংকিং এ সেরা ৬০ এর মধ্যে থাকার পুরস্কার স্বরুপ কোটা প্লেসে ব্রাজিল গিয়েছিলেন দেশসেরা এই গলফার। আর্চারী নিয়মিত খেলার অংশ হিসেবে এবার এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়নশীপে খেলতে যায় বাংলাদেশ দল। গত ২২-২৮ নভেম্বর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় এবারের আসর। সেখানে অংশ নিতে ২১ নভেম্বর ঢাকা ছাড়ে বাংলাদেশ দল। লাল সবুজ প্রতিনিধি দলের ১৫ জন আর্চার এবারের আসরে অংশ নেয়।  ৬টি ইভেন্টে পদক জয়ের চেয়ে এসএ গেমসের প্রস্তুতি হিসেবেই এই আসরে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ দল। ৩০ দেশের ৪০০ প্রতিযোগী এবারের আসরে অংশ নেয় বলে আর্চারী ফেডারেশন সুত্রে জানা গেছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ দল যেদিন থাইল্যান্ডে রওয়ানা হয় সেদিনই বিশ্ব আর্চারীর কংগ্রেসে অংশ নিতে যান ফেডারেশন সাধারন সম্পাদক কাজি রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল। স্কিল আর ফাইন টিউনিং করতেই মূলত সেখানে যায় বাংলাদেশ দল। ৬টি ইভেন্টে সমান সংখ্যক স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন দল। ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক এশিয়া কাপে বাংলাদেশের লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘আর্চারীতে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন বাংলাদেশের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। তাদেরকে বিট করতে পারলেই নিশ্চিত হয়ে যায় পদক জয়।
আর এশিয়ান আর্চারীতে মূলত এসএ গেমসের প্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছি আমরা। এখানে স্বর্ণজয়ের প্রত্যাশা নিচ্ছি। তবে প্রস্তুতি হিসেবেই দেশছি’। দেশসেরা আর্চার রোমান সানা বলেন, ‘ভারত একটা সময় আমাদের আড় চোঁখে দেখত। কোন টুর্নামেন্টে খেলতে গেলে ঠিকভাবে কথা বলত না। কিছু জিজ্ঞেস করলে চুপচাপ থাকত। এখন পরিবেশটা পুরোপুরিই পাল্টে গেছে। ভারতীয় আর্চাররা এখন ইচ্ছে করেই আমাদের সাথে কথা বলে। আর্চারীতে এখন বাংলাদেশের এটি অনেক বড় অর্জন’। এশিয়া কাপকে এসএ গেমসের বড় প্রস্তুতির মঞ্চ করার পাশাপাশি বেশকিছু পদক জেতার লক্ষ্যও স্থির করেছেন এই অলিম্পিয়ান।
দলের আরেক সেরা তারকা শ্যামলী রায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ এ বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, ‘দল হিসেবে আমরা এখন দারুণ একটি অবস্থায় রয়েছি। এখন সহজেই ২/৩টা দল বিট করতে পারি। ব্যাংককে ভাল খেললে সেটি এসএ গেমসের জন্য কাজে দেবে। আমরা মূলত সেই লক্ষ্য নিয়েই এবার এশিয়ান কাপে খেলতে যাচ্ছি। আশা করি একটা ভাল প্রস্তুতি নিয়ে নেপাল যেতে পারব’। আর এসএ গেমসে দুইটি স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আর্চারী ফেডারেশন।
প্রথমবারের মতো সেখানে খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন রোমান সানা, শ্যামলী রায়রা। এরই মধ্যে বাংলাদেশের আর্চারী অনেক দেশের কাছে রোড মডেল হয়েছে। বাংলাদেশ এখন শুধু নিজেরাই শিখছেনা, শেখাচ্ছেন অন্য দেশের উঠতি খেলোয়াড়দেরও।
একটি খেলা সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কত দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে আর্চারী হতে পারে উৎকৃষ্ট প্রমাণ। এরই মধ্যে সৌদি আরব, তুর্কেমেনিস্তান, তাজিকিস্তানের মতো দেশে কোচিং করাচ্ছেন বাংলাদেশী কোচরা। এটি দেশের আর্চারীর জন্য নিশ্চিত করেই বাল খবর বলা যায়। এক রোমান সানার সাফল্যই অনেককিছু বদলে দিয়েছে। যা দেশের আর্চারীর জন্য সুখবর বলা যেতে পারে। সে কারণে নিয়মিতভাবে আসছে স্পন্সর। দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান তীর এখন আর্চারীকে এগিয়ে নিতে সামনে থেকে কাজ করছে। আর্চারীর আরেক নাম যেমন তীর ঠিক তেমনি সিটি গ্রুপের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডের নামও তীর। দুটি মিলে এখন ’গো ফর গোল্ড’ নামে পরিকল্পনায় চলছে আর্চারী। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমেই এখন আর্চারী-তীর কাজ করছে একসাথে।
শুধুু টুর্নামেন্ট আয়োজন নয়, অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর বড় অংকের অর্থ দিচ্ছে সিটি গ্রুপ। প্রতিটা বছর বাজেট নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সেটিকে আবারো বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগামী মৌসুমের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ২১ লাখ টাকা।
 ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেটি তো থামেনি বরং বেড়ে গেছে অনেকাংশে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ইভেন্ট আয়োজনে ৭৬.৫ লাখ আর আর্চারী ট্রেনিং সেন্টারের জন্য ১ কোটি ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়।
২০১৮-১৯ মৌসুমে ইভেন্ট আয়োজনের অর্থ কমিয়ে দেয়া হয় ৬৬ লাখ টাকা। আর এটিসি’র অবকাঠামো উন্নয়নে দেওয়া হয় ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর এবার ইভেন্ট আয়োজনের অর্থ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৭২ লাখ টাকা। আর অবকাঠামো উন্নয়নে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা! মোট বাজেট ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বাংলাদেশের কোন ক্রীড়া ফেডারেশনের জন্য বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের এই অর্থ সহায়তার ঘটনাকে বিরল না বলে উপায় নেই। ২০০১ সালে ছিল অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে যাত্রা শুরু। ২০০৬ সালে ফেডারেশনে রূপান্তরিত হয়। সে সময় আর্চারী ৮/১০টি ফেডারেশনের মতোই মনে করা হয়েছিল।
‘তীর-গো ফর গোল্ড’ এর আওতায় গেল দুই বছরেরও বেশি সময়ে বাংলাদেশের অর্জন ১৫টি স্বর্ণ, ১৮টি রৌপ্য এবং ৯টি ব্রোঞ্চপদক জিতেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন নিশ্চিত করেই রোমান সানা ওয়ার্ল্ড আর্চারী চ্যাম্পিয়নশীপে ব্রোঞ্জ জেতা। যার মাধ্যমে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন খুলনার এই তীরন্দাজ। এবার দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এসএ গেমসে নিজেদের প্রমাণের পালা। তার আগে এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়নশীপে নিজেদের আরো একবার পদক জিতে সেরা হওয়ার অপেক্ষা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ