শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রংপুর ও দিনাজপুরে ‘কৃষকের অ্যাপ’ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের ধান ক্রয়ের উদ্যোগ

মোহাম্মদ নুুরুজ্জামান, রংপুর অফিস : রংপুর অঞ্চলের চাষীদের ডিজিটাল পদ্ধতি সর্ম্পকে তেমন কোন জ্ঞান না থাকলেও সারাদেশের ন্যায় রংপুর অঞ্চলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারিভাবে চলতি আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।
গত ২০ নভেম্বর বুধবার থেকে দেশের সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।  চলতি মওসুমে ধান সংগ্রহে ডিজিটাল পদ্ধতি ‘কৃষকের অ্যাপ’ পদ্ধতি নতুন মাত্রার যোগ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। প্রথমবারের মতো পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ১৬টি উপজেলায় এবারে ধান ক্রয়ে থাকছে এই ডিজিটাল পদ্ধতি। চাষীরা চাইলে স্মার্টফোন ব্যবহার করে মাঠ থেকেই ‘কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে তাঁদের ধান বিক্রি করতে পারবেন। নিবন্ধন, বিক্রয়ের আবেদন, বরাদ্দের আদেশ ও মূল্য পরিশোধের সনদ-সব তথ্যই আদান প্রদান হবে এসএমএসের মাধ্যমে। রংপুর বিভাগে ‘কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে রংপুর সদর উপজেলা এবং দিনাজপুর সদর উপজেলায় সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে এই ধান সংগ্রহ করা হবে বলে জানা গেছে।
‘কৃষকের অ্যাপ’ এর মাধ্যমে ধান সংগ্রহে সরকারের সিদ্ধান্তে সচেতন মহল খুশি হলেও শংকা এবং ধোঁয়াশায় আছেন আমন চাষিরা। কতটা স্বচ্ছ এবং কি প্রক্রিয়ায় এটা সম্পাদিত হবে। চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন কি-না এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের মনে। কারণ অধিকাংশ চাষিই জানে না কৃষকের অ্যাপ কি। তবে খাদ্য অধিদপ্তর বলছে কৃষকদের সংশয় কাটাতে শিগগিরই ‘কৃষকের অ্যাপ’ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
রংপুর সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামের কৃষক শামছুল হক ২ একর জমিতে এবারে আমন ধান চাষ করেছেন । একটু লাভের আশায় এসব ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করার কথা ভাবছেন। কিন্তু খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন ‘কৃষকের অ্যাপ’ পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করবে খাদ্য গুদাম। এতে  হতাশা পেয়েছে এই চাষীর। কারণ তিনি জানেন না ‘কৃষকের অ্যাপ’ কি। সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রির আশা পূরণ হবে কিনা এনিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন। এমন হাজারো কৃষক জানে না ‘কৃষকের অ্যাপ’ কি। এই পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ধান কেনার কথা থাকলেও কৃষকরা ধোঁয়াশায় থাকায় এখনো তেমন সাড়া মিলেনি। খলেয়া ইউনিয়ন খারুয়াবাঁধা গ্রামের কৃষক ওসমান আলী, সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়নের পালিচড়ার আমন চাষি ইব্রাহিম মিয়া জানান, গত বোরো মৌসুমে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ধান বিক্রি করেন নি। এবার আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান বিক্রির ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু নতুন সিস্টেম সম্পর্কে ‘কৃষকের অ্যাপ’ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় চিন্তায় আছেন।
এদিকে বুধবার থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও রংপুর বিভাগের দিনাজপুর ও গাইবান্ধায় নাম মাত্র সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন হয়েছে। এখনো এই বিভাগের কোথাও পুরোপুরিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর। অধিকাংশ জেলায় চাষীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি না হওয়ায় ধান সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া কৃষকের অ্যাপ নিয়ে সাধারণ কৃষকের সংশয় কাটাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর । এব্যাপারে রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রায়হানুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় ‘কৃষকের অ্যাপ’ বিষয়টি নিয়ে সাধারণ কৃষকরা সমস্যা মনে করছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। ফলে এই সমস্যা আর থাকবে না। তিনি জানান, শিগগিরই উপজেলা পর্যায় থেকে কৃষকদের তৈরি তালিকা পাওয়া যাবে। এরপরই পুরোদমে ধান সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। রংপুর বিভাগের মোট ৮৯টি সরকারি খাদ্য গুদামে চাষীরা সরাসরি প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ধান বিক্রি করতে পারবেন। প্রত্যেক  কৃষকের কাছ থেকে কমপক্ষে ৪’শ কেজি ধান ক্রয় করা হবে। চলতি মওসুমে রংপুর বিভাগের ৮ জেলা থেকে এবারে সরকারী ভাবে ১ লাখ ৮’শ ৮৩ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হবে । উল্লেখ্য, সময়, খরচ ও হয়রানি রোধসহ প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যে  ডিজিটাল পদ্ধতির ‘কৃষকের অ্যাপ’ মাধ্যমটি সরকার পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে । প্রথম পর্যায়ে ১৬ জেলার ১৬টি উপজেলায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ”কৃষকের অ্যাপ” ব্যবহারের জন্য শুরুতেই এটি স্মার্টফোনে ডাউনলোড করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র  ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রির আবেদন করা যাবে। নিবন্ধনের দিন থেকেই কৃষক ধান বিক্রির আবেদন করতে পারবেন। প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া ডিজিটাল মাধ্যম ‘কৃষকের অ্যাপ’-এ নিবন্ধনের শেষ তারিখ আগামী ৭ ডিসেম্বর এবং ধান বিক্রির আবেদনের শেষ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ