বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

রাজপথে নেমেই নেত্রীকে মুক্ত করবো -গয়েশ্বর

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রচার দল আয়োজিত জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আদালতের ওপর ভরসা না করে রাজপথে আন্দোলনে নামলে তাকে ১ বছর ১০ মাস জেল খাটতে হতো না। নেত্রী এতদিনে মুক্তি পেয়ে যেতেন। গয়েশ্বর বলেন, আদালতের রায়ে দেশের স্বাধীনতা আসেনি। আন্দোলন করে, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। আদালতের রায়ে নেত্রীর মুক্তি হবে না। আন্দোলন করেই নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।
সরকার সবকিছুকে গুজব বলে চালিয়ে দিচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি, চালের দাম বৃদ্ধি, শিশুধর্ষণ, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি, শেয়ারবাজারের টাকা লুট, ব্যাংকের টাকা লুট, ক্যাসিনোকান্ড- এ সবই কি গুজব? এই বুঝ দিয়ে আর কত দিন চলবে? সবকিছুর ওপর সরকারের হাত রয়েছে। তাদের নেতৃত্বেই এসব ঘটছে।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রচার দল আয়োজিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৪তম জন্মবার্ষিকী, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি মাহফুজুল কবীরের সভাপতিত্বে ও কৃষকদলের সদস্য এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লায়ন মোহাম্মদ আনোয়ার, আলহাজ্ব খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহিম ও কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমানে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেন না। সরকার সন্ত্রাস-দুর্নীতির মধ্যমে দেশ চলাচ্ছে। এভাবে বেশি দিন টিকে থাকা যাবে না।
৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে জিয়া পরিবার বিস্তৃত উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, কিন্তু গণতন্ত্র আর ষড়যন্ত্র একসাথে চলে না। দেশে গণতন্ত্র নাই বলেই ষড়যন্ত্র জাল বিস্তার করছে। তিনি বলেন, এই যে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে এত এত ষড়যন্ত্র হচ্ছে তাহলে আমরা কী বলবো, জিয়া পরিবারের সদস্য সংখ্যা কয়জন? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মরহুম আরাফাত রহমান কোকো- মাত্র এই কজন? না, জিয়া পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাংলাদেশে কম করে হলেও ১৬ কোটি। এই ১৬ কোটি মানুষ বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সুতরাং এই ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াবার দায়িত্ববোধ জনগণের মধ্যে আছে।
তিনি বলেন, জনগণের চেতনাবোধ আছে এবং দায়িত্ববোধ আছে। কিন্তু জনগণ অসংগঠিত। তাদেরকে এক বাক্যে এক লক্ষ্যে সংগঠিত করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের। সেই দায়িত্বটা যদি আমরা সঠিকভাবে পালন করি তাহলে একটি যৌক্তিক আন্দোলন হতে পারে। আর সেটা কোনও রাজনৈতিক দলের আন্দোলন না, সেটা হবে দেশের পক্ষে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে আন্দোলন। এই আন্দোলনটা হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। আর গণতন্ত্র যদি পুনরুদ্ধার হয় তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের কুটীর-দ্বারে আর ঘুরতে হবে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের চেয়ে পেঁয়াজ অনেক শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র- এটা হচ্ছে দিন ও রাতের মতো। জিয়া পরিবারকে যদি আমরা সূর্যের আলোর মতো দেখি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আমাদের অমাবস্যার মতো দেখতে হবে। নিকষ অন্ধকারে ঢেকে গেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজ যে জাতীয়তাবাদ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে, পাসপোর্টে সিল মারা হচ্ছে, প্রতিটি পাসপোর্টে লেখা থাকে জাতীয়তা বাংলাদেশি। এছাড়া স্মার্ট কার্ড দেখেন, জাতীয়তা বাংলাদেশি লেখা আছে, বাঙালি নয়। বাঙালি বাঙালি বলতে বলতে এখন আওয়ামী লীগের নেতারা যে মুখে ফেনা তোলেন, আমাদের কাছ থেকে আইডিয়া নিয়েই তারা চলেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আজ তো বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে কোথায়? ৩০ লাখ শহীদের বিনিময় এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছিলাম সেই বাংলাদেশ কোথায়? এ বাংলাদেশ আমাদের কাছে অচেনা। যে বাংলাদেশে মা-বোনেরা কখন ধর্ষিত হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এমন বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম যে বাংলাদেশে বাসের চাকায় পিষ্ট শিক্ষার্থীরা মারা যাবে। সড়কের আইন নিয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘট ডাকবে এবং সেই ধর্মঘটে সমর্থন থাকবে আওয়ামী লীগের নেতা শাজাহান খানের। এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও পেঁয়াজের দাম কমেনি। মন্ত্রী ও সচিবের মুখে থু থু দিয়ে পেঁয়াজের দাম আজও ২০০ টাকা। আওয়ামী লীগের চেয়ে, সরকারের মন্ত্রীদের চেয়ে পেঁয়াজ অনেক শক্তিশালী। পেঁয়াজের যে লোমগুলো আছে, আমাদের মা-বোনেরা যেগুলো ফেলে দেয় ওগুলো যদি লোম না হয়ে হাত হতো তাহলে এতদিনে টিপু মুনশির গলা টিপে ধরত এবং বলত যে, তোর কোনো ক্ষমতা নাই। ক্ষমতা আমার পেঁয়াজের বেশি।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এমন বাংলাদেশে আমরা বাস করি যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে বলতে হয়, রডের বদলে বাঁশ দেবেন না, সিমেন্টের বদলে বালি দেবেন না। তিনি বলেন, ক্যাসিনো সম্রাটকে অসুস্থতার কথা বলে আদালতে না নিয়ে হসপিটালে নিয়েছে। অথচ বেগম খালেদা জিয়া যিনি তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, হাঁটতে পারেন না, হুইল চেয়ারে মাথা নিচের দিকে দিয়ে থাকতে হয়, তাকে জোর করে আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ