মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা ও কিছু পর্যালোচনা

এইচ এম আব্দুর রহিম : ট্রাম্প বিশ্বাস করেন তিনি আইনের ঊর্ধ্বের মানুষ। ব্যাপারটা কি আসলে তাই. তিনি কিভাবে এমনটা দাবী করতে পারেন? তার এ দাবী ধোপে টিকবে না।
আমেরিকার গণতন্ত্রের একটি মৌলিক বিষয় সুপ্রীম কোর্টের মুল ফটকে খোদাই করে লেখা আছে। আইন সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদেও সুস্পষ্ট করে লেখা আছে,আইনের চোখে সবাই সমান। কিন্তু এই মুহূর্তে আমেরিকার প্রশাসনের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে। তারা ট্রাম্পকে আইনের উর্ধ্বে বিবেচনা করছে। দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় বলেছে, অপরাধ তদন্তের বিষয় থেকে প্রেসিডেন্টের রক্ষাকবচ আছে।অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে কোন ক্রিমিনাল প্রসিকউশন আনা যাবে না। তার মানে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট যদি আইন বিরোধী কিছু করেন সে বিষয়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা না হয়,তাহলে সে অপরাধ থেকে তিনি পার পেয়ে যাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচার করতে হলে আগে তাকে অভিশংসন করতে হবে। অভিশংসন যদি আইন সভায় পাস না হয়,তাহলে অপরাধের তদস্ত কার্যক্রম চালাতে হলে  তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
 একজন প্রেসিডেন্টকে বিশাল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। তিনি জাতির সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে যেন বাধাগ্রস্ত না হন। সেই বিবেচনায় সংবিধান  সব ধরনের মামলা থেকে দায় মুক্তি দিয়েছে। সংবিধানের এই বিধি ট্রাম্পকে বেপরোয়া করে তুলেছে বলে ভাবা হচ্ছে।
সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে। ট্রাম্প আপাতত আইনের উর্দ্ধে। কারণ, তাকে অভিশংসন করার প্রস্তাব সিনেটে আটকে যাবে। তিনি কি করেছেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বপক্ষে কি পাওয়া গেছে,কার্যত সে গুলো কোন বিষয় নয়। বাস্তবতা হলো তিনি যতক্ষণ ক্ষমতায় আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রেসিডেন্টের কাজ কর্মের ব্যাঘাত যাতে  না ঘটে,সে জন্য তাকে দায় মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আদতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ তদন্ত হলে কি কোন কাজ কর্মে কি ব্যাঘাত হবে? আমরা জানি ট্রাম্প চুলে স্টাইল ও সাজগোজ ঠিকরাখা,টেলিভিশন দেখা,টুইট করা,রাগারাগি করা,এবং প্রচার প্রচারণায় তাঁ বেশীর ভাগ সময় ব্যয় করে। এসব কাজ বাধাগ্রস্ত হলে জাতির কি এমন ক্ষতি হবে? প্রেসিডেন্ট যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে কি করতে হবে? তা সংবিধানে বলা আছে। তিনি অক্ষম হলে তার জায়গায় কে বসবেন,তাও বলা আছে। কিন্তু ট্রাম্প গদিতে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। সেটি প্রমাণের সব পথ বন্ধ হয়ে আছে।
ম্যানহাটার ডিস্ট্রিক্ট এ্যটর্নি সাইরাস আর ভেন্ম জুনিয়র ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পণ্য তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আনা একটি অভিযোগ খতিয়ে দেখেছেন।এর পাশাপাশি আর একটি ভয়ানক অভিযোগ আছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। সেটি হলো কর ফাঁকি। কিন্তু নিম্ন আদালত আপিল বিভাগ এ তদন্ত চালানোর পক্ষে মত দিলে ও ট্রাম্প তার আয়কর বিবরণী প্রকাশ করেননি। উল্টো তার বিরুদ্ধে চলা তদন্ত থামাতে তিনি মামলা করেছেন। অভিশংসন ছাড়া মার্কিন সংবিধানের প্রেসিডেন্ট কে যাবতীয় অপরাধের তদন্ত থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে। যুক্তি দিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবীরা শুরু থেকে এ আয়কর বিবরণী প্রকাশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন। তবে আপিল আদালত ট্রাম্পের দায়মুক্তির যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, সাইরাসের কার্যক্রম ড্যাম্প নয় প্রতিষ্ঠানের কাছে নথি চেয়েছে। যা মোটেও প্রেসিডেন্টের দায় মুক্তির সঙ্গে  সম্পর্কিত নয়। এখন বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে ফয়সালা হবে। ট্রাম্পের সমর্থনে ইউএস ডিষ্ট্রিক্ট জজ ভিক্টর ম্যারেরো লিখেছেন, শুধু প্রেসিডেন্ট নন, তা আত্মীয় স্বজন এবং তার ব্যবসা সংক্রান্ত সবাই আইনত আইনের ঊর্ধ্বে।প্রেসিডেন্ট যে কোন ধরণের অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় থেকে সাংবিধানিকভাবে দায়মুক্ত। ফলে তার কোন কাজের তদন্ত করা,মামলা করা, গ্রেফতার করা, কিংবা বিচার করা কিছু আইন সম্মত হবে না। ট্রাম্প ও তাঁর কৌশলিরা এখন অভিশংসন প্রস্তাব আনাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোন তদন্ত চালানো কোন তথ্য দিবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা এখন বুঝতে পারছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনার চেষ্টা কাজে লাগবে না। ট্রাম্পের অনুগত বলে পরিচিত বিল বারের অধীনে বিচার মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের অনুগত বলে পরিচিত বলে বিল বারের অধীনে বিচার মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনবে বলে মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে সাংবিধানিক রক্ষা কবচ ট্রাম্পকে বেপরোয়া করে তুলেবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ