শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কুঠিরঘাট-তেলিগাতী দক্ষিণপাড়া সড়কটি ১৬ বছর ধরে উপেক্ষিত

খুলনা অফিস : খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপোল ইউনিয়নের মহেশ্বরপাশা কুঠিরঘাট-তেলিগাতী দক্ষিণপাড়া গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ১৬ বছর যাবৎ উপেক্ষিত ও অবহেলিত। সংস্কার না করায় রাস্তাজুড়ে কার্পেটিং এবং খোয়া উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলে ১১ মিটার সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করা হলেও কাজের ধীরগতিতে নির্ধারিত সময়ে কাজটি সম্পন্ন হয়নি। তাছাড়া সংস্কার কাজ করার সময় পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট বন্ধ করে দেয়া, পুকুরপাড়ে গাইডওয়াল না করা, রাস্তাজুড়ে হেরিংবোনের পাশে মাটি দিয়ে ভরাট না করায় সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মহেশ্বরপাশা কালিবাড়ী হয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়কসহ শহরে প্রবেশের মহেশ্বরপাশা কুঠিরঘাট-তেলিগাতী দক্ষিণপাড়া সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন তেলিগাতী-রংপুর এলাকার হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা মাছ-তরিতরকারিসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রির উদ্দেশে কালিবাড়ী, রেলিগেট এবং দৌলতপুর বাজারে নিয়ে আসে এই সড়কটি দিয়ে। এ ছাড়া কৃষি কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যায়, কালিবাড়ী, মহেশ্বরপাশার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের পুরাতন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। তেলিগাতী-রংপুর এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২০০৩ সালে ইটের সলিং তুলে পাকা সড়ক নির্মাণ করে এলজিডি কর্তৃপক্ষ। সড়কটির সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের শেষ সীমানার মহেশ্বরপাশা কুঠিরঘাট কালভার্টের ১শ’ গজ পূর্ব দিক থেকে শুরু হয়ে তেলিগাতী মধ্যপাড়া পর্যন্ত সড়কটি ১৬ বছর কোনো প্রকার মেরামতের কাজ না করায় বর্তমানে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তেলিগাতী নেপাল আশ্রম পূজা মণ্ডপ থেকে তেলিগাতী মধ্যপাড়া রতনের বাড়ির মোড় পর্যন্ত সড়কের অংশে এখন পর্যন্ত উন্নয়নে ছোঁয়া লাগেনি। সেখানে পুরাতন ইটের সলিংয়ের ভাঙাচোরা রাস্তা। তেলিগাতী বুচিতলা এস এ শহিদের বাড়ির সামনের সড়ক হয়ে তেলিগাতী স্কুলের রাস্তা দিয়ে মধ্যপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১১শ’ মিটার রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে অনেক আগেই। সড়ক সংস্কারের কাজ নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও পুকুরের মধ্যে ধসে পড়া পাড়ে গাইডওয়াল নির্মাণ, হেরিংবোনের পাশে মাটি ভরাট এবং কার্পের্টিং এর কাজ বাকী রেখে বর্তমানে সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে।

তেলিগাতী সরদারপাড়ার মশিউর রহমান সাগর জানান, সড়কটি যে কারণে ভেঙে যাচ্ছে তার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সড়কের সংস্কার কাজ করা হলে বেশি দিন স্থায়ী হবে না। তিনি বলেন, রাস্তার পাশের গাইডওয়াল বা হেরিংবোনের পাশে মাটি দিয়ে ভরাট না করলে গাড়ি চলাচলে যে কোনো সময় রাস্তা ভেঙে যাবে। মধ্যপাড়ার এডভোকেট সরদার ইয়ারুল ইসলাম বলেন, সরদারপাড়ার মসজিদের সামনের পুকুরপাড় প্যানাসেটিং না করে রাস্তার কাজ করছে। এর ফলে রাস্তাটি পুনরায় ভাঙনের কবলে পড়বে।

কুয়েটের কর্মচারী আফগান ফকির বলেন, রাস্তার উত্তরপাশের বিভিন্ন বাড়িঘরসহ এই এলাকার পানি দক্ষিণ পাশের ড্রেনে নেয়ার জন্য রাস্তার ওপর একটি কালভার্ট ছিলো। সেটা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতা এস এ শহিদ জানান, বুচিতলার রাস্তাটির প্রায় ৪০/৫০ ফিট পুকুরের মধ্যে ধসে গেছে। চলমান সংস্কার কাজের পাড় ভাঙার বিকল্প ব্যবস্থা না করে কাজ শুরু হয়েছে পুকুরের মধ্যে যে পিলার দেয়া রয়েছে সেখানে রিপ্যানাসেটিং এর মাধ্যমে ড্রাম কেটে মাটি ভরাট না করে ভাঙা রাস্তায় খোয়া ফেলে দায়সারা কাজ করে রেখেছে।

তেলিগাতী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি বাকি উল্লাহ ঢালী বলেন, ১৬ বছর যাবৎ কুঠিরঘাট-তেলিগাতী সড়কটি উপেক্ষিত। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর মাহফুজা বেগম বলেন, তেলিগাতী-কুঠিরঘাট সড়ক মধ্যপাড়া সরদারপাড়া পর্যন্ত সড়কটির দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া তেলিগাতী যে অংশের রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে তা নির্ধারিত সময় পার হয়েছে। এখন রাস্তার কার্পেটিং এর কাজসহ বুচিতলা মসজিদ সংলগ্ন সড়কটি পুকুরে ভেঙে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সে স্থানের কোনো কাজ না করে ভাঙা রাস্তার ওপর খোয়া ফেলে দায়সারা কাজ করায় জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় যোগিপোল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বর জি এম এনামুল কবির বলেন, বুচিতলার রাজ্জাকের দোকানের মোড় থেকে তেলিগাতী স্কুল পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের জন্য ৩৮ লাখ টাকার কিছু বেশি এবং তেলিগাতী পাকার মাথা দক্ষিণপাশের সড়ক থেকে তেলিগাতী স্কুলের পেছন পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের কাজে ১০ লাখ টাকার কিছু বেশি টেন্ডার হয়ে ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। এর মধ্যে বুচিতলা সড়কের কাজ চলমান কাজ গত কয়েকদিন বন্ধ রয়েছে। নির্মাণ কাজের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও কাজ শেষ না করে সাইট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাছাড়া পাকার মাথা তেলিগাতী স্কুলের সড়কটির কোনো কাজই করা হয়নি।

কাজের ঠিকাদার ফজলুর রহমান জানান, কাজটি শুরু হয়েছে দেরী করে। এ জন্য নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আবেদন করা হয় সময় বৃদ্ধির। কর্তৃপক্ষ সময় বৃদ্ধি মঞ্জুর করে আগামী ৩১ নবেম্বর পর্যন্ত দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, সরদারপাড়ায় মসজিদের পুকুরে গাইড ওয়াল দেয়ার ব্যাপারে ইস্টিমেটে কিছু উল্লেখ নেই। যে প্লেট দেয়া আছে তার মধ্যে যেগুলো নষ্ট তা অপসারণ করে নতুন প্লেট দেয়া হবে। কিন্তু কাজ চলাকালীন সময় এলাকার কতিপয় ব্যক্তি গাইড ওয়ালের দাবিতে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান এসে লোকসান দিয়ে হলেও নতুন প্লেট দিয়ে গাইড ওয়াল দেয়ার জন্য বলে আসেন। সেভাবে কাজ শুরু করা হয়েছে। প্লেট তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। ২/৪ দিনের মধ্যে তা লাগানো হবে। আর বুচিতলা এলাকায় সড়কের পাশে গাইড ওয়াল দেয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। তারপরও পিচের ড্রাম কেটে সড়কের সাইড দিয়ে দেয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, সড়কের অনেক কাজ বাকী রয়েছে। সব কাজই ইস্টিমেট অনুযায়ী হবে বলে এ ঠিকাদার জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ