বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মধ্যযুগের পুঁথিসাহিত্য এবং বঙ্গাব্দের অবস্থান

এ বি এম ফয়েজ উল্যাহ : (গত সংখ্যার পর)

(৪২)‘ তোহফা’। মহাকবি আলাওল

মূল ফার্সি কবি ইউসুফ গদা। ভণিতায় কাব্যের আরম্ভ ও শেষের তারিখ পাওয়া যায়।

“সিন্ধু শত গ্রহ দশ সন বাণাধিক।

রচিলা ইউসুফ গদা তোহফা মানিক।।

দুই শত অষ্টোত্তর সত্তর রহিল।

আলীমে পাইল মর্ম আসে না পাইল।।

পুস্তক সমাপ্ত সংখ্যা সন মুছলমানি।

রসসিদ্ধ রামারির লও পরিমানি”।।

সুলতান আহামদ ভূঁইয়া এটিকে ‘ রস সিন্ধু রামারির মুন্ড’ নির্দিষ্ট করে ১০৭৬ হিজরী বলেছেন। (১৬৬৪ খ্রীঃ)।

(৪৩) ‘দুল্লা মজলিস’। আবদুল করিম খোন্দকার। আরাকান। রচনার তারিখ ভণিতায় উল্লেখ আছে-

“এবে শুন মুছলমানি সঙ্কের কথন!

এক সহ¯্র দুই শত আর গ্রহ সন।।

সহ¯্রকে শতেক সাইত অব্দ আর।

মঘি সন এ লিখন শুন পুনর্বার”।।

অর্থাৎ কাব্যখানি ১২০৯ হিজরী তথা ১১৬৩ মঘী সনে রচিত হয়েছে। (১৭৯৮ খ্রীঃ)।

(৪৪) ‘লাইলী মজনু’। কবি দৌলত-উজির বাহরাম খাঁ। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদত্ত দুটি কাব্যে অনুলিপির সন তারিখ পাওয়া গেছে।

(ক) লিপিকার - কালিদাস নন্দী। ২০ শে আগ্রান, শুক্রবার, ১১৯১ মঘী।

(খ) লিপিকার- জিন্নত আলি। মঘী সন ১২২৬।

(৪৫) একটি ক্ষুদ্র কলমি পুঁথি (লালন শাহের আত্মচরিত)। লালন শিশ্য দুদ্দু শাহ। কালবেড় হরিশপুর। জিনাইদহ।

এতে লালন শাহের জন্ম, মৃত্যুর উল্লেখে বাংলা সন ব্যবহৃত হয়েছে।

“এগারো শো উনআশি কার্তিকের পহেলা,

হরিষপুর গ্রামে সাঁইর আগমন হৈলা।....

বারশত সাতানব্বই বাংগালা সনেতে,

পহেলা কার্তিক শুক্রবার দিবা অন্তে।

সবারে কাঁদায়ে মোর প্রাণের দয়াল।

ওফৎ পাইল মোদের করিয়া পাগল।।”

অর্থাৎ বাংলা ১১৭৯= ১৭৭২ খ্রীঃ, জন্ম।

১২৯৭ বাংলা = ১৮৯০ খ্রীঃ, মৃত্যু।।

(৪৬) ‘প্রেমরতœ’। কবি জামাল উদ্দিন। দিনাজপুর। ভণিতা-

“বার সও সাইট সালে পোনর শ্রাবণে।

জুম্মার নামাজ বাদ নিজ নিকেতনে।।

বন্দেগি থানায় বাসে (ঘিরলাই গ্রামে।

প্রেমরতœ কেচ্ছা সার নিলৈক্ষার নামে।।

অর্থাৎ ১২৬০ বাংলা= ১৮৫৩ খ্রীস্টাব্দ।

সুতরাং নিঃসন্দেহে এই সব তথ্য উপাত্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘বাংলা সন ’ বা ‘ বঙ্গাব্দ’ নামক সনটি বাঙালির নিজস্ব কোন সন নয়। এটিও মঘী, হিজরী, শকাব্দ, গুপ্তাব্দ, খ্রীস্টাব্দ’র মত বহিরাগত সন। (সমাপ্ত)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ