শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাদিবসের ডাক

অধ্যাপক আবদুছ ছবুর মাতুব্বর : [দ্বিতীয় কিস্তি]
সর্বত্র আশংকা ! এ শিক্ষার মৃত্যু না জানি সময়ের ব্যপার মাত্র। সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি-গোষ্ঠীগুলো অবিরাম ধারায় ষড়যন্ত্রের সাঁড়াষী আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার বর্তমান হাল খুবই ভয়াবহ। বিষযটি খুব খোলাসা করা দরকার আছে মনে করি না। তবে একটু স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন। সিলেবাসের মধ্যে সাধারণ বিষয় ও আরবী বিষয়ের আনুপাতিক অবস্থান যথাক্রমে ৮০/২০, ফাজিল ও কামিল শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অপরদিকে ডিগ্রী ও মাস্টার্স কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনামূলক জরিপ সুখকর নয়।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং আরবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধর্মী, নাস্তিক ও মাদরাসা শিক্ষাবিদ্বেষী কর্তৃপক্ষের নিত্যনতুন প্রঞ্জাপণ আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার অস্তিত্বকে হুমকীর মুখে ঠেলে দিয়েছে। মাদরাসার সনদধারীদের চাকরির দরজা প্রায় বন্ধ। মাদরাসা ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা পদ্ধতি চালু করায় সেখানে মাদরাসা ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি বন্ধ। অবিভাবকগণ হতাশ হয়ে মাদরাস বিমুখ হয়ে পড়ছেন। জঙ্গী তৎপরতার সাথে মাদরাসা শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টার কারণে মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অবিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সকলেই আজ সদা ভীত ও সন্ত্রস্ত। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রমবর্ধমান এ হৃাস মাদরাসা শিক্ষাকে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে !
বর্তমানে মানগত দিক থেকে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা আজ অনেকাংশে পরিপূর্ণ যেমন- শিশু শ্রেণি থেকে মাস্টার্স শ্রেণি পর্যন্ত মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় সনদ দেয়া হয়েছে। সিলেবাস কারিকুলামে সাধারণ শিক্ষার ন্যায় সামঞ্জস্যতা  বিধান করা হয়েছে। চাকরি ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সকল ক্ষেত্রে আবেদন করতে পারে। বিসিএস পরীক্ষা, মেডিকেল, কমিশন র‌্যাংক, ব্যাংক-বিমা সকল সেক্টরেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যেমন আজ মাদরাসা শিক্ষিতরা অংশগ্রহণ করতে পারে তেমনি কর্মরতও আছে। স্ব স্ব ক্ষেত্রেও তারা আজ প্রতিষ্ঠিত যেমন ব্যবসা-বানিজ্য, সাংবাদিকতা, আইন পেশা ইত্যাদি।
রাজনীতিতেও আজ তারা পিছিয়ে নেই। মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যন পদে অনেককেই দেখা যাচ্ছে। তবে প্রাপ্তি থেকে অপ্রাপ্তির পাল্লা অনেক বেশী ভারী, বলা যায় শতাংশ হারে এরা অনেকটা অধিকার বঞ্চিত। কোন কোন ক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণেরও শিকার। যেমন- সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা হাই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী সরবরাহে রিক্রুটিং সেন্টার বা ফিডার ইনস্টিটিউট হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেজিস্টার্ড স্কুল, এন জি ও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পক্ষান্তরে মাদরাসার দাখিল স্তরে ছাত্র-ছাত্রী সরবরাহে সরকারি কোন ইবতেদায়ী মাদরাসা নেই। স্বতন্ত্রভাবে যে সকল ইবতেদায়ী মাদরাসা রয়েছে তা আবার মৃত্যু প্রায়। অবকাঠামোগত দিক থেকে অধিকাংশ মাদরাসা আজো জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় অনেক কম। সিলেবাস-কারিকুলামের  বিন্যাসব্যবস্থা  বিভিন্নভাবে সমস্যাগ্রস্ত যেমন সাধারণ শিক্ষার তুলনায় মাদরাসার সিলেবাস অনেক বেশী, সিলেবাসের জেনারেল বিষয়গুলো মাদরাসা শিক্ষা উপযোগী নয়, আরবি বিষয় ও সাধারণ বিষয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে মাদরসা শিক্ষা আজ তার স্বকিয়তা হারাচ্ছে, সহ-শিক্ষার বিষবাস্প মাদরাসার পরিবেশকে ভারী করে তুলছে। মাদরাসার পোশাককে নাটক-সিনেমার খলনায়ক চরিত্রে প্রদর্শন করে মাদরাসা শিক্ষাকে সমাজে হেয় করা হচ্ছে। উন্নত শিক্ষক তৈরিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যতটুকু আছে তাদেরও বেতনের স্কেলগত কোন মূল্যায়ন নেই।
আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্রের কালো মেঘ ক্রমান্বেই ধেয়ে আসছে। ভবিষ্যতের কথা একমাত্র আল্লাহ তায়লাই জানেন। বান্দাকে তার প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, বিশ্লেষণী শক্তি দিয়ে আগামী দিনের করণীয় বিষয় নির্ধারণে দায়িত্ব দিয়েছে এবং কাল কিয়ামতে বান্দারা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার ভবিষ্যতে নিয়ে যে সকল ষড়যন্ত্র হতে পারে, যেমন: ক) নিউ স্কীম মাদরাসার ভাগ্যবরন ঃ ১৯১২ সনে প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাসিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী সরবরাহ নিশ্চিত করতে কোলকাতা সরকারি আলিয়া মাদরাসাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। একদিকে ওল্ড স্কীম মাদরাসা অপরদিকে নিউ স্কীম মাদরাসা। নিউ স্কীম মাদরাসা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হতো। উভয় শিক্ষার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য ছিল নিউ স্কীম মাদরাসার সিলেবাসে সাধারণ শিক্ষার কিছু বিষয় পড়ানো হতো যেমন বাংলা, অংক, ইংরেজী, সাধারণ বিজ্ঞান ইত্যাদি। যা ওল্ড স্কীম মাদরাসায় পড়ানো হতো না। ১৯৫৮ সনে নিউ স্কীম মাদরাসাকে সাধারণ শিক্ষার সাথে একীভূত করে দিয়ে এ শিক্ষাকে বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয় এবং ওল্ড স্কীম মাদরাসাকে সরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতার দায়িত্ব নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আশংকা হচ্ছে ক্কওমী  মাদরাসার একটি অংশকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়ে বর্তমান আলিয়া মাদরাসাকে সাধারণ শিক্ষার সাথে একীভূত করে দেয়া হলে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। তাদের বলিষ্ঠ যুক্তি হবে- একদিকে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাস-কারিকুলামের ৮০ ভাগ সাধারণ শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অপরদিকে কুরআন-হাদীস শিখার জন্য কওমী মাদরাসা রয়েছে এবং মান দেয়া হয়েছে। খ) জাতীয় অর্থের অপচয় ঃ সাধারণ শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষার মধ্যে প্রতিষ্ঠানগত মান এক হলেও শিক্ষার্থীদের সংখ্যাগত তুলনায় উভয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। যেমন একটি কামিল মাদরাসা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমান, একটি ফাজিল মাদরাসা একটি ডিগ্রী কলেজের সমমান, একটি আলিম মাদরাসা একটি কলেজের সমমান এবং একটি দাখিল মাদরাসা একটি হাইস্কুলের সমমান বহন করে। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনা করলে এ শিক্ষা খাতে সরকারি  ব্যয় যে অপচয় তা যে কোন মানুষকে ভাবিয়ে তুলবে এবং এ শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার সাথে একীভূত করার সরকারি একতরফা প্রচারনাকে স্বাগত জানাবে। আমি আবারও বলছি সরকারের এহনো প্রচারনার বিপক্ষে কথা বলার যেমন লোক থাকবে না তেমনি সুযোগও পাবে না। গ) নতুন করে আলিয়া মাদরাসা খোলার অনুমতি দেয়া হবে না।
আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার এহেন ক্রান্তিকালে এ শিক্ষার ২৪০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পরিষদ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, অবিভাবক, শুভাকাংখী সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশেষ করে এ শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও সূচনার প্রেক্ষাপট, এ শিক্ষার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলার পদ্বতি ও  উত্তরনে গৃহীত ঐতিহাসিক পদক্ষেপসমূহ নির্ধারণে এগিয়ে আসতে হবে। আজ থেকে আড়াইশত বছর পূর্বে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কুরআন-হাদীসের শিক্ষা দেয়া, ওহীর শিক্ষা ও দুনিয়ার শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় করে শিক্ষিত করে তোলা, দুনিয়াবী সকল কাজে সক্ষম করে তোলা ইত্যাদি। আজকের প্রেক্ষাপটে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষকদেরকে নির্ধারণ করতে হবে- ১. এ শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হবে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত শিখাতে  হবে, কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ আয়াতসমূহ ও মাসনুন দোয়াসমূহ মুখস্ত করাতে হবে, বাংলা-ইংরেজী-আরবী ব্যকরণ ভালোভাবে শিখাতে এবং ব্যকরণের আলোকে রিডিং পড়াতে হবে। কারণ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, মাদরাসায় পড়–য়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী কুরআন বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে পারেন না, আরবী লেখা বই-পুস্তক রিডিং পর্যন্ত পড়তে অক্ষম। ২. সামাজিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে। একটি মাদরাসা একটি সমাজের মাঝে দাড়িয়ে আছে সুতরাং তাকে কিছু সামাজিক দায়িত্ব নিতে হবে। যেমন ক) মাদরাসার চতুর্পার্শ্বের সকল আহালকে (অধিবাসী) কুরআন শিখানোর দায়িত্ব নিতে হবে। খ) ভাঙ্গা রাস্তা-ঘাট, সাঁকো মেরামত, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং বিভিন্ন মানুষের উপকারমূলক কাজ করতে হবে। গ) যে ব্যক্তি বা সংস্থা ভালো কাজের উদ্দোগ নিবে তাকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে যাবে এবং কোন খারাব কাজে সাহায্য বা সমর্থন করবে না। গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে সমাজের সামাজিক কাজে মাদরাসা শিক্ষিতদের অংশগ্রহণ প্রায় শূন্যের কোঠায়। এই দুরাবস্থা দূর করতে হবে। ৩. বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তঃপ্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবে। যেমন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, খেলাধুলায়, সাধারণ জ্ঞান, বক্তৃতা, দেয়ালিকা, মাদরাসার পরিবেশ ইত্যাদি।
আপনারা যারা আলিয়া মাদরসার শিক্ষক তারা কি বর্তমান অবস্থায় সন্তষ্ট না কি কিংকর্তব্য বিমূঢ় ! আপনারা কি মনে করেন আলিয়া মাদারাসা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য অর্জিত হয়ে গেছে ! মাদরাসার বর্তমান সিলেবাস-কারকুলাম, মাদরাসার পাঠ্য বই কি মাদরাসা শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্যেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল ! বিশেষ করে মাদরাসা সিলেবাসের সাধারণ বিষয়গুলো কারা লিখেন, কি লিখেন এ ব্যপারে আপনাদের কি কোন বক্তব্য নেই ! মাদরাসা শিক্ষার সাথে পাঠ্য-পুস্তকের অসামঞ্জস্যশীলতা, সহ-শিক্ষার বিষবাস্প আর কতদূর ছড়াঁবে। মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্বি না পেয়ে বরং হ্রাস পাওয়ার  পরিনতি কি হতে পারে ভেবেছেন ? মাদরাসা বিশেষজ্ঞদেরকে কোথাও যথাস্থান দেয়া হচ্ছেনা, এমনকি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রেও মূল্যায়ন হচ্ছে না ! আপনারা কি ভাবছেন না আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার বর্তমান ধারা ও গতি এভাবে এগিয়ে চললে আগামি প্রজন্মের জন্য তা কি  কুসমাস্তীর্ণ হবে না কি কন্টকাকীর্ণ হবে, সরকারি অর্থের অপব্যয় হচ্ছে মর্মে (ছাত্র-ছাত্রী নেই অথচ বেতন দেয়া হচ্ছে) বিভিন্ন জরীপ বিশ্লেষনের তথ্য প্রকাশের মোকাবিলা কিভাবে করবেন ! সম্মানীত শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আপনারা আছেন লক্ষ লক্ষ ভাই-বোন, সাথে আছে কোটি কোটি ইসলামপ্রিয় জনতা। সুতরাং আপনি আপনার (পেশার মধ্যে থেকে) কথা শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলুন । অন্যসব শিক্ষক নেতৃবৃন্দ তাদের চাকুরীর জন্য কত ত্যাগ করছে আর আপনি ! কোরআন-হাদীসের শিক্ষা রক্ষার জন্য এতটুকু করবেন না!  ইতিহাসের কাছে, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে কি জবাব দিবেন ? কোরআন-হাদীসের শিক্ষাকে নিভিয়ে দেয়ার উদ্যোগের বিরুদ্ধে কি ত্যাগ ছিল আপনার? আল্লাহর কাছে তার জবাবদিহিতা কি করবেন! জীবনে অনেক পেয়েছেন এবার কুরআন-হাদীস শিখার কেন্দ্র মাদরাসা শিক্ষা রক্ষায় আল্লাহর পথে সময়-সম্পদ ব্যয় করুন, ঝুঁকি নিন। মাদরাসার সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করুন এবং লিফলেট, বুকলেট পোষ্টার, সময়িকী, বুলেটিন ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীর সামনে তুলে ধরুন। পত্রিকায় সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, ফিচার, প্রবন্ধ, কলাম, চিঠি-পত্র লিখুন। সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে স্মারকলিপি প্রদান করুন। মাদরাসা শিক্ষাকে আপনারা যেভাবে দেখতে চান যেমন সিলেবাস, কারিকুলাম, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মাদরাসা সংশ্লিষ্ট ছাত্র, শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সযোগ সুবিধা সর্বোপরি জাতীয় জীবনে মাদরাসা শিক্ষার ফলাফল কি হবে তা তুলে ধরুন। আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠনগুলোর সাথে যোগযোগ করুন। ছাত্র নেতৃবৃন্দকে নিয়মিত তত্ত্বাবধান করুন পরামর্শ দিন, সাহস দিন, দায়িত্ব দিন।  শিক্ষক আন্দোলনকে পেশাভিত্তিক আন্দোলনে রূপ দিন।
আলিয়া মাদরাসার সুপ্রিয় ছাত্র বন্ধুরা তোমরা কি জান ! মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস তথা এ শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কি ? সূচনা ও ক্রমবিকাশ কিভাবে হয়েছে ?, যুগে যুগে এ শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন মহল কি কি ষড়যন্ত্র করেছে ? ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, প্রত্যাশা পূরণে  কি কি দাবী উত্থাপন করা হয়েছে ? এ বিষয়ে অগ্রজদের থেকে তধ্য নাও, তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মাদরাসা শিক্ষার বর্তমান সমস্য ও সম্ভাবনা চিহ্নিত কর। সমস্যার সমাধান ও সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ কর। আলিয়া মাদরাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কর্মস্থলকে দ্বীনের ভিত্তিতে গড়ে তুলুন যেমন- নিজে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করুন, সবাইকে নামজ পড়ার (হেকমতের সাথে) নসিহত করুন, নিজ দায়িত্ব পালনে শতভাগ সক্রিয় থাকুন, নিজেকে কর্মস্থলের সবার থেকে যোগ্য করে গড়ে তুলুন বিশেষ করে ইংরেজী বাংলা ও আরবী ভাষায় কথা বলা, লেখা ও পড়ার সক্ষমতা সৃষ্টি করুন , ভালো কাজে সবাইকে হাঁ বলুন , এবং খারাপ কাজে সবাইকে না বলুন, সবার উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন, আচার-ব্যবহারে ভদ্র ও মর্জিত হোন অবশেষে সকল কাজে প্রকাশ করুন আপনি আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষিত একজন মানুষ। সমাজে অনেক সময় দেখা যায় যোগ্যতার অভাবে, দায়িত্বহীনতার কারণে, ইংরেজী না জানার কারণে, সাধারণ জ্ঞান না থাকার কারণে, কর্মস্থলের বিধি-বিধান বিষয়ে অজ্ঞ থাকার কারণে কথায় কথায় খোটা দেয়া হয়,ব্যঙ্গ করা হয়, তুচ্ছ-তাচ্ছিল করা হয় মাদরাসার ছাত্র বলে ! অতএব আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনার প্রিয় শিক্ষা মাদরাসা শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করুন। তাহলে আলিয়া মাদরাসা আরো একধাপ এগিয়ে যাবে ইনশায়া’ল্লাহ। আপনি নিশ্চয় কোন মসজিদের ইমাম অথবা কমিটির সদস্য অথবা কোন মসজিদের মুসল্লী। আপনার মসজিদকে আদর্শ মসজিদে রূপ দিন। আপনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য  হবে- আপনার মসজিদকে মসজিদে নবুবীর আলোকে একটি দাওয়াতী মারকাজ হিসেবে তৈরী করা। মসজিদের সকল আহালকে (অধিবাসীকে) কোরআন পড়তে শিখান (সিলেবাসের আলোকে)। সবাইকে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়ে উদ্বুদ্ধ করুন, ইসলামের মৌলিক বিধান (অযু, গোসল, তায়াম্মুম, নামায, রোযার নিয়ম-কানুন) শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করুন। অনুরূপ ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান তথা তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাত বিষয়ে জ্ঞান শিক্ষা দিন।
মাদরাসা শিক্ষার ২৩৭ তম দিবসের ডাক : ১. সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে প্রত্যেকটি  মসজিদকে  প্রি- প্রাক মাদরাসা হিসেবে গড়ে তুলুন। ২. প্রত্যেক গ্রামে একটি করে ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করুন। ৩. দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল স্তরের মাদরাসায় সাধারণ শিক্ষা ধারার ছাত্রদের ভর্তি নিশ্চিত করতে এক বছরের একটি আরবী ভাষা কোর্স চালু করুন। ৪. মাদরাসা ছাত্রদেরকে সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিষয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা যাছাইয়ের সুযোগ এবং ভর্তি  হওয়ার  সুযোগ রাখুন। ৫. প্রত্যেক জিলা উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে সরকারি মাদরাসা এবং অনার্স লেবেলের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করুন। ৬. মাদরাসা ছাত্রদের বৃত্তি সংখ্যা এবং টাকার পরিমান বৃদ্বি করুন। ৭. মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা রক্ষায় এবং মাদরাসা শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্যেশ্য অর্জনে উপযোক্ত বই প্রনয়ণ করুন। এ ক্ষেত্রে পৃথক মাদরাসা টেক্সট বুক বোর্ড গঠন করুন। মাদরাসা শিক্ষার বই প্রণয়নে একমাত্র মাদরাসা শিক্ষিতদেরকেই সংশ্লিষ্ট করুন। ৮. মাদরাসা সংশ্লিষ্ট সকল অফিসে মাদরাসা শিক্ষিতদেরকে চাকুরী প্রদান করুন এবং ডিপুটেশন (পদায়ন) এর ক্ষেত্রেও মাদরাসা অরিয়েন্টেড ব্যক্তিদেরকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যেমন মাদরাসা বোর্ডের বিভিন্ন স্টাফ, কমিটি, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা শাখা, আরবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদায়ন করুন। ৯. মাদরাসা  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পাজামা-পাঞ্জাবী এবং আল্লাহর রাসুলের (স:) সুন্নত টুপি ও দাড়ির খোলস ব্যবহার করে নাটক সিনেমার খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মত এ ধরনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করুন। প্রতিবছরই মাদরাসা শিক্ষা দিবস ১ অক্টোবরের আগমন ও প্রস্থান ঘটে।  কেয়ামত পর্যন্ত এভাবেই চলবে। এ দিনকে নিয়ে কতজনে কত কথা বলবে, কত কথা লিখবে এবং কতইনা অনুভূতি প্রকাশ করবে। কিন্তু বাস্তবে কি হবে ! কথায় বলে ইব ঢ়ৎধপঃরপধষ বাস্তবমুখী হও। তারই সূত্র ধরে এবারের মাদরাসা শিক্ষা দিবসে আমার উপরোক্ত আহবান। তাই আসুন আমার মাদরাসাকে অর্থাৎ আমি যে মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কমিটির সদস্য উক্ত মাদরাসাটিকে শুধুমাত্র অন্য কোন মাদরাসার জন্য অনুকরণীয়-অনুসরণীয় নয় সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় অনসরণীয় হিসেবে গড়ে তুলি। আমি একজন ছাত্র হিসেবে মাদরাসায় লেখাপড়াকে চাকুরী বা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ না করে দ্বীনের খেদমত হিসেবে গ্রহণ করি। আমরা সমাজ কর্মীরা মাদরাসার ব্যানারে কুরআন-হাদীসের শিক্ষাকে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেই। মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই রোবার স্কাউট হয়ে নিয়মিত সামাজিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখি। সত্যকে সত্য বলি এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলি। ভালো কাজে এগিয়ে যাই-খারোব কাজ থেকে বিরত থাকি।  আর্থিকভাবে নিজেকে পরিস্কার রাখি। ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় ধৈর্য ধারণ করি কৌশলী হই এবং ইতিবাচক কাজ করতে থাকি। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে মাদরাসার সাথে সম্পৃক্ত করে মাদরাসাকে দ্বীনের কাজে নিয়োজিত রাখি। আমরা যারা আলিয়া মাদরাসার ছাত্র নেতা ও শিক্ষক নেতা তারা জবাবদিহিতার অনূভূতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করি। এটা নেতাগিরী নয় বা নিছক নেতৃত্ব নয় এটা দায়িত্ব বা আমানত। পরামর্শের ভিত্ততে চলুন। নেতৃত্বের দায়িত্ব হচ্ছে কাজ সম্পন্ন করা সুতরাং যাকে দিয়ে পারেন কাজ সম্পন্ন করুন। মনে রাখবেন একজন ভীতু, ও অযোগ্য কর্মী শুধু নিজেকে শেষ কওে দেয় কিন্তু একজন প্রঞ্জাহীন, সূদূরপ্রসারী ভাবনাহীন নেতা শুধু নিজেকে শেষ করেন না একটি জাতিকে শেষ করেন, একটি ইতিহাসকে দাফন করেন। আল্লাহ তায়লা আমাদের সহায় হোন। (সমাপ্ত)
# অধ্যাপক আবদুছ ছবুর মাতুব্বর, সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, সাবেক আহ্বায়ক, বাংলাদেশ মাদরাসা ছাত্র আন্দোলন পরিষদ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ