কাল-সচেতন কবি ফররুখ আহমদ
মুহম্মদ মতিউর রহমান : (গত সংখ্যার পর) এরপর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে প্রথমেই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন গড়ে ওঠে। ফররুখ আহমদ এসময় গদ্যে-পদ্যে অসংখ্য লেখা লিখে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। বাংলা ভাষার আন্দোলনে তিনি নিজে প্রত্যক্ষভাবে শরীক হন। ফলে রাজরোষে পতিত হয়ে তিনি এসময় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। এসময় তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে প্রবন্ধ লেখা ব্যতীত নামে-বেনামে অসংখ্য ব্যঙ্গকবিতা রচনা করেন। এসব ব্যঙ্গকবিতার মধ্যে একটি বিখ্যাত কবিতা ‘উর্দু’ বনাম বাংলা’। কবিতাটি এখানে উদ্ধৃত হলো :
দুই শো পঁচিশ মুদ্রা যে অবধি হয়েছে বেতন
বাংলাকে তালাক দিয়া উর্দুকেই করিয়াছি নিকা,
বাপান্ত শ্রমের ফলে উড়েছে আশার চামচিকা
উর্দু নীল আভিজাত্যে (জানে তা নিকট বন্ধুগণ)।
আত্রাফ রক্তের গন্ধে দেখি আজ কে করে বমন?
খাঁটি শরাফতি নিতে ধরিয়াছি যে অজানা বুলি
তার দাপে চমকাবে এক সাথে বেয়ারা ও কুলি
সঠিক পশ্চিমী ধাঁচে যে মুহূর্তে করিব তর্জন।
পূর্ণ মোগলাই ভাব তার সাথে দুপুরুষ পরে
বাবরের বংশ দাবী-জানি তা অবশ্য সুকঠিন
কিন্তু কোন্ লাভ বল হাল ছেড়ে দিলে এ প্রহরে)
আমার আবাদী গন্ধ নাকে পায় আজো অর্বাচীন।
পূর্বোক্ত তালাক সূত্রে শরাফতি করিব অর্জন;
নবাবী রক্তের ঝাঁজ আশা করি পাবে পুত্রগণ।।
বাংলা ভাষার পক্ষে তাঁর লেখা একটি অনবদ্য কবিতা :
যাদের বুকের রক্তে মাতৃভাষা পেয়েছে সম্মান,
সংগিনের মুখে যারা দাঁড়ায়েছে নিষ্কম্প, অম্লান,
মানে নাই কোন বাধা, মৃত্যুভয় মানে নাই যারা
তাদের স্মরণ চিহ্ন এ মিনার-কালের পাহারা।
এখানে দাঁড়াও এসে মনে করো তাদের সে দান
যাদের বুকের রক্তে মাতৃভাষা পেয়েছে সম্মান।
(মাতৃভাষা)
নতুন রাষ্ট্র যে আদর্শের ভিত্তিতে গঠিত হয়, শাসক শ্রেণী সে আদর্শের অনুসরণ না করে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, বৈষম্য, অসাধুতা ও গণবিরোধী নীতির দ্বারা দেশ পরিচালনা করেন। ফররুখ আহমদ এর বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় নানা ব্যঙ্গকবিতা রচনা করেন। এসময় রচিত তাঁর একটি বিখ্যাত ব্যঙ্গকবিতাঃ
তোমাকে দেখেছি আমি মুক্তকচ্ছ বক্তৃতার কালে
অকৃপণ বজ্র কণ্ঠে ফুটে ওঠে সংখ্যাহীন কথা।
তবু দেখি সেই বাণী ব’য়ে আনে বিষম ব্যর্থতা
তোমার সম্পর্কে বন্ধু বহু কথা হয় আবডালে;
তুমিও বুঝিতে সব একবার পিছনে তাকালে।
তোমার সময় কই? তুমি যেন বাসন্তী-কোকিল
পরের বাসার দিকে ছুঁড়ে ফেলে ব্যস্ততার ঢিল
নতুন বসন্ত পানে উড়ে যাও ঠিক গ্রীষ্মকালে।
আরো কিছু জানি আমি সে সংবাদ প্রকাশ্য বাজারে
ছড়াতে নইক রাজী তাতে ক্ষতি আমারো সমূহ,
তার চেয়ে এসো মোরা ক’ স্যাঙাত বসি একধারে
বক্তৃতার মঞ্চ হ’তে তুলে আনি বঞ্চনার ব্যূহ;
আমার সিংহের ভাগ-তোমাদের অংশ শৃগালের
আশা করি এ কথায় করিবে না আজ হেরফের।।
(বোঝাপড়া : অনুস্বার)
নতুন রাষ্ট্র গড়ার রূপরেখা কবি বর্ণনা করেন তাঁর সুবিখ্যাত ‘সিরাজাম মুনীরা’ কাব্যে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূলভিত্তি ছিল ইসলাম ও মুসলিম জাতীয়তাবাদ। উপমহাদেশের মুসলিম জনগণের জন্য স্বতন্ত্র স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘লাহোর প্রস্তাব’ গৃহীত হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দেন, তাঁরা নবগঠিত মুসলিম রাষ্ট্রকে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। ফররুখ আহমদ সে অঙ্গীকার বাস্তবায়নের রূপরেখা তাঁর এ কাব্যগ্রন্থে তুলে ধরেন। সমগ্র দুনিয়ায় যখন মানবজাতি অজ্ঞানতা, হতাশা, বঞ্চনা ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, তখন রাসূলুল্লাহ স. আবির্ভূত হয়ে ইসলামের ভিত্তিতে এক সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, কল্যাণময় সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করেন। ইসলামের চার খলিফা সে রাষ্ট্রের সীমা বৃদ্ধি করেন এবং সমগ্র বিশ্বে কল্যাণময় মানবিক আদর্শ ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটান। কবি সে মানবিক মহৎ আদর্শের ভিত্তিতে নবগঠিত রাষ্ট্রকে গড়ে তোলার জন্য তাঁর ‘সিরাজাম মুনীরা’ গ্রন্থের বিভিন্ন কবিতায় রূপরেখা তুলে ধরেছেন। যেমন-
পূর্বাচলের দিগন্ত নীলে সে জাগে শাহানশাহের মত
তার স্বাক্ষর বাতাসের আগে ওড়ে নীলাভ্রে অনবরত।
ঘুম ভাঙলো কি হে আলোর পাখী? মহানীলিমার ভ্রাম্যমাণ
রাত্রি-রুদ্ধ কণ্ঠ হ’তে কি ঝ’রবে এবার দিনের গান?
(সিরাজাম মুনীরা)।
মরু শর্বরী পাড়ি দিয়ে বহু রাত্রি দেখেছো আদম সূরাত
দেখেনি সে আর দরদী সাথীর ধ্যান গম্ভীর রওশন রাত,
যদিও আঁধার হেথা, মদীনার আকাশে হয়েছে তার প্রভাত;
যদিও আঁধার হেথা, বসুধার বক্ষে হয়েছে রশ্মিপাত।।
(আবুবকর সিদ্দিক)।
আজকে উমর-পন্থী পথীর দিকে দিকে প্রয়োজন
পিঠে বোঝা নিয়ে পাড়ি দেবে যারা প্রান্তর প্রাণ-পণ,
ঊষর রাতের অনাবাদী মাঠে ফলাবে ফসল যারা,
দিক-দিগন্তে তাদের খুঁজিয়া ফিরিছে সর্বহারা!
(উমর-দারাজ দিল)।
এভাবে ‘সিরাজাম মুনীরা’ কাব্যের বিভিন্ন কবিতায় রাসূল স. খোলাফায়ে রাশেদীন ও ইসলামের মহান ব্যক্তিদের জীবনচরিত বর্ণনা করে তাঁরা ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে যে মানবিক কল্যাণময় সুন্দর রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেভাবে নবগঠিত স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন কবি ফররুখ আহমদ। মূলত সমকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কবি স্বজাতির উত্থান কামনা করে, এক মহত্তর আদর্শের ভিত্তিতে উন্নত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। পঞ্চাশের দশকে নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সরকারের পতন, সামরিক শাসন ইত্যাদি অব্যবস্থার বিরুদ্ধে কবি অসংখ্য ব্যঙ্গকবিতা রচনা করেন। এসময় রচিত তাঁর ব্যঙ্গনাটক ‘রাজ-রাজরা’ সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
স্বাধীন পাকিস্তানে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন না হয়ে বরং মানুষের দুঃখ-কষ্ট, ভেদ-বৈষম্য ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। কবি এসময় মানুষের দুরবস্থা ও সামাজিক অবক্ষয় দূর করে মানবতার উত্থান কামনা করেন। ষাটের দশকে রচিত তাঁর মহাকাব্য ‘হাতেম তা’য়ী’ ও নাট্যকাব্য ‘নৌফেল ও হাতেম’ গ্রন্থে এ মানবিকতার জয়গান গেয়েছেন। ‘হাতেম তা’য়ী’ থেকে কিঞ্চিৎ উদ্ধৃতি-
মনে হয় বন্দী হয়ে আছি
ক্লেদ-পংকিল এক দুঃসহ বন্দীখানায়
(বাদগর্দ হাম্মামের মতই যা ভয়াবহ)
শান্তির চিহ্ন নাই যেখানে
শুধু মধ্যরাত্রে শোনা যায় শয়তানের অট্টহাসি
মানুষ বেঁচে আছে কিন্তু মুর্দার শামিল।
‘নৌফেল ও হাতেম’ কাব্যনাট্যে কবি মানবতার উন্মেষ কামনা করেছেন :
কাব্য নয়, গান নয়, শিল্প নয়, শুধু সে মানুষ
নিঃস্বার্থ, ত্যাগী ও কর্মী, সেবাব্রতী-পারে যে জাগাতে
সমস্ত ঘুমন্ত প্রাণ,-ঘুমঘোরে যখন সে বেহুঁশ
জ্বালাতে পারে যে আলো ঝড়-ক্ষুদ্ধ অন্ধকার রাতে;
কাব্য, গান, শিল্প ইত্যাদি সুকুমার বৃত্তি মানুষের জীবনকে সুন্দর ও শোভন করে তোলে। কিন্তু কবির কাছে মানবতার আদর্শই সর্বোচ্চে। সকল মানবিক বৃত্তি মানুষের জন্য। মানুষের মানবিক মর্যাদা ও উন্নত-মহত্তর গুণাবলির চর্চা ও বিকাশই সকল সুকুমার বৃত্তির মুল লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই কবি মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে তাঁর সমগ্র কাব্য-সাধনা নিয়োজিত করেন। পাকিস্তানী শাসকদের অগণতান্ত্রিক-স্বৈরাচারী শাসন, শোষণ-বঞ্চনা, অন্যায়-বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর জনগণের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া এবং নানা দুর্নীতি ও অব্যবস্থার ফলে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। এতে অসংখ্য লোক অনাহারে মৃত্যুবরণ করেন। কবি এ আশাভঙ্গ ও মর্মন্তুদ মৃত্যুর বর্ণনা দিয়ে তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন পূর্বে এক অনবদ্য সনেট লেখেন। তাঁর জীবনের এ সর্বশেষ কবিতায়ও কালিক অবস্থার সাথে এক চিরকালীন মানবিক দুর্দশার করুণ চিত্র রূপায়িত হয়েছে। মানবিক সংবেদনা ও আশাভঙ্গের মর্মন্তুদ অনুভূতির প্রকাশ এ কবিতাটি :
স্বপ্নের অধ্যায় শেষ। দুঃস্বপ্নের এ বন্দী শিবির
সাতকোটি মানুষের বধ্যভূমি। দেখ এ বাংলার
প্রতি গৃহে অপমৃত্যু ফেলে ছায়া তিক্ত হতাশার
দুর্ভিক্ষের বার্তা আসে। আসে মৃত্যু নিরন্ধ্র রাত্রির।
বাষট্টি হাজার গ্রাম উৎকণ্ঠিত, নিভৃত পল্লীর
প্রতি পথে ওঠে আজ হাহাকার তীব্র বুভুক্ষার
চোখে ভাসে চারদিকে অন্ধকার-কালো অন্ধকার।
ক্ষুধা, মৃত্যু ভাগ্য আজ স্তিমিত এ ভ্রান্ত জাতির।
এ মুহূর্তে কি উজ্জ্বল রাজধানী। নতুন শহর
অত্যুগ্র যৌবন-মদে মত্তা যেন নটিনী চঞ্চল,
কাটায় উল্লাসে তার জীবনের উদ্দাম প্রহর।
উপচিয়া পড়ে যায় পানপাত্র ফেনিল, উচ্ছল,
নির্লজ্জের রঙ্গমঞ্চে অকল্পিত বিলাসের ঘর,
দু’চোখে-ধাঁধানো রূপে; নগ্ন, মেকী ঐশ্বর্যে উজ্জ্বল।।
(১৯৭৪ : একটি আলেখ্য)
ফররুখ আহমদকে বিশেষভাবে একজন আদর্শনিষ্ঠ, ঐতিহ্য-সচেতন কবিরূপে আখ্যায়িত করা হয়। আদর্শনিষ্ঠার সাথে মানবতা, ঐতিহ্য-চেতনার সাথে আত্মমর্যাদাবোধের সুতীব্র প্রকাশ তাঁর কাব্যকর্মকে মহিমাজ্জ্বল করেছে। তাঁর আত্মমর্যাদাবোধের সাথে আত্মপ্রকাশ ও জাগরণের আকাঙক্ষা প্রবল হয়ে উঠেছে। এ জাগরণ শুধু ব্যক্তি-কেন্দ্রিক নয়, ব্যষ্ঠি ও সমগ্র মানবিক সত্তার জাগরণকে ঘিরে। সে সাথে তিনি একজন কাল-সচেতন কবি। তবে কালিক ভাবনা ও গন্ডির মধ্যে তিনি সীমাবদ্ধ ছিলেন না। কালিক ভাবনার সাথে ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পৃক্ত হয়ে তা চিরকালীন মানবিক সংবেদনায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ মানবিক সংবেদনার সাথে স্বজাতির কল্যাণ ও মানবতাবোধের মিশ্রণে কবি মহত্তম কাব্য রচনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তাই তাঁর বিভিন্ন কাব্যে প্রেম, প্রকৃতি, মানবিক আশা-আকাংক্ষা, দুঃখ-বেদনা, হতাশা-প্রত্যাশার বাঙময় চিত্র ফুটে উঠেছে। আলোচনার পরিসমাপ্তি ঘটাতে চাই প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, কবি ও সাহিত্য-সমালোচক ডক্টর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের একটি প্রণিধানযোগ্য উক্তি দিয়ে। তিনি তাঁর ‘আধুনিক বাংলা কবিতাঃ প্রাসঙ্গিকতা ও পরিপেক্ষিত’ শীর্ষক প্রবন্ধের শুরুতে বলেনঃ “কবিরও আছে দেশকালের সীমাবন্ধতা। প্রোথিতমূল তিনি সমকালে। তবু তারই মধ্যে তিনি সমাপ্ত নন। বর্তমানে দাঁড়িয়ে তিনি রচনা করেন অতীত ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ। তিনি প্রগতির সপক্ষে, মানুষের সপক্ষে। তিনি মূলত স্বাদেশিক কিন্তু ফলত বিশ্বনাগরিক। ” ফররুখ আহমদের ক্ষেত্রে উপরোক্ত উক্তির যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায়। ফররুখ আহমদ কালসচেতন জীবনশিল্পী। তিনি সমকালের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও অবস্থার প্রেক্ষিতে তাঁর সংবেদনশীল হৃদয়ের গভীরতম অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন অনবদ্য কাব্যশৈলিতে। কিন্তু সমকালে প্রোথিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কাব্যের ভাব-বিষয় ও আবেদন চিরায়ত। তাঁর অবস্থান সমকালে হলেও তিনি একাধারে অতীতচারী ও ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। তিনি একদিকে যেমন ঐতিহ্যাশ্রয়ী তেমনি প্রগতিশীল মানবিক চিন্তাধারার ধারক ও বাহক। স্বদেশপ্রেম তাঁর জীবনের অনুষঙ্গ কিন্তু স্বদেশের সীমারেখায় আবদ্ধ নন, তিনি বিশ্বনাগরিক, বিশ্বের সকল প্রান্তে তাঁর কল্পনার বিস্তার ঘটেছে। এটা তাঁর কাব্যের এক বিশ্বজনীন, চিরন্তন, মহৎ গুণ। ফররুখ আহমদের কাব্যভাষা তাঁর নিজস্ব। তাঁর কাব্যের ভাব-বিষয় মানবিক চেতনায় সমৃদ্ধ। শিল্প-সচেতন একজন আধুনিক কবি হিসাবে তাঁর কাব্যে কালিক আবহের সাথে চিরায়ত মানবিক সংবেদনার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটেছে। এজন্য তাঁর কাব্য এখনও পাঠক-মনকে উদ্বুদ্ধ-অনুপ্রাণিত করে। তাই কাল-সচেতন কবি হওয়া সত্ত্বেও তিনি কালজয়ী অমর প্রতিভায় ভাস্বর কবি। (সমাপ্ত)