শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কেসিসিতে ৩৮৭টি চার্জিং পয়েন্টে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অভিযান অব্যাহত

খুলনা অফিস : খুলনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ধর্মঘট শুরু হয়েছে। অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে বিভাগীয় শহর খুলনার যাত্রী সাধারণরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বাড়তি ভাড়া দিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে বেবি, টেম্পো, মাহেন্দ্র ও ইজিবাইকে। শান্তিধামের মোড়ে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আসা আব্দুস সালাম নামে এক যাত্রী বলেন, হঠাৎ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ হয়ে যাওয়া ইজিবাইকে বেশি ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। আর পায়ে চালিত রিকশা তো পাওয়াই যাচ্ছে না।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রিকশাচালকরা নগরীর সাত রাস্তার মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় তারা সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের বাড়ির সামনে বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করেন। এরপর জাতিসংঘ পার্ক হয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গিয়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল শেষ করেন।
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা শ্রমিক মালিক ঐক্য পরিষদের খুলনা মহানগর সহ-সভাপতি সেলিম শিকদার বলেন, রিকশা বন্ধে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বেধে দেওয়া সময় শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর)।
কেসিসির উদ্যোগে মহানগরীতে রিকশা ৩৮৭টি চার্জিং পয়েন্ট থেকে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে এমন খবর শুনে রোববার (১৩ অক্টোরব) রাতে দৌলতপুর মোল্লার মোড়ে রিকশা-ভ্যানচালক ইউনিয়ন অফিসে সভা করে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেই।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কেসিসির মেয়র, ডিসি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছে আমাদের দাবি বিষয় নিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছি।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে কেসিসিতে ৩৮৭টি চার্জিং পয়েন্টে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অভিযান : ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বেধে দেওয়া সময় শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। ইতোমধ্যেই কেসিসির উদ্যোগে মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার ৩৮৭টি চার্জিং পয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। এ সব চার্জিং পয়েন্ট থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সোমবার থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। কেসিসি এবং ওজোপাডিকো যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করছে।
কেসিসির সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ৩৮৭টি রিকশার ব্যাটারি চার্জিং পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এসব চার্জিং পয়েন্ট থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। ১৪ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২১, ২২, ২৩, ২৮, ৩০ ও ৩১নং ওয়ার্ডে ১৪৪টি রিকশার ব্যাটারি চার্জিং পয়েন্ট থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। যা চলবে আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত।’
কেসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মাসুম বিল্লাহ বলেন, সোমবার থেকে অবৈধ চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
কেসিসির সচিব মো. আজমুল হক বলেন, ‘১৫ অক্টোবর রিকশা থেকে ব্যাটারি অপসারণের সিদ্ধান্তে অটল কেসিসি। এর অংশ হিসেবে সোমবার থেকে অবৈধ রিকশার ব্যাটারি চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান শুরু হয়েছে। কেসিসি রিকশার মালিকদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে। কেসিসির খাতায় ১৭ হাজার লাইসেন্সধারী রিকশা। কিন্তু গত অর্থ বছরে (২০১৮-১৯) ৪ হাজার ২৯৯টি রিক্সার লাইসেন্স নবায়ন হয়।’
কেসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘১৫ অক্টোবর রিকশার ব্যাটারি অপসারণ কার্যক্রম চলবে। দেশের কোথাও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমোদন নেই। চালকরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে দ্রুত গতিতে রিকশা চালায়, যা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই। এ কারণে প্রতিনিয়তই ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই আছে।

খুলনা জেলা ডিবির ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা
খুলনার পুলিশ বারবার একই অপরাধে জড়াচ্ছে!
খুলনা অফিস : খুলনা জেলা গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন এএসআই আবু সাঈদ। বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত। ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এর আগেও চাঁদাবাজির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হন তিনি। ইনক্রিমেন্ট স্থগিত হয়, তিন বছরের জন্য চাকরিতে প্রমোশনও বন্ধ করেন কর্তৃপক্ষ। এতোকিছুর পরও চাকরিতে বহাল হয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়েছেন তিনি। কঠোর শাস্তি না হওয়ায় সাঈদের মতো এভাবে পুলিশের অনেক সদস্যই বার বার একই অপরাধ করছেন। কেউ কেউ পার পাচ্ছেন, আবার অনেকেই দফায় দফায় শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন।
এদিকে, সম্প্রতি ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইলে ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত এএসআই আবু সাঈদসহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই অভিযুক্তরা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আদায়কৃত চাঁদার ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ছিনিয়ে নেওয়া দু’টি মোবাইল ফোন ফেরতও দিয়েছে।
খুলনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-বি) মো. সজীব খান বলেন, ২০১৭ সালে চুকনগরে ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে চাঁদাবাজির ঘটনাটি তিনি তদন্ত করেছিলেন। তদন্তে জেলা গোয়েন্দা শাখার অভিযুক্ত ৫ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুশারিশ করা হয়। সুপারিশ অনুযায়ী বিভাগীয় মামলায় তাদের ৫ ও ৩ বছর করে ইনক্রিমেন্ট স্থগিত হয় এবং তিন বছরের জন্য চাকরিতে প্রমোশনও বন্ধ করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শাস্তি ভোগ করে পুনরায় যদি কেউ একই অপরাধ করে তাহলে তাকে আবারও শাস্তি পেতে হবে। তবে, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেন, ‘অপরাধী বার বার একই অপরাধ করতে থাকে, সতর্ক হয় না। ফলে তাকে খেসারত দিতে হয়’।
সূত্র জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকার আব্দুল্লাহ মোটরস নামক একটি মোটরসাইকেল শো-রুমের মালিক কামরুল ইসলাম লাভলু’র ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঢাকায় পুলিশ সদস্য দিপায়নকে সাথে নিয়ে আঠারোমাইল বাজারে অবস্থান করছিলেন। এ সময় জেলা ডিবি’র একটি টিম দু’জনকে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে গাড়িতে তুলে জিরো পয়েন্টে নিয়ে আসে। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে আব্দুল্লাহ আল মামুনের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তার বাবা লাভলু’র কাছে ফোন করে প্রথমে ২ লাখ টাকা নিয়ে যেতে বলা হয়। ব্যবসায়ী লাভলু তাৎক্ষণিক ১ লাখ টাকা নিয়ে গেলে ডিবি সদস্যরা বলে ছেলেকে ছাড়াতে হলে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। কিন্তু তিনি এতো টাকা দিতে রাজি না হলে দর কষাকষির এক পর্যায়ে ১০ লাখ টাকা না দিলে তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দু’টি পিস্তল ও ১০০ বোতল ফেনসিডিল দিয়ে মামলায় চালান দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অনেক চেষ্টা করে রাতেই তিনি পুলিশ সদস্যদের হাতে নগদ ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন। ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম লাভলু ৩০ সেপ্টেম্বর খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। ডিআইজি’র তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা মেলে। এমনকি অভিযুক্তদের নিজ কার্যালয়ে ডেকে অভিযোগকারীদের সামনেরই স্বীকারোক্তি নেন ডিআইজি। এরপরই ওইদিন রাতে উল্লিখিত ৭ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ৭ পুলিশ সদস্য হলেন ডিবি’র এসআই লুৎফর রহমান, এএসআই কেএম হাসানুজ্জামান, এএসআই শেখ সাইদুর রহমান, এএসআই গাজী সাজ্জাদুল ইসলাম এবং ৩জন কনস্টেবল হলেন-মো. কামরুজ্জামান বিশ্বাস, জামিউল হাসান ইমন ও রুবেল শেখ।
একই সঙ্গে এ ঘটনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মো. বদিউজ্জামানকে প্রধান করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ ও পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল জলিলকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
এদিকে, ৭ অক্টোবর ভোরে অভিযুক্ত পুলিশের এসআই লুৎফর রহমান ও এএসআই আবু সাঈদ চুকনগর গিয়ে আদায়কৃত চাঁদার ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তার পিতার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন।
অভিযোগ রয়েছে, এএসআই আবু সাঈদ এর আগেও ২০১৭ সালে ১৮ মাইলে ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত ছিলেন। এছাড়া তিনি এক সময় ডুমুরিয়া থানায় কর্মরত থাকাকালীন এলাকার প্রভাবশালীদের খোঁজ খবর জানতেন। সেই সুবাদে বিভিন্ন জনকে টার্গেট করে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায়ের মূল হোতার ভূমিকা পালন করেন সাঈদ।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, চুকনগরে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অর্থ আদায়ের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় গোয়েন্দা শাখার সাময়িক বরখাস্তকৃত ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে অভিযোগ প্রমাণ হলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, ওসি তোফায়েলের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, সম্প্রতি রূপসার সংগ্রাম হত্যা মামলার বিষয়ে কাজ করছেন তিনি। এ কারণে মেহেরপুরে যোগদান করেননি। এ কাজ শেষ হলেই তিনি চলে যাবেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ১০ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইল বাজারে একটি তিলের খাজা ফ্যাক্টরিতে অভিযানের নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল ফ্যাক্টরি মালিক আব্দুস সালাম গাজীকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে ৭৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-বি) সজীব খান তদন্তভার নিয়ে ১২ জুলাই দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ১৪ জুলাই এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সুপারের কাছে দাখিল করেন তিনি। প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সে আলোকে এসআই এইচ.এম শহিদুল ইসলাম, এএসআই আবু সাইদ, এএসআই শাহাজুল ইসলাম, এএসআই মিকাইল হোসেন এবং এএসআই কামাল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর আগে, তাদের ডিবি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
এদিকে ১১০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার খুলনা জিআরপি থানার এসআই মো. সেলিম হোসেন’র একদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামী সেলিম ও পলি বেগমকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত একদিনের রিমা- মঞ্জুর করেন। আসামী পক্ষের আইজীবী রিমান্ড নামঞ্জুরের দরখাস্ত করে শুনানি করেন। মহানগর হাকিম আমিরুল ইসলাম উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সেলিমের এক দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পলির রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বুধবার সকাল ৬টার দিকে ঢাকা থেকে খুলনায় আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেসে অভিযান চালিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম জিআরপি থানার এটিএসআই সেলিম হোসেন ও অপর আসামী দর্শনা রেলস্টেশন এলাকার পলি বেগমকে ১১০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় খুলনা সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলায় অভিযুক্ত পলি বেগমের স্বামী সুমন মোল্লাকে পলাতক আসামী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বীকারোক্তি শাহজাহানের মদ-বিয়ার এনে বিক্রি করতো
খুলনায় মাদকের গডফাদারের তালিকার শাহজাহান পলাতক
বিদেশী মদ-বিয়ার টাকা প্রাইভেটকারসহ দুইজন আটক
খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে বিদেশী মদ, বিয়ার ও মাদক বিক্রির ৪০ হাজার ২শ’ টাকা ও ব্যবহৃত প্রাইভেটকারসহ দুজনকে থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো-জিকো রায় (২৮) এবং গাড়ি চালক আওয়াল উদ্দীন (৩৮)। শনিবার দিবাগত রাতে খুলনা সদর ও লবণচরা থানা পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকা ও সাচিবুনিয়া এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করেন। এর মধ্যে আসামী জিকো রায় রোববার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। তিনি শাহজাহানের কাছ থেকে মদ ও বিয়ার এনে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতেন। মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলামের কাছে এ জবানবন্দী প্রদান করেন। এ ঘটনায় পৃথক থানায় মাদক বিক্রেতা শাহজাহানকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম বাহার বুলবুল জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার দিবাগত রাত ১টায় খুলনা থানাধীন নিরালা আবাসিক ১নং রোডস্থ হোল্ডিং নং-৯৭, নাজমা নীড়ে অভিযান চালিয়ে চার বোতল এম্পিরিয়াল, এক বোতল হুইস্কি, দুই বোতল তাসরিনা ভোদকা, এক বোতল অরেঞ্জ কিউরাকো, ২১ ক্যান বেলজিয়াম বিয়ার, ১২ ক্যান রয়েল ডাচ বিয়ার এবং বিক্রিত ৪০ হাজার ২শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই সময় আসামী জিকো রায়কে গ্রেফতার করা হয়। রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলাম এর আদালতে আসামী জিকো রায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। স্বীকারোক্তিতে বলেন, পলাতক আসামী শাহাজাহান হাওলাদারের কাছ থেকে এগুলো নিয়ে এসে বিক্রি করতেন। জিকো বটিয়াঘাটা থানাধীন দেবীতলা এলাকার অঞ্জণ রায়ের ছেলে।
অপরদিকে কেএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে লবণচরা থানা পুলিশের একটি দল সাচিবুনিয়া বিশ্বরোড মোড়স্থ আলোক ভবনের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একটি প্রাইভেটকারে (ঢাকা মেট্রো গ-২৯৮৯১৩) তল্লাশি চালিয়ে ৫ ক্যান বেলজিয়ান বিয়ার, ১ বোতল হুইস্কি ও ১ বোতল মদ উদ্ধার করে। উক্ত গাড়ির চালক আইউব উদ্দীন মুন্সীর ছেলে আউয়াল উদ্দীনকে লবণচরা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। তিনি লবণচরা থানাধীন সাচিবুনিয়া এলাকায় বসবাস করেন। একই এলাকায় এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীসহ পলাতক আসামী মৃত মজিদ হাওলাদারের ছেলে শাহজাহান হাওলাদারকে (৫৪) আসামী করে লবণচরা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।
লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত বায়োজিদ আকন জানান, আউয়াল উদ্দীনকে মদ ও বিয়ারসহ গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ওই সব মাদক বিক্রিতে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। তিনি শাহজাহানের কাছ থেকে ওই সব মাদক এনে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আসছিলেন।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, খুলনার মাদকের গডফাদারের তালিকায় অন্যতম একজন শাহজাহান। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদকের মামলা ছিলো। মাদকের গডফাদার শাহজাহানের বাসায় এর আগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি খুলনা জেলায় বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বিদেশি মদ, হুইস্কি ও বিয়ার সরবরাহ করতেন। একাধিকবার তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
জানা গেছে, লবণচরা থানাধীন সাচিবুনিয়া বাজারে মাদক স¤্রাট শাহজাহানের ‘সোনালী কটেজ’ নামে ৪ তলা বিল্ডিং রয়েছে। ওই বাড়িটি শাহজাহানের মেয়ে ‘সোনালী’র নামে ‘সোনালী কটেজ’ বিল্ডিংয়ে নাম দেওয়া হয়। ওই বিল্ডিংয়ের নিচে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেট রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, সাচিবুনিয়া স্কুল রোডে ঢুকে আমেরিকান ডলার নামক বাড়ির স্থানে ১০ কাঠা জায়গা নিয়ে মাদক স¤্রাট শাহজাহানের রয়েছে একটি বাগানবাড়ি। সেখানে প্রায় পুলিশ প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রীতিভোজ আয়োজন করেন। এ কারণে এলাকাবাসী শাহজাহানের অপকর্মের জন্য ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া কঠিন। আওয়ামী লীগ সরকারের নাম ভাঙিয়ে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহানের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপাতে দেখা গেছে। যা দলের ইমেজ নষ্ট করছে।
সূত্র মতে, ২০১৭ সালে ২৯ ডিসেম্বর র‌্যাব-৬ সন্ধ্যায় নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন পৃথক আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ২৬৩টি বিয়ার ক্যান ও ১৫৭ বোতল দেশি-বিদেশি মদসহ মূল চোরাকারবারী শাহজাহানসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেন। জব্দকৃত মদ ও বিয়ারের মূল্য আনুমানিক ১০ লাখ। শাহজাহানের সেকেন্ড ইন কমান্ড মনা ও মাদক বহনে ব্যবহৃত গাড়ির চালক আলমগীর ওই সময় পলাতক ছিলেন। পরের দিন ৩০ ডিসেম্বর র‌্যাব-৬ এর কার্যালয়ে প্রেস বিফিং এর মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে শাহজাহানের মাদকের একাধিক চালান ধরা পড়লেও তিনি সব সময় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এবার নিয়ে তিনি দু’বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। তৎকালীন র‌্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, খুলনার মাদক স¤্রাট শাহজাহান ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনকে ঘিরে অবৈধ বিদেশি মদ ব্যাপকভাবে বিক্রি করেছে এবং ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ বিদেশি অবৈধ মদ ও বিয়ার বিক্রির উদ্দেশে মজুদ করেছিলেন। এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তার নেতৃত্বে ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন মজিদ স্মরণি বটতলাস্থ মাদক স¤্রাট শাহজাহান এর সোনালী এন্টারপ্রাইজ গ্রিল ওয়ার্কশপ এর ভেতর থেকে এবং এম এ বারি সড়কের দারুস সালাম মহল্লার ২৮/৬ নম্বর বাসায় র‌্যাব-৬ এর একটি টিম অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় সোনালী এন্টারপ্রাইজ গ্রিল ওয়ার্কশপ ও দারুস সালাম মহল্লার পৃথক আস্তানায় অভিযানে মোট বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি বিয়ার ২৬৩ ক্যান ও দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের ১৫৭ বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে মাদক স¤্রাট শাহজাহানসহ চুয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো. আসাদুল বিশ্বাসের ছেলে মো. সাগর বিশ্বাস, নগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা পাকুন জয়ধর এর ছেলে সুশীল জয়ধর, দক্ষিণ বাগমারা এলাকার বাসিন্দা মো. নিজাম উদ্দিনের ছেলে মেহেদী হাসান, বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ সোনাখালী এলাকার বাসিন্দা মৃত মজিদ গাজীর ছেলে মো. রুস্তুম গাজী, পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকার বাসিন্দা শেখ জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে শেখ রাসেল কবির ও দারুস সালাম মহল্লা এলাকার বাসিন্দা বায়তুল ইসলামের স্ত্রী মোসা. পপি ইসলাম গ্রেফতার হয়। অবৈধ মদ ও বিয়ার আটক শাহজাহান ঢাকা ও মংলা পোর্ট থেকে তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারে করে চালান এনে মজুদ করতেন। শাহজাহানের সেকেন্ড ইন কমান্ড মনা ওরফে মনো নামে পরিচিত ও মাদক বহনের যানবাহন চালক আলমগীর হোসেন পলাতক ছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী শাহাজাহান হাওলাদারের স্ত্রী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মুন্নি আকতারকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় ওই বাড়ি থেকে বাংলাদেশের কেরু এন্ড কোম্পানি এবং স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নানা ব্রান্ডের ৪৫৫ বোতল মদ ও ৭৩৬ ক্যান বিয়ার এবং দু’টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা মাদকদ্রব্যের মূল্য ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তবে এ সময়ও শাহজাহানকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর সকাল ১১টায় নগরীর খুলনা ক্লাব সংলগ্ন পুলিশ লাইনের সামনের সড়ক থেকে ১৮ বোতল মদসহ তাকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। এছাড়া ২০১১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে ১৪৫ বোতল বিদেশি মদ ও ৭২ ক্যান বিয়ারসহ খানজাহান আলী (র.) সেতু এলাকা থেকে পুলিশ একটি প্রাইভেটকারসহ শাহজাহানের দু’জন সহযোগিকে গ্রেফতার করে। একই বছরের ২৭ মার্চ নগরীর ৩ নম্বর মির্জাপুরে শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মদ ও জাল নোট উদ্ধার করা হয়।। ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল পুলিশ নগরীর সিমেট্রি রোডের একটি আবাসিক ভবনে অভিযান চালিয়ে শাহজাহানের ২২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের প্রায় ৫শ’ বোতল দেশি-বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করে। নগরীর সিমেট্রি রোডে শাহজাহানের ভাড়া বাড়িতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ২৬৬ ক্যান বিয়ার, ২২১ বোতল দেশি-বিদেশি মদ এবং মদ বিক্রির ১২ হাজার ৮শ’ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। তবে পুলিশ সেবারও শাহজাহানকে ধরতে পারেনি। এমনকি এ মামলায় শাহজাহানকে আসামী পর্যন্ত করা হয়নি।
আবাসিক হোটেল সোহাগে ডিবির অভিযানে গ্রেফতার ম্যানেজারসহ ৭ জনকে কারাদ- : কেএমপি ডিবি’র অভিযানে মহানগরীর আবাসিক হোটেল সোহাগ থেকে অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকায় হোটেলের ম্যানেজারসহ ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদেরকে আদালতে সোপর্দ করলে ম্যানেজার কমল চক্রবর্তী (৫০)কে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- এবং বাকী ৬ জনকে ৪ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন।
সূত্র জানায়, খুলনা মহানগর ডিবি পুলিশের টিম রোববার বেলা সোয়া ১টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে খুলনা সদর থানাধীন বড় বাজারস্থ আবাসিক হোটেল সোহাগ থেকে ম্যানেজারসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে ৭১ ভৈরব স্ট্যান্ড রোড এলাকার মৃত কার্তিক চক্রবর্তীর ছেলে ম্যানেজার কমল চক্রবর্তী (৫০), অভয়নগর মশহাটি এলাকার মৃত আব্দুর রহিম সরদারের ছেলে মো. ইসমাইল সরদার (৪০), খালিশপুর মুজগুন্নি কুড়িভিটা এলাকার বাদশা সরদারের স্ত্রী মোছা. নিপা (২৫), মুজগুন্নী কাজিপাড়া, আমিরুল কাজীর বাড়ীর ভাড়াটিয়া জুয়েল শেখের স্ত্রী মোছা. লিপি বেগম (৩০), নড়াইল কালিয়া থানার উথালী গ্রামের বাচ্চু শেখের স্ত্রী মোছা. নাসরিন বেগম (২৮), রূপসা সিংহেরচর এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে ডালিম (৩০) ও লবণচরা বান্দাবাজার, লালু সর্দার এর বাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত মজিদ সর্দারের কন্যা রহিমা বেগম (৪৩)। গ্রেফতারকৃতদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালত, খুলনায় সোপর্দ করা হয়। এরপর শুনানি শেষে তাদের কারাদ-াদেশ দেওয়া হয়।

আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে নিষিদ্ধ এমএলএম কোম্পানি
খুলনায় প্রতারণার ফাঁদে আটকা কয়েক হাজার শিক্ষার্থী
খুলনা অফিস : ‘শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি পাওয়া যাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ওয়ার্ল্ড মিশন ২১-এ পণ্য কিনে সদস্য হওয়ার মাধ্যমে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।’-এ ধরনের প্রলোভনে খুলনায় নিষিদ্ধ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ওয়ার্ল্ড মিশন-২১’র প্রলোভনে ফাঁদে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
জানা যায়, নিজেদের টাকা ফিরে পেতে সদস্যরা এক সময় বাধ্য হয়ে পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানের সদস্য বানানোর জন্য। নি¤œমানের পণ্য তারা কয়েকগুন বেশি দামে ক্রয় করলে বা নগদ টাকায় সদস্য হলেও সেই টাকার কমিশন পায় ফাঁদে আটকা পড়া প্রথম সদস্য। প্রতিনিয়ত প্রতারণার জাল বিস্তৃত হওয়ায় ফুলে-ফেঁপে উঠছেন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নগরীর নিউমার্কেট এলাকার অ্যারোমা শো রুমের ৪র্থ তলায় দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়ার্ল্ড মিশন-২১।
নগরীর বৈকালী এলাকার ম্যানগ্রোভ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম জানান, ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকার পণ্য কিনে বা নগদ টাকা দিয়ে সদস্য হওয়ার পরই সবাই অনুভব করে তারা ফাঁদে পা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ১১ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হওয়ার পর কোনো কমিশন না পাওয়ায় ওই টাকা ফেরত চাইলে তাকে বলা হয় ১০ হাজার টাকা করে আরও ৪ জনকে সদস্য বানাতে হবে। নতুবা ওই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। অভিযোগ রয়েছে, টাকা নেওয়ার আগ পর্যন্ত ভালো ব্যবহার করলেও টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাদের চেহারা বদলে যায়। তখন ওই টাকার বিনিময়ে নি¤œমানের পণ্য নিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
জানা যায়, ওয়ার্ল্ড মিশন-২১’র সাথে পার্টনারশিপ ব্যবসা রয়েছে খালিদ ট্রেডিং’র। খালিদ ট্রেডিং’র মালিক (ডিলার) খালিদ হাসান আবার খুলনায় এমএলএম কোম্পানি ওয়ার্ল্ড মিশন-২১’র পরিচালক বা ডিস্ট্রিবিউটার। মূলত তাকে ঘিরেই চলে প্রতারণার এসব কারসাজি। গত কয়েকবছরে অর্থ-বিত্তে পাল্টে গেছে তার বিলাসী জীবন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ার্ল্ড মিশন-২১’র একই ভবনে পাশাপাশি কক্ষে খালিদ ট্রেডিং’র বিপণন কেন্দ্র। একজন মাত্র কর্মচারীর নিয়ন্ত্রণে এখানে সিলিংফ্যান, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় আসবাব, রাইস কুকার, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ইলিক্ট্রনিক পণ্য বিক্রি করা হয়। বিপণন কেন্দ্রের এক পাশে জঞ্জালের মধ্যে বিকল-ভাঙা কয়েকটি সিলিং ফ্যান।
অভিযোগ রয়েছে, যদিও পণ্যের গায়ে ওয়ার্ল্ড মিশন ২১ নামের স্টিকার লাগানো আছে। তবে তারা মূল উৎপাদনকারী নয়। ওয়ার্ল্ড মিশন ব্যান্ড নামে যে পণ্য বিক্রি করা হয় তা চীন থেকে এনে বাংলাদেশ ফিটিং করা হয়। তবে, প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ৫ হাজার টাকায় যে মোবাইল ফোন বিক্রি করছে বাজারে সেই মানের একটি চীনা মোবাইল ফোনের দাম কিছুতেই ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকার বেশি হবে না। আর সাড়ে ১৩ হাজার টাকায় থ্রি-জি স্মার্ট ফোন নামে যে ফোনটি বিক্রি করছে, সেই মানের সিম্ফনি মোবাইলের দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ হাজার টাকা।
দৌলতপুর বিএল কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. ইমরান হোসেন বলেন, এক বান্ধবীর মাধ্যমে তিনি ওয়ার্ল্ড মিশনে এসেছেন। ১০ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হওয়ার চুক্তি করে তিনি প্রথমে ৩ হাজার টাকা দেন। কিন্তু সদস্য হতে না চাইলে ওই টাকা ফেরত আনতে গেলে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এছাড়া তাকে নানা রকম ভয়-ভীতি দেখানো হয়। প্রশাসন, সংসদ সদস্য ও খুলনার কয়েকজন সাংবাদিকের ছবি দেখিয়ে তাকে বাড়াবাড়ি না করতে শাসানো হয়।
তবে প্রতিষ্ঠানের ডিস্ট্রিবিউটর খালিদ হাসান বলেন, এখানে নগদ টাকায় কাউকে সদস্য করা হয় না। কেউ টাকা জমা দিলে তা কোনো না কোনো পণ্যের বিপরীতে দেখানো হয়। পরবর্তীতে পুরো টাকা দিলে ওই পণ্য তাদেরকে দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগকারীদের তার কাছে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
অপরদিকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, এ ক্ষেত্রেও তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তাদেরকে প্রথমে বলা হয়েছে- কোন পণ্য কিনতে না চাইলেও নগদ টাকা দিয়ে সদস্য হওয়া যাবে। পরে টাকা চাইতে গেলে নানা টালবাহানা করা হয়।

সুন্দরী ও গেওয়াসহ বিভিন্ন গাছ নদীতে বিলীন
পশ্চিম সুন্দরবনের শিবসা নদীর ১৫ কিলোমিটার
এলাকা জুড়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ
খুলনা অফিস : পশ্চিম সুন্দরবনের শিবসা নদীর পাড়ে এই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীর প্রায় ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে ভাঙন। ভাঙনে ওই অংশের বড় বড় সুন্দরী, গেওয়াসহ বিভিন্ন গাছ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জেলে ও বন কর্মীরা জানিয়েছেন, গত একবছরে নদী ভেঙ্গে বনের প্রায় ১৫-২০ ফুট এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। তবে বনবিভাগ বলছে, সুন্দরবনে ভাঙনের এই দৃশ্য স্বাভাবিক। প্রাকৃতিকভাবে ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে এই বন তৈরি হয়েছে। তবে ভাঙনে বনের কতো অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে, সেই তথ্য নেই বনবিভাগের কাছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয় নিয়েও কোনো জরিপ চালায়নি বন সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
সুন্দরবন ঘুরে দেখা গেছে, নলিয়ান ফরেস্ট অফিস হয়ে শিবসা নদী দিয়ে সুন্দরবনে ভেতরে ১৫ কিলোমিটার প্রবেশের পর নদীর পূর্বপাড় থেকে ভাঙন শুরু। শিবসা নদীর পূর্বপাড়ে শেখেরটেক, আদাচাই টহল ফাঁড়ি ছাড়িয়ে গেছে এই ভাঙন। ভাঙনে নদীপারে বড় বড় গেওয়া ও সুন্দরী গাছ মাটিসহ নদীতে ডেবে যাচ্ছে। পরে জোয়ারের পানিতে নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে গাছ।
কয়েকটি স্থানে দেখা গেছে, জোয়ারের সময় গাছের গোড়া থেকে মাটি ধুয়ে যাচ্ছে। এতে গাছের শেকড় আলগা হয়ে যাচ্ছে। সহজেই গাছগুলো উপড়ে পড়ছে। পরবর্তীতে গাছ মারা যাচ্ছে। ভাঙনের কারণে বনের ভেতরে ছোট খাল এবং বড় নদীর দুই পাশে নতুন চর জাগছে। কিন্তু সেখানে ঘাসের আধিক্য বেশি। এসব স্থানে গাছ জন্মানো এবং বড় হতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ নদী ভাঙনে বড় গাছ কমলেও বড় গাছ তৈরি হচ্ছে না।
গত ৯ অক্টোবর থেকে মৎস্য আহরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই সময় সুন্দরবনে জেলেদের পরিমাণ বেশি ছিলো। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবসা নদীর পাড়ে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বন ভাঙছে। অতীতের চেয়ে এই ভাঙনের মাত্রা বেশি। গত দেড়-দুই বছরে নদী ভেঙ্গে বনের ১৫-২০ ফুট ভেতরে ঢুকে গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনের নিচেও মরজাট নদীতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী। তিনি বলেন, সুন্দরবনের পশ্চিমে অর্থাৎ নলিয়ান, খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে সুন্দরবনের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। লবণাক্ততা বাড়লে মাটির বন্ডিং কমে যায়। তখন জোয়ারের সময় সহজেই ভাঙন ধরে।
তিনি আরও জানান, উপকূলে বাঁধ দেওয়ায় নদী ভাঙনের মাটি অন্য কোথায় যেতে পারছে না। মাটি বা পলি নদীর ভেতরেই থাকছে। এতে নদীর তলদেশ উঁচু হচ্ছে। নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা যাচ্ছে। এর ফলে জোয়ারের সময় পানি সুন্দরবনের আরও বেশি ভেতরে প্রবেশ করছে। দীর্ঘ সময় সুন্দরবনের ভেতরে পানি থাকায় ভাঙন আরও বাড়ছে।
নলিয়ান ও শিবসা নদী এলাকা সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের আওতাধীন। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশির আল মামুন বলেন, সুন্দরবনের ভেতরে একপাশে নদী ভাঙবে, আবার অন্যপাশ গড়ে উঠবে-এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে ভাঙন নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। এজন্য এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। তবে একটি জরিপে দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে বনভূমি ১ শতাংশ বেড়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মইনুদ্দিন খান বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বনের প্রকৃতিই এমন। তারপরও ভাঙন বিষয়ে করণীয় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবো।

খুলনায় প্রশাসনের নাকের ডগায় সকাল
থেকে রাত অবধি চলে কোচিং-ব্যাচ
খুলনা অফিস : খুলনায় কোচিংয়ের বিরুদ্ধে এক প্রকার প্রশাসনের তেমন কোনো প্রভাব নেই। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নগরীর থ্রি ডক্টরস কোচিংয়ে অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন। তবে নগরীর মোড়ে মোড়ে সকাল থেকে রাত অবধি চলে কোচিং-ব্যাচ।
জানা গেছে, খুলনায় কোচিং-ব্যাচের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযানে নামে দুই বছর আগে। প্রশাসনের অভিযান আর কোচিং-ব্যাচ সিলগালার ভয়ে একত্রিত হয় কোচিং সেন্টার পরিচালকরা। প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে স্কুল সময়ে কোচিং চলবে না এমন শর্তে কোচিং সেন্টার পুনরায় চালু করা হয়। দিন দিন বাড়ছে এর পরিধি। সেই শর্ত ছাড়াই দিনে রাতে অবিরামভাবে চলছে কোচিং-ব্যাচ। কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।
সরেজমিন নগরীর মৌলভীপাড়া, বাইতিপাড়া, শামসুর রহমান রোড, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক, পিটিআই মোড়, দোলখোলা মোড়সহ একাধিক এলাকায় দিনে রাতে চলছে কোচিং-ব্যাচ। পরীক্ষা সামনে আসলেই বাড়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অভিনব প্রোগ্রামও। অভিভাবকরাও এমন অভিনব প্রোগ্রামে আকৃষ্ট হয়ে কোচিং-ব্যাচমুখি হয়। সব সময় কোচিংয়ের ভাব পরিলক্ষিত না হলেও সকাল, বিকেল এমনকি রাতে কোচিং-ব্যাচ ছুটির সময় বোঝা যায় কোচিং-ব্যাচের সরগরম অবস্থা।
মৌলভীপাড়া মোড়ে অবস্থিত কোচিংয়ের সামনে অপেক্ষারত সালমা পারভীন নামের এক অভিভাবক বলেন, মেয়েকে সন্ধ্যার শিফটে ব্যাচে দেওয়ায় অপেক্ষা করতে হয়। শিক্ষকদেরও এতো ব্যাচ যে শিক্ষার্থীদের সামাল দিতে রাতেও শিফট করতে হয়।
শামসুর রহমান রোডে অবস্থিত কোচিংয়ের সামনে অপেক্ষারত সুমাইয়া খাতুন বলেন, কোচিংয়ের জন্য বছর দুয়েক আগেও শিক্ষক, পরিচালকদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও আতঙ্কে থাকত। কিন্তু বর্তমানে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কোচিং উৎসবে পরিণত হয়েছে।
পিটিআই মোড়ে অবস্থিত কোচিংয়ের এক অভিভাবক আফিফা আক্তার বলেন, কোচিংয়ের জন্য আগে সকাল বিকেল সময় ছিল। কিন্তু এর চাহিদা বাড়ায় শিক্ষকরা রাতেও পড়ান।
খুলনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খোন্দকার রুহুল আমিন বলেন, কোচিং বাণিজ্য নিয়ে তাদের তেমন কিছু করার নেই। এছাড়া তাদের জানা মতে অধিকাংশ শিক্ষক নিয়ম মেনে কোচিং করায়। হরহামেশা কোচিং-ব্যাচ চলে এ ধরনের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। কোন শিক্ষক কখন কোথায় কোচিং-ব্যাচ করাচ্ছে তা দেখার মতো সময়ও তাদের নেই বলে জানান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ