শুদ্ধি অভিযান সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে -আকবর আলী
স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধি অভিযান চালানোর মাধ্যমে দেশের মানুষের মনে যে আশা জাগিয়েছেন, তিনি সেটাকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রূপান্তরিত করবেন। সেই সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমের দুষ্টদের দমন করে শিষ্টদের পালন করবেন। তবে বর্তমান শুদ্ধি অভিযান সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে কি না এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এই অভিযান সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান।
গতকাল শনিবার সরকারের বর্তমান শুদ্ধি অভিযান নিয়ে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি রাজধানী তেজগাঁও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে প্রতিযোগিতায় লালমাটিয়া মহিলা কলেজকে হারিয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া বিজয়ী হয়।
আকবর আলী খান বলেন, এই শুদ্ধি অভিযান কতোদিন চলবে, কতো বছরে সফল হবে, ছয় মাস নাকি ছয় বছর, নাকি ১০ বছর চলবে এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে শুদ্ধি অভিযানের আর কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। যতোক্ষণ পর্যন্ত সুশাসন নিশ্চিত না হবে ততোক্ষন পর্যন্ত দুর্নীতি, অরাজকতা, আইনের লঙ্ঘনসহ সমস্যা চলতেই থাকবে। আর এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকা-কে খুবই দুঃখজনক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, হত্যাকারীদের শুধু বহিষ্কার বা কারাগারে পাঠানো হলেই আমরা সন্তুষ্ট নই। দ্রুত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার আগ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই। সেইসঙ্গে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।
সম্প্রতি গণমাধ্যম নিয়ে যে সমস্ত আইন-কানুন করা হয়েছে তা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা উদ্বিগ্ন। আর এ উদ্বেগ দেখে বোঝা যায়, দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সরকারের উদার মনোভাব থাকতে হবে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, শুদ্ধি অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো সম্রাটদের গ্রেফতার করা হলেও ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যাংক, শেয়ারবাজার জালিয়াতির মাধ্যমে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন, তাদের গডফাদারদের দৃশ্যমান বিচার এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এখনো জানা যায়নি, কোন কোন দুর্নীতিবাজ সরকারি আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে প্রাসাদ বানিয়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করেছেন। সেকেন্ড হোম করেছেন। বিদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সরকারের উচিত গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এসব মহাদুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা তৈরি করে উপযুক্ত বিচারের লক্ষ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা।
প্রধানমন্ত্রীকে চলমান শুদ্ধি অভিযান পরিচালনায় ধন্যবাদ জানিয়ে কিরণ বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেই সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব।
আবরার হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু বুয়েটের ভিসির দায়িত্বহীনতা নয়, আমরা সরকারের কোনো মন্ত্রী বা প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতাকে তার জানাজায় অংশ নিতে বা শান্ত¡না দিতে পরিবারের কাছে যেতে দেখেনি। আগামী ২/৩ সপ্তাহের মধ্যেই আবরার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়ে দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে।