শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বিপাকে লক্ষাধিক জেলে পরিবার

খুলনা অফিস : ইলিশের প্রজনন বাড়াতে ৯ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত (২২ দিন) বন্ধ রয়েছে ইলিশ ধরা। সেই সাথে বন বিভাগ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সকল ধরনের মাছ ও কাঁকড়া আহরণের অনুমতিপত্র (পাস) সাময়িক বন্ধ রয়েছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে সুন্দরবন এলাকায় মাছ এবং কাঁকড়া আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়ায় বিপাকে পড়েছেন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল লক্ষাধিক জেলে পরিবার।
অন্যদিকে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬ হাজার ৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকা অভয়ারণ্য। বনের ৪৮ শতাংশ জায়গার নদী ও খাল থেকে জেলেরা সাধারণত মাছ, মধু ও কাঁকড়া আহরণ করেন। ফলে খুলনার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ, বাগেরহাটের মংলা, জয়মনি, শরণখোলাসহ উপকূলীয় জেলে পরিবারগুলো হতাশায় ভুগছে।
খুলনা মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তবে ইলিশ বন্ধ মওসুমে খুলনা জেলার ৩ উপজেলা, কুষ্টিয়া জেলার ৬টি এবং বাগেরহাট জেলার ৭টি উপজেলাসহ মোট ১৬টি উপজেলার ৮ হাজার ৫৬০ পরিবারের সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হবে। এ সুযোগের আওতায় মাত্র ৪ দশমিক ৭ শতাংশ জেলে ২২ দিনে পরিবার প্রতি মাত্র ২০ কেজি চাল পাবে। আর এই সুযোগের বাইরে থাকছে বাকী ৯৫ দশমিক ৩ শতাংশ জেলে। কিন্তু এই সময়ে মৎস্য আহরণ করতে পারছে না সকলে জেলে। সব মিলিয়ে ইলিশের সাথে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া আহরণের পাস বা পারমিট বন্ধ থাকায় জেলে পরিবারগুলোয় দুর্দশা নেমে এসেছে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন বনের ওপর নির্ভরশীল জেলেরা।
সাতক্ষীরার বুড়িগোয়ালিনী এলাকার কাঁকড়া ব্যবসায়ী মো. শহিদুল মোল্লা জানান, এখন বন্ধ ২২ দিন আবার জানুয়ারি থেকে দু’মাস বন্ধ থাকবে কাঁকড়া ধরা। এসময়ে জেলেরা খুব অসহায় হয়ে পড়ে।
কয়রা দক্ষিণ বেদকাশি এলাকার মো. আব্দুল মজিদ জানান, টিভি-রেডিওতে বলেছে, ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। কিন্তু অন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকবে তা বলেনি। আমরাতো সব গুছিয়ে সুন্দরবনে যাওয়ার সময় জানতে পারি কোনো পাস দিবে না। এখন আমরা কি করবো। পরিবারের মুখে কীভাবে খাবার দিব।
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক রণজিৎ কুমার পাল জানান, মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় নিবন্ধিত জেলেদেরকে বিভিন্ন সময়ে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়। আর এসময়ে বিভাগের ১৬ উপজেলার ৮ হাজার ৫৬০ জেলে পরিবারকে এ সুযোগ দেওয়া হয়।
বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আক্তারুজ্জামান জানান, সুন্দরবনের নদী-খালে ইলিশ প্রজনন বাড়াতে মা ইলিশ রক্ষায় মাছ-কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ করা হয়েছে। এ সময় সুন্দরবনে টহল জোরদার করা হবে। তবে সুন্দরবনে পর্যটকদের জন্য পাস দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশির-আল-মামুন জানান, সকল ধরনের যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় কোনো জেলেই সুন্দরবনে যেতে পারবে না। ফলে মাছ বা কাঁকড়া ধরার কোনো সুযোগ নেই। আর এ বিষয়ে প্রচার করা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা রয়েছে, ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে সকল ধরনের যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মাছ-কাঁকড়া আহরণের পাস বন্ধ রেখেছি। তবে, সকল জেলেকে প্রণোদনার আওতায় আনা এবং এইসব জেলেদেরকে নিয়ে আরও কি করা যায় সে সব বিষয়ে আলোচনা করে খুব শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসন সুপারিশ প্রেরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ