শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দক্ষিণাঞ্চল হতে উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটির বেহাল দশা

আব্দুস ছামাদ খান, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি : চলনবিলের বুকচিরে চলে যাওয়া দেশের দক্ষিণাঞ্চল হতে অল্প খরচে স্বল্প সময়ে উত্তারাঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি বেহাল অবস্থায় পতিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল-মান্নাননগর-বনপাড়া মহাসড়কের ২৫ কিলোমিটার অংশ নিয়ে ১৬ বছর ধরে বিপাকে রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছর ধরে নির্মাণ করার পর মহাসড়কটি গত ২০০৩ সালে চালু করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই তাড়াশের খালকুলা থেকে মান্নাননগর পর্যন্ত ৯ কিমি. অংশে প্রতিবছরই মহাসড়কের উপরিভাগে বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রণ উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকা খরচ করে মেরামত কাজ করে সওজ। কিছুদিন না যেতেই সামান্য রোদ-বৃষ্টি এবং যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে আবারও মহাসড়কের কঙ্কাল বের হয়ে আসে। এভাবেই চলছে প্রায় ১৬ বছর ধরে।
গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে খালকুলা থেকে মান্নাননগর পর্যন্ত মহাসড়কের খানাখন্দ ও বেহাল অবস্থা চোখে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, খালকুলা থেকে মান্নাননগর পর্যন্ত অংশে চায়নার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রণের নিচের স্তরে বালুর পরিবর্তে চলনবিলের কাদামাটি ব্যবহার করেছে। সামান্য রোদ-বৃষ্টি, যানবাহনের চাকার ঘর্ষণ ও চাপ কাদামাটির স্তর নিতে পারছে না। সেই চাপের কারণে প্রায়ই মহাসড়কের উপরিভাগ ফেটে যাচ্ছে বা খানাখন্দ সৃষ্টি হচ্ছে। তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ও সওজের লোকজনের যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছে। গত ১৬ বছরেও এসব অনিয়মের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, দায়ীদের চিহ্নিত করা বা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ওই মহাসড়কের দূর্নীতির কারণে দায়িত্বে অবহেলাকারীদের ক’জনকে চিহ্নিত করার পর তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিছুদিন না যেতেই তারা দায়মুক্তিও পান। দায়ীরা এখনও অধরা।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের নলকা থেকে হাটিকুমরুল মোড় হয়ে নাটোর জেলার বনপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিমি. দৈর্ঘ্যের এ মহাসড়কটি গত ২০০৩ সালে চালু করা হয়। সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল মোড় থেকে মান্নাননগর পর্যন্ত ২৫ কিমি. অংশ নির্মাণ করে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাকি মান্নানগর থেকে নাটোর জেলার কাছিকাটা টোলপ্লাজা হয়ে বনপাড়া পর্যন্ত ২৬ কিমি. অংশ নির্মাণ করে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার। ‘থার্ড রোড অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স প্রজেক্টের (আরআইএমপি-৩) মাধ্যমে নলকা-হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কটি নির্মাণ করে সওজ। নির্মাণের পর থেকে প্রায় ১৬ বছর ধরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের খালকুলা থেকে মান্নানগনর পর্যন্ত ৯ কিমি. অংশে প্রতিবছর খানাখন্দ দেখা দিলে সওজ মেরামত করে।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পিকে বলেন, নলকা-হাটিকুমরুল মোড়-বনপাড়া মহাসড়কে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ অংশে খালকুলা থেকে মান্নাননগর পর্যন্ত ৯ কিমি. মহাসড়ক নিয়ে বরাবরই সমস্যায় রয়েছে সওজ। প্রতিবছর ওইসব অংশে খানাখন্দ সৃষ্টি হলে সওজ মেরামত করছে। রোজা ও কোরবানির ঈদের আগেও সেখানে মেরামত কাজ করা হয়। জানা গেছে, চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যখন এ মহাসড়কটি নির্মাণ করে, তখন বিটুমিন ও পাথবের মিশ্রণের নিচের স্তরে বালুর পরিবর্তে চলনবিলের কাদামাটি ব্যবহার করে। তাদের সাশ্রয়ের কারণে প্রতিবছরই এ সমস্যা দেখা দেয়। আগামীতে ওই মহাসড়কের খালকুলা ও মান্নাননগরের কয়েকটি অংশে পাথর ও সিমেন্টের মিশ্রণ দিয়ে ‘কংক্রিট রিজিড পেভমেন্ট’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রাজশাহীর দপ্তর থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের টেন্ডার এরই মধ্যে আহ্বানও করা হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ